প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
মানবাধিকার : মানবাধিকারের অন্তর্নিহিত বিষয় হচ্ছে ‘মানুষ’ ও ‘অধিকার’। শব্দ দু’টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যমন্ডিত! মানুষের অস্তিত্ব রক্ষা, সহজাত ক্ষমতার সৃজনশীল বিকাশ এবং মর্যাদাপূর্ণ জীবন-যাপনের জন্য একান্তভাবে প্রয়োজনীয় কতিপয় অধিকার হচ্ছে মানবাধিকার। সহজভাবে ‘মানবাধিকার’ বলতে আমরা সেই সব অধিকারকে বুঝি যা নিয়ে মানুষ জন্মগ্রহণ করে এবং যা তাকে পরিপূর্ণ মানুষে বিকশিত করতে সাহায্য করে এবং যা হরণ করলে মানুষ আর মানুষ থাকে না। অধিকারগুলো মানুষের মূল্য ও মর্যাদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং মানুষরূপে জন্মলাভ করার কারণে তার জন্মগত অধিকার। আল্লাহ তা’আলা মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। আর এ শ্রেষ্ঠত্বের শিখরে উঠতে দরকার মানবাধিকার। এ অধিকার ছাড়া মানুষের পূর্ণতা আসে না, মানুষ পরিপূর্ণরূপে মানুষ হয়ে উঠতে পারে না। মানুষের জীবন-মৃত্যু যেমন মানুষ থেকে অবিচ্ছেদ্য তেমনি তার জন্য কতিপয় এ মৌলিক অধিকারও অপরিহার্য ও অবিচ্ছেদ্য। সমকালীন বিশ্বে দুর্বলদের উপর সবলদের নির্যাতন ও নিপীড়নের কারণে মানবাধিকার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। অথচ সপ্তম শতকের শুরুতেই বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে প্রবল, সর্বাধিক প্রভাবশালী, সর্বোচ্চ কার্যকর, সামগ্রিক কল্যাণকর মানবাধিকারের ধারণা নিয়ে এ ধরায় আবির্ভূত হয়েছিল ইসলাম। ইসলামে জীবন দর্শন যেমনি পরিপূর্ণ, মানবাধিকারের ধারণাও তেমনি ব্যাপক ও পূর্ণাঙ্গ। এর আলোকে পরবর্তী কয়েকটি দশক বিশ্বমানবতা প্রকৃত মুক্তি, অধিকার ও সম্মানে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছিল। পৃথিবীর সব দেশ, সব সমাজবিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের চিন্তায় মানবাধিকার যেখানে একটি নিছক আদর্শবাদী ধারণা ও প্রত্যয়মাত্র, সেখানে ইসলামে মানবাধিকার হলো বাস্তবতা। নিম্নে ইসলামে মানবাধিকারের দৃষ্টিভঙ্গি সংক্ষেপে আলোকপাত করা হবে।
ইসলামে মানবাধিকার : ইসলাম সব ধরনের মানবিক অধিকার ভোগ করাকে সকলের জন্য উম্মুক্ত করেছে। মানুষ কী কী অধিকার ভোগ করবে, অধিকারের সীমা কী হবে, অধিকার ভোগ করতে গিয়ে মানুষের আচরণ ও ভূমিকা কী হবে, অন্যের অধিকার বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য মানুষ কী কী পদক্ষেপ নেবে এ সব বিষয়ে ইসলাম সুস্পষ্ট, সুনির্দিষ্ট, সুবিন্যস্ত ও সুসামঞ্জস্যপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে। যেমন-
জীবনের নিরাপত্তা লাভের অধিকার : ইসলাম মানবজীবনকে একান্তই সম্মানের বস্তু হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং একটি মানুষের জীবন সংহারকে সমগ্র মানবগোষ্ঠী হত্যার সমতুল্য সাব্যস্ত করে জীবনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে, যার নজীর পৃথিবীর কোন ধর্মীয়, নৈতিক কিংবা আইন শাস্ত্রীয় সাহিত্যে কোথাও পাওয়া যায় না। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “নরহত্যা বা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ব্যতিরেকে কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানব গোষ্ঠীকে হত্যা করল, আর কেউ কারো প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানব গোষ্ঠীকে প্রাণে রক্ষা করল।” (আল কুরআন: সূরা আল মায়িদা-৩২) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেছেন, “আল্লাহ যে প্রাণ হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা কর না।” (আল কুরআন: সূরা বনী ইসরাঈল-৩৩) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেছেন, “এবং কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোন মুমিন ব্যক্তিকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, যেখানে সে স্থায়ী হবে এবং তার প্রতি আল্লাহর গযব ও অভিসম্পাত এবং তিনি তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন।”(আল কুরআন: সূরা আন নিসা-৯৩) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “হে মানবজাতি! নিশ্চয়ই তোমাদের জীবন, সম্পদ এবং সম্ভ্রম আজকের দিনের (বিদায় হজে¦র ভাষণের দিন) মতই পবিত্র।” (সহীহ আল বুখারী) বিদায় হজ্জ্বের ভাষণে রাসূল (সাঃ) জাহিলী যুগের সকল হত্যার প্রতিশোধ রহিত করে বললেন, “জাহিলী যুগের যাবতীয় হত্যা রহিত হল। প্রথমে যে হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ আমি রহিত করলাম তা হচ্ছে আমার বংশের রবীআ ইবনুল হারিস এর দুগ্ধপোষ্য শিশু হত্যার প্রতিশোধ, যাকে হুযাইল গোত্রের লোকেরা হত্যা করেছিল। আজ আমি তা ক্ষমা করে দিলাম।” (সহীহ আল বুখারী)
এমনকি ইসলামি রাষ্ট্রে বসবাসকারী কোন অমুসলিম নাগরিককে অন্যায়ভাবে হত্যা করলে হত্যাকারীর জন্য জান্নাত হারাম হয়ে যাবে। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন জিম্মিকে (অমুসলিম নাগরিক) হত্যা করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন।” (সুনানে নাসাঈ) তিনি আরো বলেছেন, “যে ব্যক্তি চুক্তিবদ্ধ কোন অমুসলিমকে হত্যা করল সে কখনো জান্নাতের সুগন্ধিও পাবে না।” (সহীহ আল বুখারী) এভাবে কুরআন ও সুন্নাহ্-তে মানুষ হত্যাকে এক জঘন্য পাপ ও আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং হত্যাকারীকে হুদুদ (হুদুদ হচ্ছে আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে বর্ণিত অপরাধের নির্ধারিত শাস্তি। এর বিপরীতে রয়েছে তাযির-এর শাস্তি যা ইসলামী আদালত অবস্থাভেদে নির্ধারণ করে থাকে) পর্যায়ের শাস্তি ‘কিসাস’ দণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। যেমন কুরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “হে বিশ্বাসিগণ! হত্যার ব্যাপারে তোমাদের ওপর কিসাস ফরয করা হয়েছে; স্বাধীনের পরিবর্তে স্বাধীন, দাসের পরিবর্তে দাস এবং নারীর পরিবর্তে নারী।” (আল কুরআন: সূরা আল বাকারা-১৭৮)
আত্মহত্যা নিষিদ্ধ : মানুষের নিজ জীবন আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে এক বড় নেয়ামত। আত্মহত্যা একটি অমানবিক ও কাপুরুষোচিত প্রক্রিয়া ও আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা। আত্মহত্যাকারীরা নিজেরাই নিজেদেরকে আল্লাহর দেয়া জীবনের মূল্যবান অধিকার থেকে বঞ্চিত করে থাকে। আল কুরআনে এ প্রবণতাকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বলা হয়েছে, “তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চই আল্লাহ তোমাদের ওপর দয়ালু।” (আল কুরআন: সূরা আন নিসা-২৯) রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন লোহার অস্ত্র দ্বরা আত্মহত্যা করে তাকে সে অস্ত্র দ্বারাই দোযখের মধ্যে শাস্তি দেয়া হবে।” (সহীহ আল বুখারী) তিনি আরো বলেছেন, “এক ব্যক্তি আহত হয়েছিল। সে আত্মহত্যা করলে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, আমার বান্দা বড় তাড়াহুড়া করল। সে নিজেই নিজেকে আত্মহত্যা করল আমি তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিলাম।” (সহীহ আল বুখারী) সুতরাং আত্মহত্যা না করে বরং নিজের অসহনীয় অবস্থার পতিবর্তনের জন্য আল্লাহর অনুগ্রহের প্রত্যাশী হতে আল কুরআনে মানুষকে অনুপ্রেরণা যোগানো হয়েছে। শরী’আ আইনের দৃষ্টিতে আত্মহত্যাকারী আল্লাহর সকল পার্থিব ও অপার্থিব অনুদান থেকে বঞ্চিত হয়।
নিরাপদে জন্মলাভের অধিকার : পৃথিবীর সাধারণ আইনে ভূমিষ্ট হওয়ার পর থেকে প্রাণের নিরাপত্তার অধিকার কার্যকর হয়। কিন্তু আল্লাহর আইনে মাতৃ উদরে গর্ভ সঞ্চার হওয়ার পর থেকেই প্রাণের মর্যাদার স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এ জন্য আগাম অভাব বা দরিদ্রতার ভয়ে মানবশিশু বা ভ্রƒণ হত্যা ইসলামে হারাম। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “তোমরা দরিদ্রতার ভয়ে তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না। তাদের এবং তোমাদের জীবিকা আমিই দিয়ে থাকি। নিশ্চই তাদেরকে হত্যা করা মারাত্মক অপরাধ।” (আল কুরআন: সূরা বনী ইসরাঈল-৩১) এ কারণে রাসূল (সাঃ) গামেদ গোত্রের এক নারীকে ব্যভিচারের সুস্পষ্ট স্বীকারোক্তি স্বত্ত্বেও হত্যার নির্দেশ প্রদান করেন নি। কেননা সে তার জবানবন্দীতে নিজেকে গর্ভবতী ব্যক্ত করে। অতঃপর সন্তান প্রসব ও দুগ্ধ পানের সময় সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পর তাকে মৃত্যুদন্ডের শাস্তি দেয়া হয়েছিল। তাৎক্ষণিকভাবে শাস্তি কার্যকর করলে সন্তানের প্রাণনাশের আশঙ্কা ছিল।
আমেরিকার সুপ্রীম কোর্ট রো বনাম ওয়েড এর বিখ্যাত মামলায় আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান বিষয়ক তথ্যের বরাতে রায় দিয়েছে যে, মাতৃগর্ভে ‘মানব অস্তিত্ব’ কে গর্ভে ধারণের তিন মাস পরে আইনত: স্বীকার করে নিতে হবে। (আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রীম কোর্টের প্রতিবেদন, অক্টোবর-১৯৭৪, পৃ.-১৪৭) যা আল কুরআন প্রায় ১৪৫০ বছর আগেই বলেছে। এমনি ভাবে মেয়ে শিশু হত্যাসহ সকল হত্যা ইসলামে হারাম করেছে। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “ যখন জীবন্ত প্রোথিত কন্যাকে প্রশ্ন করা হবে, কী অপরাধে তাকে হত্যা করা হয়েছিল?” (আল কুরআন: সূরা আত তাকবীর-৮ও ৯) নবজাতক বিশেষত মেয়ে শিশুদের রক্ষাবেক্ষণ সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যদি কোন পরিবারে একের পর এক মেয়ে শিশু জন্মলাভ করে এবং তাদের পিতা-মাতা তাদেরকে যত্ন ও ভালোবাসা দিয়ে লালন-পালন করেন, তাহলে সে শিশুরা তাদের পিতা-পিতাকে নরকের অগ্নি থেকে রক্ষা করবে।” (মুসনাদে আহমদ)
সম্পদে মালিকানার অধিকার : মহানবি (সাঃ) মানুষের মালিকানাধীন সম্পদকে সম্মানার্হ ঘোষণা করেছেন। মানুষ হালাল পথে সম্পদ উপার্জন করে এর মালিক হতে পারে এবং স্বাধীনভাবে এ সম্পদ ভোগ করতে পারে। এটি সম্পূর্ণ তার খলিফা হওয়ার মর্যাদার সাথে সংগতিপূর্ণ। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “পুরুষ যা উপার্জন করে তা তার প্রাপ্য আর নারী যা উপার্জন করে তা তার প্রাপ্য অংশ।” (আল কুরআন: সূরা আন নিসা-৩২) তবে মালিকানাধীন সম্পদে অধিকারের সাথে সাথে কর্তব্য যেমন যাকাত, দান-খয়রাত, মাতা-পিতা, স্ত্রী-পুত্র-সন্তান, ভাই-বোন ও আত্মীয়দের দায়িত্ব বহনের সাথে সাথে রাষ্ট্র কর্তৃক ধার্যকৃত স্থায়ী ও সাময়িক কর আদায় করতে হয়। এতে তার বাকী সম্পদ বিভিন্ন হস্তক্ষেপ থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,“মুমিনগণ, তোমরা অন্যায়ভাবে একে অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ কর না। তবে পরস্পরের সম্মতিতে ব্যবসায়িক পদ্ধতিতে লেনদেন করতে পার।” (আল কুরআন: সূরা আন নিসা-২৯)
ইমাম আবু ইউসুফ (রাঃ) তাঁর কিতাবুল খারাজ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, “রাষ্ট্র নায়ক (ইমাম) কোন প্রতিষ্ঠিত আইনগত অধিকার ছাড়া কোন ব্যক্তির মালিকানা থেকে তার কোন বস্তু নিতে পারে না।”(ইসলামী রিয়াসাত-১৩) বিদায় হজ্জ্বের ঐতিহাসিক ভাষণে রাসূলে কারীম (সাঃ) প্রাণের মর্যাদার সাথে সাথে ধন-সম্পদের মর্যাদার বিষয়ে বলেছেন, “হে মানুষ! তোমাদের জীবন, তোমাদের সম্পদ কেয়ামত পর্যন্ত পরস্পরের জন্য সম্মানিত যেমনি করে এই দিন ও এই মাস তোমাদের নিকট সম্মানিত।” (মহানবীর (সাঃ) জীবন চরিত,ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ,পৃ-৬১২) মালিকানা স্বত্ব রক্ষার অধিকারের গুরুত্ব নিম্নের হাদীস থেকে অনুমান করা যেতে পারে, “যে ব্যক্তি নিজের সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয় সে শহীদ।” (সহীহ মুসলিম)
মান-সম্মান, ইজ্জত-আবরু বা সম্ভ্রমের নিরাপত্তা লাভের অধিকার : প্রত্যেক মানুষের কাছে জীবন ও সম্পদের চেয়েও বেশি প্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ তার মান-সম্মান, ইজ্জত ও আবরুর। কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তি-সমষ্টি, রাষ্ট্র কিংবা রাষ্ট্রীয় কোন সংস্থার মানহানিকর হস্তক্ষেপ ও কর্মকাণ্ড থেকে রেহাই পাওয়া রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের মূল্যবান নাগরিক অধিকার। তাই, মানহানিকর আচরণের যত পন্থা হতে পারে, যেমন-অপপ্রচার, গুজব, নিন্দা, উপহাস, তিরস্কার, ভর্ৎসনা, গালাগাল, বিকৃত নামকরণ, মিথ্যা অপবাদ প্রভৃতি কর্মকাণ্ড ইসলামে নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “হে ইমানদারগণ! কোন পুরুষ যেন অপর কোন পুরুষকে উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে; কেননা যাকে উপহাস করা হয় উপহাসকারিণী অপেক্ষা সে উত্তম হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ কর না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেক না।” (আল কুরআন: সূরা আল হুজুরাত-১১) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেছেন, “হে মু’মিনগণ! তোমরা বহুবিধ ধারণা হতে বিরত থাকো; কারণ কোন কোন ধারণা পাপ এবং তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয় অনুসন্ধান করো না এবং একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা করো না।” (আল কুরআন: সূরা আল হুজুরাত-১২)
পারষ্পরিক বাক্য বিনিময়ে অশ্লীলভাষী হতে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “আল্লাহ কারো অত্যাচারিত হওয়া ব্যতীত অশ্লীল বাক্য প্রকাশ করা ভালোবাসেন না।” (আল কুরআন: সূরা আন নিসা-১৪৮) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেছেন, “(হে নবী) মু’মিন পুরুষদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করে।” (আল কুরআন: সূরা আন নূর-৩০) তিনি আরো বলেছেন, “(হে নবী) মু’মিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে।” (আল কুরআন: সূরা আন নূর-৩১) রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “কোন ব্যক্তি কোন মুসলমানকে অপমানিত, লাঞ্ছিত, অথবা সম্মানহানি হতে দেখেও যদি তার সাহায্য না করে তাহলে আল্লাহ এমন জায়গায় তার সাহায্য ত্যাগ করবেন যেখানে সে নিজে আল্লাহর সাহায্যপ্রার্থী হবে।” (আবু দাউদ)
রাসূল (সাঃ) মি’রাজ থেকে ফিরে এসে বললেন, “আমি এক শ্রেণির লোকদের নিকট দিয়ে যাচ্ছিলাম যাদের নখগুলো ছিল পিতলের নখের মত। যা দ্বারা তারা নিজেদের চেহারা ও বক্ষ খামচাচ্ছিল। আমি তাদের সম্পর্কে জিবরাঈল আ. কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, এরা সেইসব ব্যক্তি যারা দুনিয়াতে মানুষের মান-সম¥ান ও ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলতো।” (দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম-৪৫৪) রাসূল (সাঃ) আরো বলেছেন, “মুসলমানদের পৃষ্ঠদেশ সম্মানিত।”(আবু দাউদ) সুতরাং মানুষের মান-সম্মান ইজ্জত সর্বদা মর্যদাময় ও পবিত্র আমানত। তাইতো আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “ধ্বংস প্রত্যেক ঐ ব্যক্তির জন্য, যারা পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে।” (আল কুরআন: সূরা হুমাযাহ-১) রাসূল (সাঃ) বিদায় হজ্জ্বের ভাষণেও মানুষের মান-সাম্মান, ইজ্জত-আবরুর নিরাপত্তার কথা বলেছেন।
ব্যক্তিগত বাসস্থানের নিরাপত্তার অধিকার : ইসলামে নাগরিকদের পারিবারিক জীবনের পরিপূর্ণ নিরাপত্তার গ্যারান্টি দেয়া হয়েছে, আর ঘরের চার দেয়ালকে একটা সুরক্ষিত দূর্গের মর্যাদা দেয়া হয়েছে, যেখানে হস্তক্ষেপ করার অধিকার কারো নেই। কুরআনুল কারীমের নির্দেশ, “হে মু’মিনগণ! তোমরা নিজেদের ঘর ব্যতীত অন্যের ঘরে অনুমতি ব্যতীত ও সালাম না দিয়ে প্রবেশ কর না। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর ব্যবস্থা, হয়ত তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে। যদি তোমরা ঘরে কাউকে না পাও তাহলে তাতে প্রবেশ করবে না যতক্ষন তোমাদের প্রবেশের অনুমতি দেয়া না হয়। আর যদি তোমাদের বলা হয়, ফিরে যাও, তবে তোমরা ফিরে যাবে। এটাই তোমাদের জন্য উত্তম এবং তোমাদের সৎকর্ম সম্পর্কে আল্লাহ সবিশেষ অবহিত।” (আল কুরআন: সূরা আন নূর-২৭ ও ২৮)
ব্যক্তি ও বাক স্বাধীনতা লাভের অধিকার : ইসলাম মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতা ও বাক স্বাধীনতার সর্বোচ্চ বিকাশ সাধন করেছে। ইসলামি রাষ্ট্রে ব্যক্তি হিসেবে নাগরিকদের অবাধ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। এর আওতায় তারা আইনসঙ্গতভাবে জীবন-যাপন করবে। আইনের আওতায় ইচ্ছেমতো চলাফেরা করবে। কোনোভাবেই তাদের স্বাধীন জীবন-যাপন ও চলাফেরায় বাধা দেয়া যাবে না। সুনির্দিষ্ট অপরাধ ও প্রমাণিত অভিযোগ ছাড়া তাদেরকে বন্ধি করা যাবে না। কিন্তু বিশেষ কোন পরিস্থিতিতে, জাতীয় কোনো বিপর্যয়ে রাষ্ট্র যদি কারো বা সবার সর্বত্র চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাহলে তা অসঙ্গত হবে না। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “যে কেউ সৎ পথে চলে, নিশ্চই সে সৎপথে চলে তার নিজের জন্য। আর যে পথভ্রষ্ট হয়, তার ভ্রষ্টতা নিশ্চিতভাবে তারই ওপর এবং কেউ কারো বোঝা বহন করবে না।” (আল কুরআন: সূরা বনী ইসরাঈল-১৫) রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “ন্যাযবিচার ও সঙ্গত কারণ ছাড়া ইসলামে কোনো ব্যক্তিকে আটক রাখা যাবে না।” (মুয়াত্তা ইমাম মালিক)
তেমনিভাবে, সাধারণ নাগরিক যে কোন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে দীনী আবেগ ও অনুভূতি নিয়ে মত প্রকাশ করতে পারে। রাষ্ট্রপ্রধান, শাসন পদ্ধতি বা গৃহীত যে কোনো পদক্ষেপ সম্পর্কে সমালোচনা করতে পারে। কোনো নীতি বা পদক্ষেপ ইসলামের মূলনীতি বিরুদ্ধ হলে বা কোনো বিষয়ে জানা আবশ্যক হলে এ বিষয়ে নির্ভয়ে বিনা বাধায় স্বাধীন বক্তব্য পেশ করতে পারে। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যালিম শাসকের সামনে হক কথা বলাই হচ্ছে সর্বোত্তম জিহাদ।” (তিরমিযি) হযরত আবু বকর (রাঃ) খলিফার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথম ভাষণে বলেছিলেন, ‘জেনে রেখো! যে ব্যক্তি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল, আমি যতক্ষণ তার অধিকার আদায় করে দিতে না পারব, ততক্ষণ সে আমার কাছে সবচেয়ে শক্তিশালী। আর যে ব্যক্তি সবচেয়ে শক্তিশালী, তার কাছ থেকে যতক্ষণ অধিকার আদায় করতে না পারব, ততক্ষণ সে আমার কাছে সবচেয়ে দুর্বল।’
ইসলামের বাক স্বাধীনতার প্রসঙ্গে একটি প্রসিদ্ধ ঘটনার উদ্ধৃতি দেয়া যায়। হযরত উমর (রাঃ) এর খিলাফতকালে খলিফা জুমুআর খুতবা দিতে মিম্বরে দাঁড়ানোর সাথে সাথে এক মুসল্লি জানতে চাইলেন খলিফার জামা এত লম্বা হলো কীভাবে? কারণ বায়তুলমাল থেকে সকলকে যে কাপড় বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা দিয়ে এত লম্বা জামা বানানো যায় না। প্রশ্নকর্তা যখন জানলেন, খলীফার ছেলে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) এর ভাগে যে কাপড় পাওয়া গেছে সেটা খলীফাকে দেয়ার ফলেই তাঁর পক্ষে লম্বা জামা বানানো সম্ভব হয়েছে তখন প্রশ্নকর্তা সন্তুষ্ট হয়ে বললেন, হ্যাঁ এখন খুতবা শুরু করুন। আমরা শুনবো। খলীফা বললেন, যদি সন্তোষজনক জবাব না পেতে তাহলে কী করতে? তখন প্রশ্নকর্তা বললেন: তখন আমার এই তলোয়ারই এর সমাধান দিতো! এভাবে ইসলাম ব্যক্তি ও বাক স¦াধীনতা নিশ্চিত করেছে।
ধর্মীয় স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা লাভের অধিকার : ইসলাম আল্লাহ তা’আলা প্রদত্ত পরিপূর্ণ, সর্বজনীন ও একমাত্র গ্রহণীয় জীবনব্যবস্থা হওয়ার পরেও কেউ অন্য ধর্ম বা মত অনুসরণ করলে ইসলাম তাতেও বাধা প্রদান করে না। ইসলাম মুসলিমণ্ডঅমুসলিম নির্বিশেষে প্রতিটি ব্যক্তি ও ধর্মীয় সম্প্রদায়কে স্ব স্ব ধর্ম পালন, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সম্পাদনের নিমিত্ত উপাসনালয় নির্মাণ এবং ধর্মীয় আদর্শ প্রচারার্থে কার্যক্রম পরিচালনা করার স্বাধীনতা প্রদান করেছে। এমনকি অন্য ধর্মের উপাস্যদের গালি দেয়াও ইসলাম সমর্থন করে না। আল্লাহ তা’আলার বিভিন্ন ঘোষণা থেকে বিষয়টির স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায়। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “দীনের ব্যাপারে কোনো জোর প্রয়োগ নেই। মিথ্যা পথ হতে সত্য পথ আলাদা হয়ে গেছে।”(আল কুরআন: সূরা আল বাকারা-২৫৬) তিনি আরো বলেছেন, “আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা যাদেরকে উপাস্য হিসেবে গ্রহণ করেছে তোমরা তাদেরকে গালি দিও না। কেননা তাহলে তারা অজ্ঞতাবশত সীমালঙ্ঘন করে আল্লাহকেও গালি দেবে।” (আল কুরআন: সূরা আল আনআমণ্ড১০৮) তিনি আরো বলেছেন, “আপনার রব যদি ইচ্ছা করতেন, তাহলে পৃথিবীর সব লোকই ঈমান আনত। তাহলে কি আপনি মু’মিন হওয়ার জন্য মানুষের ওপর জোর প্রয়োগ করবেন?” (আল কুরআন: সূরা ইউনুস-১৯) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেছেন, “ (হে নবী! আপনি বলুন) তোমাদের জন্য তোমাদের দীন, আমার জন্য আমার দীন।” (আল কুরআন: সূরা কাফিরুন-৬)
এভাবে ইসলাম কারো ওপর বিশ্বাস চাপিয়ে না দেয়ার অনন্য নীতি অনুসরণ করে মানুষের বিবেক ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা সুরক্ষিত করে তাদের অধিকার অক্ষুণ্ন রাখার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। রাসূল (সাঃ) মদীনায় হিজরতের পর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে পরমত, পরধর্মের প্রতি সহনশীলতা, সহানুভূতি, সম্প্রীতি ও ঐক্যের ওপর গুরুত্ব দিয়ে ‘মদীনা সনদ’ প্রণয়ন করেন। সনদের অন্যতম ধারা হলো-
১. মদীনা সনদে স্বাক্ষরকারী ইহুদী, খ্রিষ্টান, পৌত্তলিক ও মুসলমান সম্প্রদায়সমূহ সমান নাগরিক অধিকার ভোগ করবে এবং তারা একটি জাতি গঠন করবে।
২. পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা বজায় থাকবে। মুসলমান ও অমুসলমান সম্প্রদায়ের লোকেরা বিনা দ্বিধায় নিজ নিজ ধর্ম পালন করতে পারবে। কেউ কারো ধর্মে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
৩. রক্তপাত, হত্যা, ব্যভিচার এবং অপরাপর অপরাধমূলক কার্যকলাপ একেবারেই নিষিদ্ধ করা হলো।
৪. দুর্বল ও অসহায়কে সর্বতোভাবে সাহায্য ও রক্ষা করতে হবে।
এক্ষেত্রে অমুসলিম নাগরিকদের অধিকার সম্পর্কে অত্যন্ত দৃঢ় ভাষায় রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “মনে রেখো! যদি কোন মুসলিম অমুসলিম নাগরিকের উপর নিপীড়ন চালায়, তার অধিকার খর্ব করে, তার উপর সাধ্যাতীত বোঝা (জিযিয়া বা প্রতিরক্ষা কর) চাপিয়ে দেয় অথবা তার কোন বস্তু জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয় তাহলে কিয়ামতের দিন আমি আল্লাহর আদালতে তার বিরুদ্ধে অমুসলিম নাগরিকের পক্ষ অবলম্বন করব।”(মিশকাত)
ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমর (রাঃ) বায়তুল মাকদাস অধিকারের পর সেখানকার খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বিগণকে উদ্দেশ্য করে ভাষণ দিয়েছিলেন, “ইসলামি সরকার তাদের জীবন, সম্পদ ও ধর্মীয় স্বাধীনতার নিরাপত্তা দিচ্ছে। তাদের গীর্জায় কেউ বসবাস করতে পারবেনা, তাদের ক্রস ভাঙ্গতে পারবে না বা তাদেরকে ধর্মত্যাগে বাধ্য করতে পারবে না।”(বিশ্ব শান্তি ও ইসলাম-২১৮) তাইতো তিব্বতের নির্বাসিত বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতা দালাইলামা যথার্থই বলেছেন, “Islam is indeed an all inclusive faith and is universal, Islam is an natural as you and I are ..... to get along with others, respects others, not create mess for other people or mess our own people. Islam is live and let live. Islam is easy to live and is simply peace.” (Kim Vo, Dalai Lama for Harmoû oF Religions, The Nwe Nation, 28th April, 2006, p.6.)
ন্যায় বিচার লাভের অধিকার : জনগণের মধ্যে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করাই ইসলামি বিচার ব্যবস্থার লক্ষ্য। মুহাম্মদ (সাঃ) প্রবর্তিত রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থায় ধর্ম, বর্ণ, রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাগত মর্যাদা নির্বিশেষে রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিক একটি নিরপেক্ষ, অবাধ ও স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার অধীনে স্বাভাবিক ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার লাভ করে। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “ তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচারকার্য পরিচালনা করবে তখন ন্যায়পরায়ণতার সাথে বিচার করবে। আল্লাহ তোমাদেরকে যে উপদেশ দেন তা কত উৎকৃষ্ট।” (আল কুরআন: সূরা আন নিসা-৫৮) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেছেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা ন্যায়পরায়ণতা ও সদাচারের নির্দেশ দেন।” (আল কুরআন: সূরা আন নাহল-৯০)
রাজনৈতিক, আন্তর্জাতিক, ব্যক্তিগত বা দলগত প্রভাব কিংবা ব্যক্তিগত স্বার্থ বা আবেগ যেমন আনুকূল্য, দয়া, ঘৃণা ও ক্ষোভ ইত্যাদির কারণে বিচারকের জন্য সুবিধামত আইনের ব্যাখ্যাদান ও রায় প্রদানের নূন্যতম সুযোগ ইসলামে নেই। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “হে মু’মিনগণ! তোমরা ন্যায় বিচারে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত থাকবে আল্লাহর সাক্ষী স্বরূপ, যদিও তা তোমাদের নিজেদের অথবা পিতামাতা এবং আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধে হয়, সে বিত্তবান হোক বা বিত্তহীন হোক আল্লাহ উভয়েরই ঘনিষ্ঠতর। সুতরাং তোমরা ন্যায়বিচার করতে প্রবৃত্তির অনুগামী হবে না।” (আল কুরআন: সূরা আন নিসা-১৩৫) এভাবে ইসলামি আইনের মধ্যে ছোট-বড়, ধনী-গরীব, শাসক-শাসিত এবং আপন-পরের মধ্যে কোন পার্থক্য ও তারতম্য নেই। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “তোমরা যখন কথা বলবে তখন ন্যায়ত কথা বলবে। যদি কোন আত্মীয় হয় তবুও আল্লাহর অঙ্গীকার পূর্ণ করবে।” (আল কুরআন: সূরা আল আনআমণ্ড১৫২) একদা বনু মাখযুম গোত্রর এক মহিলা চুরি করেছিল। এতে কুরাইশরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। তখন রাসূল (সাঃ) দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করেছেন, “হে মানবমন্ডলী! নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা পথভ্রষ্ট হয়ে গিয়েছে। এজন্য যে তাদের কোন সম্মানিত লোক চুরি করলে তখন তারা তাকে রেহাই দিয়ে দিত। আর যখন কোন দুর্বল লোক চুরি করতো তখন তারা তার ওপর শাস্তি প্রয়োগ করতো। আল্লাহর কসম! মুহাম্মদ (সাঃ) এর কন্যা ফাতিমাও যদি চুরি করে, তবে অবশ্যই মুহাম্মদ (সাঃ) তার হাত কাটার নির্দেশ দিবেন।” (দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম, পৃ-৫৭০) মৃত্যুর আগে রাসূল (সাঃ) একবার বলেন যে, ‘আমার নিকট কারো কিছু পাওনা থাকলে তা যেন সে চেয়ে নেয়, কারোর ওপর অবিচার করে থাকলে সে যেন তার প্রতিশোধ আমার ওপর নিয়ে নেয়।’ (আল কুরআনে রাষ্ট্র ও সরকার, পৃ-২৬৪)
ইসলামি খিলাফত কালে বিচার ব্যবস্থা শাসন-কর্তৃপক্ষের সম্পূর্ণ হস্তক্ষেপমুক্ত, স্বাধীন, অবাধ ও নিরপেক্ষ ছিল। এক মামলায় খলিফা ওমর (রাঃ) আদালতে উপস্থিত হলে সরকারি বিচারপতি যায়েদ ইবনে সাবিত (রাঃ) তাঁকে সম্মান দেখিয়ে বিচারকের আসন থেকে উঠে দাঁড়ান এবং খলিফাকে আসন গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন। এতে খলিফা বিচাপতি যায়েদ (রাঃ) কে বলেন, “আদালতে আসামির প্রতি এ সম্মান দেখানোই আপনার প্রথম অবিচার। এরপর যায়েদ (রাঃ) কে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে অপসারিত করা হয়।” (ইসলামে মানবাধিকার: নাগরিক ও রাজনৈতিক প্রসঙ্গ, পৃ-১৬৮) হযরত আলী (রাঃ) ও জনৈক ইহুদীর মধ্যে একটি বর্ম নিয়ে মামলায় বিচারপতি শুরাইহর ইহুদীর পক্ষে রায় দেন। কারণ আলী (রাঃ) নিজের বর্ম হওয়ার পরও স্বীয় পুত্র ও কর্মচারী ব্যতীত তাৎক্ষনিক নিরপেক্ষ কোন সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থিত করতে পারেন নি। ইহুদি এই বিচার প্রত্যক্ষ করে মুসলিম হয়ে গেলেন এবং বললেন, “নবী-রাসূলগণের প্রবর্তিত বিচার নীতি এই রূপই হয়ে থাকে।” এভাবে ইসলামি বিচার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ হস্তক্ষেপ মুক্ত, স্বাধীন, অবাধ, নিরপেক্ষ ও মানবতাবোধের উদার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উৎসারিত, যার নজীর পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই হবেও না। আল্লাহ তা’আলা রাসূল (সাঃ) এর জবানীতে বলেছেন, “এবং তোমাদের মাঝে ন্যায়পরায়নতা ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আমি আদিষ্ট হয়েছি।” (আল কুরআন: সূরা আশ শুরা-১৫) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেছেন, “কোন জনগোষ্ঠীর শত্রুতা যেন তোমাদেরকে সুবিচার না করতে উদ্বুদ্ধ না করে। তোমরা (সর্বাবস্থায়) ন্যায়বিচার অবশ্যই করবে।” (আল কুরআন: সূরা আল মায়িদা-৮) তাইতো মনীষী বার্ক বলেছেন, “The Muhammadan Lwa is binding upon all, from the crowned head to the meanest subject. It is a Lwa interwoven with a system of the wisest, the most lerned and most enlightened jurisprudence that has ever existed in the world.” (ইসলামে মানবাধিকার: নাগরিক ও রাজনৈতিক প্রসঙ্গ)
স্বাধীনভাবে পেশা নির্বাচন ও উপযুক্ত পারিশ্রমিক লাভের (শ্রমিকের) অধিকার : ইসলামে মানুষের শ্রমের মাধ্যমে উপার্জনের অধিকার পূর্ণ মাত্রায় স্বীকৃত। মানুষ তার যোগ্যতা অনুযায়ী স্বাধীনভাবে যে কোন বৈধ পন্থায় আয়-উপার্জন করতে পারবে। আর ইসলামি রাষ্ট্রের দায়িত্ব হলো নাগরিকরা যাতে যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ করতে পারে সে জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। এজন্য ফরয ইবাদতের পর দ্বিতীয় ফরয হালাল উপায়ে রুজি অন্বেষণ করা। কুরআনুল কারীমে এজন্য শ্রমকে জীবিকার প্রধান উপায় বলা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “এবং মানুষের প্রাপ্য শুধু তা, যার জন্য সে চেষ্টা ও শ্রম করেছে।
এই চেষ্টা ও শ্রম অবশ্যই গুরুত্ব পাবে এবং চেষ্টা ও শ্রমকারীকে অবশ্যই পূর্ণ মাত্রায় তার প্রতিফল দেয়া হবে।” (আল কুরআন: সূরা আন নাজম:৩৯-৪১) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেছেন, “এরপর যখন সালাত আদায় শেষ হবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়বে, আল্লাহর অনুগ্রহ উপার্জন করবে এবং আল্লাহর বেশি বেশি যিকর করবে, তাহলে তোমরা সফল হবে।” (আল কুরআন: সূরা জুমুআ-১০)
তেমনিভাবে ইসলামি রাষ্ট্রে শ্রমজীবী ও অন্যান্য পেশার কোন লোককে কেউ বিনা পারিশ্রমিকে খাটাতে পারবে না। তাদের শ্রমের ন্যায়সংগত পারিতোষিক অবশ্যই দিতে হবে। সামর্থের বাইরে তাদের উপর কাজের বোঝা চাপানো যাবে না, তাদের আর্থিক কিংবা দৈহিক কোন ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, সর্বোপরি তাদের সাথে সৌজন্যমূলক আচরণ করতে হবে। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “শ্রমিককে গায়ের ঘাম শুকাবার আগেই তার পারিশ্রমিক দিয়ে দাও।” (ইবনে মাজা) রাসূল (সাঃ) অপর এক হাদীসে বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অভিযোগ উথ্থাপন করবেন। তন্মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তি হচ্ছে : যে ব্যক্তি কাউকে মজুর হিসেবে খাটিয়ে ও তার দ্বারা পূর্ণ কাজ আদায় করা সত্ত্বেও শ্রমিকের মজুরী দেয় না।’ (দৈনন্দিন জীবনে ইসলাম, পৃ-৪৯৯) রাসূল (সাঃ) আরো বলেছেন, “শ্রমিকের পারিশ্রমিক ও ঋণ পরিশোধ নিয়ে ধনী ব্যক্তিদের তালবাহানা করা যুলুম।” (সহীহ আল বুখারী) সাথে সাথে ইসলাম শ্রমিকের উপরও এই দায়িত্ব অর্পণ করেছে যে, সে যেন চুক্তি অনুযায়ী যথাযথভাবে কর্ম সম্পাদন করে। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “তোমরা প্রতিশ্রুতি পালন করবে, প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে কৈপিয়ত তলব করা হবে।” (আল কুরআন: সূরা বনী ইসরাঈল-৩৪) রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “আর শ্রমজীবী ব্যক্তি তার মনিবের সম্পদের দায়িত্বশীল এবং সে এ মালের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।” (সহীহ আল বুখারী)
নারী ও শিশু অধিকার : ইসলাম নারীকে পরিপূর্ণ মানবিক অধিকার ও মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। নারীকে প্রথমত কন্যারূপে, দ্বিতীয়ত বধুরূপে, তৃতীয়ত মা-রূপে এবং চতুর্থত সমাজ-সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ সদস্যারূপে সমান মর্যাদা ও অধিকারে অধিষ্ঠিত করেছে। ইসলামই প্রথম রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতি, ইজ্জত- আবরুর হেফাজত এবং শিক্ষা ও সামরিক ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা ও অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে। নারীকে শিক্ষিত করা, আর্থিক দিক থেকে স্বাবলম্বী করা, অর্থ-সম্পদের মালিকানা দেয়া এসবই ইসলামের অবদান। যে সমাজ ও পৃথিবী কন্যাকে জীবন্ত কবর দিত, আত্মাহীন ভাবতো, কন্যা জন্ম গ্রহণকে পাপ মনে করত, সর্প ও নরকের চেয়ে খারাপ মনে করত সে পৃথিবীর মানুষ গুলোকে ইসলাম শিখালো আল্লাহর জান্নাত তোমার মায়ের পদতলে।
আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “ আমি মানুষকে তার পিতামাতার প্রতি সদয় ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছি তার মা তাকে গর্ভে ধারণ করে কষ্টের সাথে এবং প্রসব করে কষ্টের সাথে।” (আল কুরআন: সূরা আহকাফ-১৫) তিনি আরো বলেছেন, “ নারীদের তেমনি ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে, যেমন আছে তাদের উপর পুরুষদের।” (আল কুরআন: সূরা আল বাকারা-২২৮) রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “ যে ব্যক্তি দু’টি কন্যা বয়প্রাপ্ত হওয়া পর্যন্ত লালন-পালনের দায়িত্ব পালন করবে, আমি ও সেই ব্যক্তি কিয়ামতের দিন এইভাবে একত্রে থাকব। এই বলে নবীজী (সাঃ) নিজের আঙ্গুলগুলো মিলালেন।” (সহীহ মুসলিম) তেমনিভাবে শিশুর অধিকার আদায়ের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে ইসলাম। শিশু একান্তভাবে যাদের উপর নির্ভর করে সেই পিতা-মাতার প্রতি বিশেষ কিছু দায়িত্ব প্রদান করেছে। বস্তুত ইসলাম শিশুকে শুধু শিশু হিসেবে কল্পনা করে না বরং ভাবে এই শিশু আগামী দিনের নেতা, কর্মী, শিক্ষক, যোদ্ধা, সমাজসেবক ও একনিষ্ঠ মু’মিন। তাকে সেভাবে গড়ে তোলা বাবা-মায়ের দায়িত্ব। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “পিতার পক্ষে তার পুত্রকে আদব-কায়দা শিক্ষা দেয়ার চেয়ে উত্তম আর কোন দান হয় না।” (সুনানে তিরমিযি)
দুঃস্থ-অসহায় ও প্রতিবন্ধিদের অধিকার : ইসলাম দুঃস্থ-অসহায় ও প্রতিবন্ধিদের ক্ষেত্রে অনেক মানবিক। ইসলামে আহ্বানই মানবতা রক্ষার। ইসলাম দুঃস্থ, অসহায় ও প্রতিবন্ধিদের জন্য সাধারণ মানুষের চেয়ে অধিক মানবিক ও মৌলিক অধিকার প্রদান করেছে। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “এবং আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম, দরিদ্র, সর্ম্পকীয় প্রতিবেশি, সর্ম্পকহীন প্রতিবেশী,পাশর্^বর্তী সহচর ও পথিক এবং তোমাদের দক্ষিণ হাত যাদের অধিকারী তাদের সাথেও সদ্ব্যবহার কর।” (আল কুরআন: সূরা আন নিসা-৩৬) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেছেন, “ যদি আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি গভীর ভালবাসা থাকে তাহলে যারা দুর্বল, যারা অসুস্থ এবং যারা আর্থিকভাবে সাহায্য করতে অসমর্থ তাদের কোন অপরাধ হবে না।” (আল কুরআন: সূরা তাওবা-৯১) রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “ বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সাহায্যে রত থাকে, আল্লাহও ততক্ষণ তাঁর বান্দার সাহায্যে রত থাকেন।” (সহীহ আল বুখারী)
রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ গ্রহণের অধিকার : মানুষ আল্লাহর খলিফা হিসেবে প্রত্যেক নাগরিক রাজনৈতিক কার্যক্রমে স্বাধীনভাবে অংশ গ্রহণের অধিকার রাখে।
আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “আর তাদের যাবতীয় কার্যকলাপ পারস্পরিক পরামর্শের ভিত্তিতে চলবে।” (আল কুরআন: সূরা আশ শুরা-৩৮) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেছেন, “হে নবী! কাজে কর্মে তাদের (মুসলমানদের) সাথে পরামর্শ কর।” (আল কুরআন: সূরা আলে ইমরান-১৫৯) এভাবে সুষ্ঠু সমাজ ও শান্তিপূর্ণ রাষ্ট্রের জন্য রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা আল্লাহ প্রদত্ত অধিকার। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যারা ইমান এনেছে এবং তদানুযায়ী সৎ কাজ করেছে তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তাদেরকে তিনি পৃথিবীর কর্তৃত্ব দান করবেন, যে ভাবে তিনি তোমাদের পূর্বকার লোকদেরকে দান করেছিলেন।” (আল কুরআন: সূরা আন নূর-৫৫)
অমুসলিম নাগরিকদের অধিকার : ইসলামি রাষ্ট্রে মুসলিম নাগরিকের ন্যায় একজন অমুসলিম নাগরিকও সমান অধিকার লাভ করবে, তাদের জীবন, সম্পদ সম্ভ্রম, অর্থনৈতিক, পারিবারিক, সামাজিক, ধর্মীয় সকল ক্ষেত্রে তারা সমান নাগরিক অধিকার লাভ করবে। তাদের জান-মাল ইজ্জত আবরুর হিফাজত করা রাষ্ট্র ও মুসলমানের উপর ফরয। রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “ যে নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয়া হয়েছে সে নাগরিকের রক্তের বদলা নেয়ার দায়িত্বও আমার।” (ইসলামে মানবাধিকার) হযরত আলী (রাঃ) বলেছেন, “আমাদের অধীনে অমুসলিম নাগরিকদের রক্ত আমাদের রক্তের মতোই এবং তাদের রক্তপণও আমাদের রক্তপণেরই অনুরূপ।” আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “দীনের ব্যাপারে কোনো জোর প্রয়োগ নেই। মিথ্যা পথ হতে সত্য পথ আলাদা হয়ে গেছে।”(আল কুরআন: সূরা আল বাকারা-২৫৬) রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন যিম্মিকে (অমুসলিম নাগরিক) হত্যা করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দিবেন।” (সুনানে নাসাঈ)
বস্তুত, ইসলাম সপ্তম শতাব্দীর শুরুতে মানুষের যে অধিকার ও মর্যাদার ব্যবস্থা সুসম্পন্ন করেছে, তা অনুপম ও অতুলনীয়। আল্লাহ তা’আলা ইসলামকে জীবন-ব্যবস্থা হিসেবে এমনভাবে পেশ করেছেন যে, মানবাধিকারকে ইসলামের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে জুড়ে দিয়েছেন। মুসলিমগণ ইসলামি নীতিমালা অনুসরণ করতে গিয়ে তাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আন্তর্জাতিকসহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে এসব অধিকারকে প্রতিপালন করে থাকেন। ইসলামি শরী’আ আইনে এসব অধিকারের প্রতিপালন অবশ্য কর্তব্য (ফরয) এবং এগুলো লঙ্ঘন পাপ ও দণ্ডার্হ হিসেবে গণ্য। আল কুরআনে এসব অধিকারকে সৃষ্টিকর্তার সীমা ও অনুমোদন হিসেবে উপস্থাপন করে বলা হয়েছে- “এ হলো আল্লাহর সীমা বা অনুমোদন। সুতরাং তোমরা একে লঙ্ঘন করবে না। কেননা, যারা আল্লাহর সীমাকে লঙ্ঘন করে, নিঃসন্দেহে তারা যালীম বা অত্যাচারী।”
(সূরা আল বাকারা-২২৯) সুতরাং আজকের এ সমাজ ও পৃথিবীতে শান্তি, নিরাপত্তা ও মানবিকতার জন্য ইসলামের মানবাধিকারই একমাত্র অবলম্বন।
লেখক : নূর মোহাম্মদ, প্রভাষক (ইসলাম শিক্ষা), বলাখাল মকবুল আহমেদ ডিগ্রি কলেজ, বলাখাল, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।