প্রকাশ : ০৮ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
রোজা ফারসি শব্দ আরবি অর্থ হচ্ছে সওম, বহুবচনে সিয়াম। সওম বা সিয়ামের বাংলা অর্থ বিরত থাকা। ইসলামী শরীয়তে সওম হল আল্লাহর নির্দেশ পালনের উদ্দেশে নিয়তসহ সুবহে সাদিকের শুরু থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকা। ২য় হিজরীর শাবান মাসে মদীনায় রোজা ফরজ হয়।
মহান আল্লাহ তা'য়ালা পবিত্র কুরআনুল কারীমে এরশাদ করেন-
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি সিয়াম ফরয করা হয়েছে, যেমন তোমাদের আগের লোকদের প্রতি ফরয করা হয়েছিলো, যাতে তোমরা মুত্তাক্বী হতে পারো। (সূরা বাকারাহ-১৮৩)
রোজা পালন করার আদেশ :
মহান আল্লাহ এই উম্মতের ঈমানদারগণকে সম্বোধন করে বলেন যে, তারা যেন সিয়াম পালন করে। সিয়ামের অর্থ হচ্ছে মহান আল্লাহ্র নির্দেশ পালনের উদ্দেশ্যে খাঁটি নিয়াতে পানাহার ও স্ত্রী সহবাস হতে বিরত থাকা। এর উপকারিতা এই যে, এর ফলে মানবাত্মা পাপ ও কালিমা থেকে সম্পূর্ণ রূপে পরিস্কার ও পবিত্র হয়ে যায়। এর সাথে সাথেই মহান আল্লাহ বলেন যে, এই সিয়ামের হুকুম শুধুমাত্র তাদের ওপরেই হচ্ছে না, বরং তাদের পূর্ববর্তী উম্মতের প্রতিও সিয়ামের নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো। এই বর্ণনার উদ্দেশ্য এটাও যে, উম্মতে মুহাম্মাদী যেন এই কর্তব্য পালনে পূর্বের উম্মতদের পিছে না পড়ে। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ
‘তোমাদের প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য আমি নির্দিষ্ট শরী‘আত এবং নির্দিষ্ট পন্থা নির্ধারণ করেছিলাম; আর যদি মহান আল্লাহ ইচ্ছা করতেন তাহলে তোমাদের সকলকে একই উম্মত করে দিতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি এ কারণে যে, যে ধর্ম তিনি তোমাদেরকে প্রদান করেছেন তাতে তোমাদের সকলকে পরীক্ষা করবেন, সুতরাং তোমরা কল্যাণকর বিষয়সমূহের দিকে ধাবিত হও।’ (৫ নং সূরা মায়িদাহ, আয়াত নং ৪৮)
এই বর্ণনাই এখানেও করা হচ্ছে যে, ‘এই সিয়াম তোমাদের ওপর ঐ রকমই ফরয, যেমন ফরয ছিলো তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। সিয়াম পালনের দ্বারা শরীরের পবিত্রতা লাভ হয় এবং শয়তানের পথে বাধার সৃষ্টি হয়।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘হে যুবকবৃন্দ! তোমাদের মধ্যে যার বিয়ে করার সামর্থ্য রয়েছে সে বিয়ে করবে, আর যার সামর্থ্য নেই সে সিয়াম পালন করবে। এটা তার জন্য রক্ষা কবয হবে।’ (সহীহুল বুখারী ৪/১৪২/১৯০৫, ফাতহুল বারী ৯/৮, সহীহ মুসলিম ২/১-৩/১০১৮, ১০১৯)
অতঃপর সিয়ামের জন্য দিনের সংখ্যা বর্ণনা করা হচ্ছে যে ‘এটি কয়েকটি দিন মাত্র’ যাতে কারো ওপর বোঝা স্বরূপ না হয় এবং কেউ আদায়ে অসমর্থ হয়ে না পড়ে; বরং আগ্রহের সাথে তা পালন করে।
বিভিন্ন প্রকার সিয়ামের বর্ণনা :
প্রথমে প্রতি মাসে তিনটি সাওম রাখার নির্দেশ ছিলো। অতঃপর রামাযানের সাওমের নির্দেশ হয় এবং পূর্বের নির্দেশ উঠে যায়। মু‘আয (রাঃ), ইবনু মাস‘উদ (রাঃ) ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ), ‘আতা (রহঃ), কাতাদাহ (রহঃ) এবং যাহহাক (রহঃ)-এর অভিমত এই যে নূহ (আঃ) এর যুগে প্রতি মাসে তিনটি সাওমের নির্দেশ ছিলো, যা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উম্মতের জন্য পরিবর্তিত হয় এবং তাদের ওপর এই বরকতময় মাসে সাওম ফরয করা হয়।
হাসান বাসরী (রহঃ) বলেন যে, পূর্ববর্তী উম্মতদের ওপরও পূর্ণ একমাস সাওম ফরয ছিলো। একটি মারফূ‘ হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন ঃ
রামাযানের সাওম তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের ওপর ফরয ছিলো।’ (ইবনে হাজার ফাতহুল বারী-৮/২৭ উল্লেখ করে বলেছেন অত্র হাদীসের সনদটি অপরিচিত। অতএব হাদীস য‘ঈফ)
সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমে ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, পূর্বে ‘আশুরার সিয়াম পালন করা হতো। যখন রামাযানের সিয়াম ফরয করা হয় তখন আর ‘আশুরার সিয়াম বাধ্যতামূলক থাকে না; বরং যিনি ইচ্ছা করতেন পালন করতেন এবং যিনি চাইতেন না, পালন করতেন না। (সহীহুল বুখারী ৪/২৮৭/২০০২, ৮/২৬/৪৫০১, ৪৫০৩, ফাতহুল বারী ৮/২৬, সহীহ মুসলিম ২/১১৩/৭৯২)
পূর্ববর্তী উম্মতদের রোজা পালনের পদ্ধতি : ইবনে ‘উমার (রাঃ) বলেন ঃ পূর্ববর্তী উম্মতের প্রতি এই নির্দেশ ছিলো যে, ‘এশার সালাত আদায় করার পর যখন তারা শুয়ে যেতো তখনই তাদের ওপর পানাহার ও স্ত্রী সহবাস হারাম হয়ে যেতো। ‘পূর্ববর্তী’ হতে ভাবার্থ হচ্ছে আহলে কিতাব।
এরপর বলা হচ্ছে রমযান মাসে যে ব্যক্তি রুগ্ন হয়ে পড়ে ঐ অবস্থায় তাকে কষ্ট করে সাওম পালন করতে হবে না। পরে যখন সে সুস্থ হবে তখন তা আদায় করে নিবে। তবে ইসলামের প্রাথমিক যুগে যে ব্যক্তি সুস্থ থাকতো এবং মুসাফিরও হতো না তার জন্যও এই অনুমতি ছিলো যে, হয় সে সাওম রাখবে বা সাওমের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে ভোজ্য দান করবে এবং একজনের বেশি মিসকীনকে খাওয়ানো উত্তম ছিলো। কিন্তু মিসকীনকে ভোজ্য দান অপেক্ষা সাওম রাখাই বেশি মঙ্গলজনক কাজ ছিলো। ইবনে মাস‘উদ (রাঃ), ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ), মুজাহিদ (রহঃ) ত্বা‘উস (রহঃ), মুকাতিল (রহঃ) প্রমুখ মনীষীগণ এটাই বলে থাকেন।
রোজার পর্যায়ক্রমে তিনটি পরিবর্তন
(১) যখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনায় আগমন করেন তখন তিনি প্রতি মাসে তিনটি সাওম রাখতেন এবং ‘আশূরার সাওম রাখতেন। অতঃপর মহান আল্লাহ"কুতিবা আলাইকুমুস সিয়াম " অবতীর্ণ করে রামাযানের সাওম ফরয করেন।
(২) প্রথমতঃ এই নির্দেশ ছিলো - যে চাইবে সাওম রাখবে এবং যে চাইবে সাওমের পরিবর্তে মিসকীনকে ভোজ্য দান করবে। অতঃপর "ফামাং শাহিদা মিং কুমুশ শাহ র ফাল ইয়া ছুম হু "এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। অর্থাৎ তোমাদের মধ্যকার যে ব্যক্তি ঐ মাসে নিজ আবাসে উপস্থিত থাকে সে যেন তাতে সাওম পালন করে। সুতরাং যে ব্যক্তি বাড়িতে অবস্থানকারী হয় এবং মুসাফির না হয়, সুস্থ হয় রুগ্ন না হয়,তার ওপর সাওম বাধ্যতামূলক হয়ে যায়। তবে রুগ্ন ও মুসাফিরের জন্য অবকাশ থাকে। আর এমন বৃদ্ধের জন্যও অবকাশ থাকে যে সাওম রাখার ক্ষমতাই রাখে না সে ফিদইয়াহ দেয়ার অনুমতি লাভ করে।
(৩) পূর্বে রাতে নিদ্রা যাওয়ার আগে আগে পানাহার ও স্ত্রী সহবাস বৈধ ছিলো বটে, কিন্তু ঘুমিয়ে যাবার পর রাত্রির মধ্যেই জেগে উঠলেও পানাহার ও সহবাস তাঁর জন্য নিষিদ্ধ ছিলো। অতঃপর একবার সুরমাহ নামক একজন আনসারী (রাঃ) সারাদিন কাজ কর্ম করে ক্লান্ত অবস্থায় রাতে বাড়ি ফিরে আসেন এবং ‘ঈশার সালাত আদায় করেই তাঁর ঘুম চলে আসে ফলে তিনি ঘুমিয়ে যান। পরদিন কিছু পানাহার ছাড়াই তিনি সাওম রাখেন। কিন্তু তাঁর অবস্থা অত্যন্ত সঙ্গীন হয়ে পড়ে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে জিজ্ঞেস করেন ঃ কি ব্যাপার? তখন তিনি সমস্ত ঘটনা বর্ণনা করেন। এদিকে তাঁর ব্যাপারে তো এই ঘটনা ঘটে আর ওদিকে ‘উমার (রাঃ) ঘুমিয়ে যাওয়ার পর জেগে উঠে স্ত্রী সহবাস করে বসেন এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আগমন করে অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের সাথে এই দোষ স্বীকার করেন। ফলে -" উ হিল্লা লাকুম লাইলাতাস সিয়ামির র ফা ছু ইলা নিসা ই কুম --- ছুম্মা আতিম্মুস সিয়ামা ইলাল লাইল "
আয়াতাংশ বিশেষ অবতীর্ণ হয় এবং মাগরিব থেকে নিয়ে সুবহে সাদিক পর্যন্ত রামাযানের রাতে পানাহার ও স্ত্রী সহবাসের অনুমতি দেয়া হয়। (হাদীসটি সহীহ। মুসনাদে আহমাদ ৫/২৪৬, ২৪৭, সুনান আবূ দাউদ ১/১৩৮/৫০৬, ৫০৭, সহীহ ইবনে খুযায়মাহ্ ১/১৯৮-২০০/৩৮২-৩৮৪)
পবিত্র কুরআনুল কারীমে আরও এরশাদ হয়েছে : সিয়াম নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনের জন্য। তারপর তোমাদের মধ্যে যে পীড়িত কিংবা মুসাফির সে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করে নিবে এবং শক্তিহীনদের ওপর কর্তব্য হচ্ছে ফিদ্ইয়া প্রদান করা, এটা একজন মিসকীনকে অন্নদান করা এবং যে ব্যক্তি নিজের খুশীতে সৎ কাজ করতে ইচ্ছুক, তার পক্ষে তা আরো উত্তম। আর সে অবস্থায় সিয়াম পালন করাই তোমাদের পক্ষে উত্তম, যদি তোমরা বুঝো। ( সূরা বাকারা ১৮৪)
১. বাক্যে উল্লেখিত ‘রুগ্ন’ সে ব্যক্তিকে বুঝায়, সাওম রাখতে যার কঠিন কষ্ট হয় অথবা রোগ মারাত্মকভাবে বেড়ে যাওয়ার আশংকা থাকে।
২. সফররত অবস্থায় সাওম না রাখা ব্যক্তির ইচ্ছা ও পছন্দের উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘সাহাবাগণ নবী রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামণ্ডএর সাথে সফরে যেতেন। তাদের কেউ সাওম রাখতেন আবার কেউ রাখতেন না। উভয় দলের কেউ পরস্পরের বিরুদ্ধে আপত্তি উঠাতেন না’। [বুখারী: ১৯৪৭: মুসলিম: ১১১৬]
৩. রুগ্ন বা মুসাফির ব্যক্তি অসুস্থ অবস্থায় বা সফরে যে কয়টি সাওম রাখতে পারবে না, সেগুলো অন্য সময় হিসাব করে কাযা করা ওয়াজিব। এতে বলা উদ্দেশ্য ছিল যে, রোগজনিত কারণে বা সফরের অসুবিধায় পতিত হয়ে যে কয়টি সাওম ছাড়তে হয়েছে, সে কয়টি সাওম অন্য সময়ে পূরণ করে নেয়া তাদের উপর ফরয।
৪. আয়াতের স্বাভাবিক অর্থ দাঁড়ায়, যেসব লোক রোগজনিত কারণে কিংবা সফরের দরুন নয়; বরং সাওম রাখার পূর্ণ সামর্থ থাকা সত্বেও সাওম রাখতে চায় না, তাদের জন্যও সাওম না রেখে সাওমের বদলায় ‘ফিদইয়া দেয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সাথে সাথেই এতটুকু বলে দেয়া হয়েছে যে, ‘সাওম রাখাই হবে তোমাদের জন্য কল্যাণকর’। উপরোক্ত নির্দেশটি ছিল ইসলামের প্রাথমিক যুগের, যখন লক্ষ্য ছিল ধীরে ধীরে লোকজনকে সাওমে অভ্যস্ত করে তোলা। এরপর নাযিলকৃত আয়াত "ফা মাং শাহিদা মিং কুমুম শাহ র ফাল ইয়া সুম হু "
এর দ্বারা প্রাথমিক এ নির্দেশ সুস্থ-সবল লোকদের ক্ষেত্রে রহিত করা হয়েছে। তবে যেসব লোক অতিরিক্ত বার্ধক্য জনিত কারণে সাওম রাখতে অপারগ কিংবা দীর্ঘকাল রোগ ভোগের দরুন দূর্বল হয়ে পড়েছে, অথবা দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে একেবারেই নিরাশ হয়ে পড়েছে, সেসব লোকের বেলায় উপরোক্ত নির্দেশটি এখনো প্রযোজ্য রয়েছে। সাহাবী ও তাবেয়ীগণের সর্বসম্মত অভিমত তাই ৷ সাহাবী সালামাহ ইবনুল আকওয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু- বলেন, যখন "অ আলাল লা যিনা ইউ ত্বি কুনাহু ফিদ ইয়াতু ত্বয়ামু মিসকীন " শীর্ষক আয়াতটি নাযিল হয়, তখন আমাদেরকে এ মর্মে ইখতিয়ার দেয়া হয়েছিল যে, যার ইচ্ছা হয় সে সাওম রাখতে পারে এবং যে সাওম রাখতে চায় না, সে ‘ফিদইয়া’ দিয়ে দেবে। এরপর যখন পরবতী আয়াত "ফা মাং শাহিদা মিং কুমুম শাহ র ফাল ইয়া সুম হু " নাযিল হল, তখন ফিদইয়া দেয়ার ইখতিয়ার রহিত হয়ে সুস্থ-সমর্থ লোকদের উপর শুধুমাত্র সাওম রাখাই জরুরী সাব্যস্ত হয়ে গেল। [বুখারী ৪৫০৭, মুসলিম: ১১৪৫, আবু দাউদ:২৩১৫, ২৩১৬ ও তিরমিযী: ৭৯৮]
পবিত্র কুরআনুল কারীমে আরও এরশাদ হয়েছে : “রমযান মাস,যাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে,যা মানবজাতির জন্য দিশারী এবং এতে পথনির্দেশ, সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকারী সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাসে (স্বস্থানে) উপস্থিত থাকবে সে যেন রোযা রাখে”। (সূরা বাকারাহ-১৮৫)
সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্যে তোমাদের স্ত্রীদের বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্যে এবং তোমরাও তাদের জন্যে পরিচ্ছদ। আল্লাহ জেনেছেন যে, তোমরা তোমাদের নিজেদের সাথে খিয়ানত করছিলে, অতঃপর তিনি তোমাদের তওবা কবুল করেছেন এবং তোমাদেরকে মার্জনা করেছেন, সুতরাং এখন তোমরা তাদের সাথে সংগত হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্যে যা নির্ধারণ করে রেখেছেন (অর্থাৎ সন্তান) তা অন্বেষণ করো। আর তোমরা আহার করো ও পান করো যতক্ষণ তোমাদের জন্যে (রাত্রির) কালো রেখা থেকে ফজরের সাদা রেখা স্পষ্ট হয়ে যায়। এরপর রাত পর্যন্ত সিয়াম পূর্ণ করো। আর তোমরা মসজিদে ই’তিকাফ অবস্থায় তাদের সাথে সংগত হয়ো না। এগুলো আল্লাহর (নির্ধারিত) সীমা, সুতরাং এর নিকটবর্তী হয়ো না। এভাবেই আল্লাহ মানুষের জন্যে তার আয়াতসমূহ স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তারা তাকওয়া অবলম্বন করতে পারে। (সূরা বাকারা ২:১৮৭)
রোজা সম্পর্কে কতিপয় হাদিস : হযরত সাহল বিন সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত।তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)ইরশাদ করেন, জান্নাতের একটি দরজা আছে, একে রাইয়ান বলা হয়, এই দরজা দিয়ে কিয়ামতের দিন একমাত্র সায়িম ব্যক্তিই জান্নাত প্রবেশ করবে। তাদের ছাড়া অন্য কেউ এই পথে প্রবেশ করবে না। সেদিন এই বলে আহবান করা হবে সায়িমগণ কোথায়? তারা যেন এই পথে প্রবেশ করে। এভাবে সকল সায়িম ভেতরে প্রবেশ করার পর দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। অত:পর এ পথে আর কেউ প্রবেশ করবে না। (সহীহ বুখারী : ১৮৯৬, সহীহ মুসলিম: ১১৫২)
হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাবসহ রমজান মাসের সিয়াম পালন করবে, তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী গুণাহ মাফ করে দেওয়া হবে।(সহীহ বুখারী: ৩৮, সহীহ মুসলিম:৭৬০)
হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ)ইরশাদ করেন, সিয়াম ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ কোনো দিন সিয়াম পালন করলে তার মুখ থেকে যেন অশ্লীল কথা বের না হয়। কেউ যদি তাকে গালমন্দ করে অথবা ঝগড়ায় প্ররোচিত করতে চায় সে যেন বলে, আমি সায়িম। (সহীহ বুখারী: ১৮৯৪, সহীহ মুসলিম:১১৫১)
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, তোমাদের নিকট রমজান মাস উপস্থিত। এটা এক অত্যন্ত বরকতময় মাস। আল্লাহ তা’য়ালা এ মাসে তোমাদের প্রতি সাওম ফরজ করেছেন। এ মাসে আকাশের দরজাসমূহ উন্মুক্ত হয়ে যায়, এ মাসে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং এ মাসে বড় বড় শয়তানগুলোকে আটক রাখা হয়।আল্লাহর জন্যে এ মাসে একটি রাত আছে, যা হাজার মাসের চেয়েও অনেক উত্তম। যে লোক এ রাত্রির মহা কল্যাণ লাভ হতে বঞ্চিত থাকল, সে সত্যিই বঞ্চিত ব্যক্তি। (সুনানুন নাসায়ী:২১০৬)
হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সাঃ)ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, সিয়াম ব্যাতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্য, কিন্তু সিয়াম আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দেব। সিয়াম ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন সিয়াম পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি সায়িম (রোজাদার)। যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, তার শপথ! অবশ্যই সায়িমের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের গন্ধের চেয়েও সুগন্ধি। সায়িমের জন্য রয়েছে দু’টি খুশি, যা তাকে খুশি করে। যখন যে ইফতার করে, সে খুশি হয় এবং যখন সে তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন সাওমের বিনিময়ে আনন্দিত হবে। (সহীহ বুখারী: ১৯০৪, সহীহ মুসলিম:১১৫১)
লেখক : ইমাম ও খতিব, বিষ্ণুপুর মনোহরখাদী মদিনা বাজার বাইতুল আমিন জামে মসজিদ, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর।