প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
তিনি এক জীবন্ত কিংবদন্তি
উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা বইয়ে আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ রচিত 'আমি কিংবদন্তির কথা বলছি' কবিতার কয়েকটি চরণ তুলে ধরছি-
আমি আমার ভালোবাসার কথা বলছি।
আমি কবি এবং কবিতার কথা বলছি।
সশস্ত্র সুন্দরের অনিবার্য অভ্যুত্থান কবিতা
সুপুরুষ ভালবাসার সুকণ্ঠ সংগীত কবিতা
জিহ্বায় উচ্চারিত প্রতিটি মুক্ত শব্দ কবিতা
রক্তজবার মতো প্রতিরোধের উচ্চারণ কবিতা।
আমরা কি তাঁর মতো কবিতার কথা বলতে পারবো?
আমরা কি তাঁর মতো স্বাধীনতার কথা বলতে পারবো ?
চাঁদপুর জেলায় বিতর্ক আন্দোলনের প্রাণপুরুষ কাজী শাহাদাত আংকেল, যাঁর মতো আমরা বিতর্কের কথা বলতে পারি না, বিতর্ক আয়োজন করতে পারি না। তাঁর পত্রিকা চাঁদপুর কণ্ঠ ও চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশন শুরু থেকে এ পর্যন্ত চাঁদপুর জেলা সদর, উপজেলা, এমনকি চলমান বছরে মফস্বল পর্যন্ত বিতর্কের প্রচার-প্রসার ও বীজ বপন করে আজ ফলবান বৃক্ষ হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। যার ফলস্বরূপ এক যুগ ধরে পাঞ্জেরী-চাঁদপুর বিতর্ক প্রতিযোগিতার মহাযজ্ঞ চলছে। এ মহাযজ্ঞের মহানায়ক কাজী শাহাদাত আংকেল। তাঁর পদচিহ্ন অনুসরণ করে সারা চাঁদপুরে বিতর্কের বিপ্লব সূচনা হয়েছে।
আমার পড়াশোনার সুবাদে নানা জেলা, এমনকি দেশের বাইরের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হয়, যারা কুমিল্লাতে আসে পড়াশোনার জন্যে। তাদের সাথে বিভিন্ন জেলার ও দেশের বিতর্ক চর্চা নিয়ে আলোচনা হয়। তাতে মনে হয়েছে, চাঁদপুর ছাড়া কোথাও এতো নিবিড়ভাবে বিতর্ক চর্চা হয় না। বিতর্কে দক্ষ সংগঠক বা সংগঠন কিংবা ব্যক্তিগত সদিচ্ছার যথেষ্ট অভাব রয়েছে বলে বিভিন্ন স্থানে দেখা যায়। যার ব্যতিক্রম আমাদের চাঁদপুর জেলা। কাজী শাহাদাত আংকেলের দক্ষ নেতৃত্ব এবং নিরলস টিমওয়ার্ক চাঁদপুরে বিতর্ক চর্চা ও আন্দোলনকে পৌঁছে দিয়েছে অনন্য উচ্চতায়। আজকে চাঁদপুরের বিতার্কিকরা সারা দেশে ভালো অবস্থানে রয়েছে। যার একমাত্র কারণ পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্কসহ আনুষঙ্গিক নানা কার্যক্রম।
শাহাদাত আংকেলের বিতর্ক নিয়ে ভাবনার ফসল চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমি, চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশনের মতো সফল সংগঠন কিংবা সফল সম্পাদনায় প্রকাশিত বিতর্কায়ন এবং তাঁর প্রিয়ভাজন বিতর্কগুরু ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়ার সম্পাদিত বিতর্ক বিধান, বিতর্ক বীক্ষণ, বিতর্ক সমগ্রের মতো গ্রন্থগুলো।
চাঁদপুর একমাত্র জেলা, যেখানে বিতর্ক সরাসরি সম্প্রচারিত হয় স্যাটেলাইট চ্যানেলে। কাজী শাহাদাত আংকেল বিতর্কের জন্যে পেয়েছেন জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি, যা বিতর্ক আন্দোলনের পুরোধা ডাঃ আব্দুর নূর তুষার হস্তান্তর করেছেন।
বিতার্কিকদের যোগ্যতার ভিত্তিতে নানা সময়ে তাদেরকে মডারেটর, উদ্বোধক ও বিচারকে রূপান্তর আমাদের মহানায়ক শাহাদাত আংকেলের সৃজনশীল চিন্তনের অনন্য প্রয়াস। তিনি বিতার্কিকদের যথাসময়ে মূল্যায়ন করেছেন, যার ফলে তাঁর হিতাকাঙ্ক্ষী সারা চাঁদপুরেই। অর্থের মোহে আবদ্ধতার যুগে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বিতর্ক আন্দোলনে সময় প্রদান করছেন শাহাদাত আংকেলের অগণিত গুণগ্রাহী। তিনি একজন সাংবাদিক নেতা, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক এবং চাঁদপুর প্রেসক্লাবের আজীবন সম্মাননাপ্রাপ্ত সদস্য ও দুবারের সাবেক সভাপতি। তিনি চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমির সাড়ে নয় বছরের সাবেক মহাপরিচালক, লাগাতার ১৬ বছর ধরে ইলিশ উৎসবের আহ্বায়ক ও অন্তত ২৫ বছর ধরে বিজয়মেলা, চাঁদপুরের অন্যতম বলিষ্ঠ সংগঠক এবং টিআইবির সনাক, চাঁদপুর-এর চারবারের সভাপতি। তিনি চাঁদপুর সাঁতার পরিষদেরও সভাপতি। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হিসেবে প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার মানোন্নয়নে রেখেছেন নিবিড় ভূমিকা।
শাহাদাত আংকেল চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের সাথে জড়িত, যিনি এই ক্লাবের সভাপতি ও ট্রেইনারের পদ ছাড়াও রোটারী জেলায় গভর্নরের পরবর্তী সর্বোচ্চ পদ লেফটেন্যান্ট গভর্নর, অ্যাডভাইজার সহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদ অলঙ্কৃত করে হয়েছেন একজন গর্বিত রোটারিয়ান। হাজীগঞ্জ পৌরসভা তাঁর নিজ বাড়ির রাস্তাটির নামকরণ করে দিয়েছে 'কাজী শাহাদাত সড়ক' হিসেবে। তিনি একজন লেখক, বহুমাত্রিক সংগঠক ও স্বুক্তাও বটে। চাঁদপুরের সংবাদপত্র ও সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনের এ মহান পৃষ্ঠপোষকের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে ইতি টানলাম।
লেখক : কার্যনির্বাহী সদস্য, চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশন (সিকেডিএফ), কচুয়া উপজেলা শাখা; পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্কে সাবেক দলপ্রধান ও শ্রেষ্ঠ বক্তা হিসেবে বহুবার পুরস্কৃত, বর্তমানে মডারেটর ও বিচারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ।