শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

বিতর্ক : শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা

মুহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ
বিতর্ক : শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্তি ও প্রত্যাশা

বাংলাদেশের অন্যতম জেলা চাঁদপুর। পদ্মা-মেঘনা আর ডাকাতিয়ার মিলনস্থলে গড়ে ওঠা চাঁদপুর একটি ঐতিহ্যবাহী শহর। ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর হিসেবে ব্র্যান্ডিং হওয়া এই জেলা এখন বিতর্কের শহর হিসেবেও পরিচিত। কারণ এই জেলায় পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতার আসর ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এক যুগ অতিক্রম করেছে। যার নজির বাংলাদেশের অন্য কোনো জেলাতে নেই। বাচিক শিল্পের ক্ষেত্রে এটা অনেক বড় অর্জন।

শিক্ষার্থীর শিক্ষালাভের ভিত্তিমূল কোন্টি এই কথা নিয়ে বিভিন্ন মতামত থাকতে পারে; তবে এ কথায় প্রায় সকলেই একমত যে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই শিক্ষার্থীর শিক্ষালাভের অন্যতম ক্ষেত্র। সেজন্যে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে সবসময় কাজ করা হয়ে থাকে। লেখাপড়া যাতে শিক্ষার্থীর জন্যে বোঝা হয়ে না দাঁড়ায় এই লক্ষ্যে গবেষণা চলছে নিরন্তর। প্রত্যেকটি শিক্ষা উন্নয়ন গবেষণায় সহপাঠক্রমিক কার্যক্রমের জন্যে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্দেশনা দেয়া থাকে। এর মধ্যে বিতর্ক অন্যতম। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় দিবসগুলো পালনের ক্ষেত্রে যে সকল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড অন্তর্ভুক্ত থাকে তার মধ্যে বিতর্ককে অন্তর্ভুক্ত রাখা হয়। শিক্ষার্থীর বাচনভঙ্গি, বাগ্মিতা, শব্দ চয়ন, শুদ্ধ উচ্চারণ, কথা বলার ভঙ্গি, দৃষ্টি সংযোগ, শারীরিক অঙ্গভঙ্গি ইত্যাদিতে পারদর্শী হওয়ার অন্যতম মাধ্যম হলো বিতর্ক।

আমরা দেখি, শ্রেণিকক্ষে অনেক শিক্ষার্থী ভালো পড়তে পারে, লিখতে পারে, কিন্তু ভালো বলতে পারে না। কারণ শিক্ষার্থী তার অর্জিত জ্ঞান উপস্থাপনে নিজের উপরে আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভোগে। অনেক শিক্ষার্থী আছে একাকী কথা বলতে পারে, কিন্তু দুজন মানুষের সামনে যখন কোনো বিষয় ব্যাখ্যা করতে বলা হয়, তখন কিছু বলতে পারে না বা যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে পারে না। এটা তার নিজের উপর আত্মবিশ্বাসের অভাব। কেউ আছে কোন টপিকস অনেক ভালো বুঝেন কিন্তু দুই লাইন বলার পরে তিনি আর কোনো কথা খুঁজে পান না। অর্থাৎ তার উপস্থাপন ক্যাপাসিটি কম।

এই ভালো বলতে না পারার কারণে তার ভেতরে যে অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা রয়েছে, তা যথাস্থানে যথা সময়ে উপযুক্ত পরিবেশে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয় । এতে করে ভালো ফলাফল অর্জনকারী এবং ভালো জানা একজন শিক্ষার্থীর অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানের প্রচার ও প্রসার মস্তিষ্কের দেয়ালেই বন্দি থাকে। কথা বলার এই জড়তা কাটিয়ে ওঠার জন্যেই বিতর্কের খুব প্রয়োজন। সে জন্যে লেখাপড়ার হাতেখড়ির মতো বিতর্কের হাতেখড়ি দিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব নিতে হবে।

বাংলাদেশের মধ্যে একমাত্র জেলা চাঁদপুর, যেখানে বিতর্কের একটি ধারাবাহিক আসর চলমান রয়েছে। যার কেন্দ্রে রয়েছে জেলার প্রথম দৈনিক পত্রিকা দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ, প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত এবং সহযোগিতায় পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিঃ। আর এই কাজ বাস্তবায়নে নিবেদিতপ্রাণ কিছু কর্মী। এই নামগুলোর পরিকল্পনা ও পৃষ্ঠপোষকতায় চাঁদপুরের অনেক ছেলে-মেয়ে শিক্ষাদীক্ষা ও বাগ্মিতায় দেশ এবং বিদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রতিষ্ঠিত স্ব-মহিমায়। কিন্তু অবৈতনিক এই ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো হাতে গোণা কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া কতোটা সহযোগিতা পেয়েছে জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে, সেই প্রশ্ন থেকেই যায়।

বিতর্কের বার্তা নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজের অভিজ্ঞতা অনেক ধরনের। কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অপেক্ষায় থাকে কখন পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। এটা যেন তাদের কাছে একটি শিক্ষামূলক উৎসবে পরিণত হয়েছে। এই উৎসবে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্যে উদগ্রীব থাকেন তারা। প্রতিষ্ঠান প্রধান তাঁর সহ-কর্মীদের উৎসাহ উদ্দীপনা দিয়ে বিতর্কবান্ধব শিক্ষা পরিবেশ তৈরি করেন। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত শ্রেণি কার্যক্রমের পাশাপাশি সহ-পাঠক্রমিক শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করা এবং সে লক্ষ্যে গড়ে তোলার জন্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের জন্যে প্রেরণা ।

আবার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে বিতর্ক পরিচালনা করা, বিতর্কের জন্যে শিক্ষার্থী তৈরি করা এবং প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করে বিতর্ক পরিচালনা করার মানসিকতা সম্পন্ন দায়িত্বশীল শিক্ষক খুঁজে পাওয়া যায় না। কোন কোন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান প্রধান থেকেও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না পাওয়ার অভিজ্ঞতা রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উপযুক্ত শিক্ষার পরিবেশ বলয় তৈরি হোক এ ধরনের দায়িত্ব নিতে চান না কেউ কেউ। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সম্মানিত শিক্ষকগণ তাদের রুটিন ওয়ার্কের বাইরে শিক্ষার্থীবান্ধব কাজ করার প্রতি আগ্রহ পোষণ করেন না। এ সকল প্রতিষ্ঠান থেকে পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্কের সহযোগী কর্মীরা প্রাণান্তকর পরিশ্রম করেও ভালো কোনো ফলাফল বের করতে পারেন না।

আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান প্রান্তিক পর্যায়ের বিতর্কে অংশগ্রহণ করলেও তাদের শিক্ষার্থীর উপস্থাপনা একেবারে দায়সারা গোছের হয়ে থাকে। ডায়াসের সামনে দাঁড়ানো একজন বিতার্কিকের অসহায়ত্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা না পাওয়ার বহিঃপ্রকাশ। অথচ একজন ভালো বাচিক শিল্পী বের করে আনার জন্যে পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশনের প্রস্তুতির কোনো কমতি থাকে না।

অপরদিকে একটি লক্ষণীয় বিষয় হলো, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিতার্কিকদের প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করার যথার্থ পাত্র হচ্ছেন বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষকগণ। কিন্তু বাস্তবে এই বিষয়ের শিক্ষকদের সহযোগিতার হার অনেক কম। এতে করে শিক্ষার্থীরা উপযুক্ত শব্দ চয়ন এবং বাগ্মিতা প্রকাশের ভঙ্গি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই চিত্র পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্কের ১২ তম আসরেও ফুটে উঠেছে। বিতর্কের ১২ তম আসরে চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রান্তিক ও চূড়ান্ত পর্বে যে সকল বিতার্কিক অংশগ্রহণ করেছে তাদের বিতর্ক উপযোগী করার কারিগর শতকরা ৮০ জন শিক্ষক ছিলেন সাহিত্যের বাইরের। যদি বাংলা এবং ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষকগণ বিতার্কিক তৈরিতে ভূমিকা পালন করেন তাহলে চাঁদপুর জেলা বাংলাদেশের মধ্যে শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির লীলাভূমিতে পরিণত হবে। এই সফলতা অর্জন করতে হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাসে একবার হলেও সমকালীন বিষয়ে বিতর্কের আয়োজন করা যেতে পারে। এছাড়া বিদ্যালয়ে বিতর্ক ক্লাব তৈরি করে শ্রেণিভিত্তিক আন্তঃশ্রেণি বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োাজন করা যেতে পারে। তাহলে শিক্ষার্থীরা আরো বেশি করে নিজেদের মেলে ধরতে পারবে এবং বিতর্কের জন্যে আগ্রহী হবে।

এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করা দরকার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত দৈনিক পত্রিকাও একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে সমাজের মানুষের জন্যে ইতিবাচক কাজ করা সমাজ সচেতন মানুষের একান্ত কর্তব্য। এই চিন্তা-চেতনা ধারণ করে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ ২০০৯ সাল থেকে বিতর্কের আসর পরিচালনা করে আসছে। বিতর্কের এ আসর সুন্দর এবং সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের জন্যে বিতর্কের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল অর্থাৎ বিতার্কিক উৎপাদনের দায়িত্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। আর পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ পরিবার সেই বিতার্কিকদেরকে উপযুক্ত এবং দক্ষ একজন মেধাবী শিক্ষার্থী তৈরির দিকনির্দেশনা দিয়ে যেতে পারে। বিভিন্ন অভিভাবক এবং সচেতন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের চাহিদার আলোকে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ চাঁদপুর জেলায় একটি বিতর্ক একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেছে। যেখানে দক্ষ এবং অভিজ্ঞ বিতর্ক প্রশিক্ষক দ্বারা বিতর্কের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। জেলার সকল সচেতন অভিভাবক এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই একাডেমীর কার্যক্রম এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতে পারে। একজন ভালো বিতার্কিক মানে একজন ভালো শিক্ষার্থী।

লেখক : সহ-সভাপতি, চাঁদপুর কন্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশন (সিকেডিএফ), মতলব দক্ষিণ উপজেলা শাখা; সভাপতি, নারায়ণপুর প্রেসক্লাব।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়