শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

বিতর্কের সেকাল-একাল

রাশেদ শাহরিয়ার পলাশ
বিতর্কের সেকাল-একাল

১৯৯২ সাল। চাঁদপুরে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা শুরু হয়েছে। এই মেলায় একটি অংশ রাখা হয়েছে সাহিত্য সংস্কৃতির জন্যে। তারই অংশ হিসেবে বিতর্ক প্রতিযোগিতা। তখন বিতর্ক নিয়ে চাঁদপুরে কোনো ডামাডোল নেই। আমি সবে চাঁদপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হয়েছি। আমরা কয়েক বন্ধু আগ্রহ নিয়ে নিজেরা বিতর্ক করি। আমাদের সামনে কোনো টেবিল ছিলো না। বিচারক ছিলো না। সামনে শুধু সবুজ ঘাস।

তাতেই দুপক্ষ ভাগ হয়ে বিতর্ক করি। যুক্তি-পাল্টা যুক্তি দেই। আমাদের আলোচনা শেষ হয়। কিন্তু ফলাফল মিলে না। আমাদের এই প্রচেষ্টা দেখে এগিয়ে আসেন জয়সেন বড়ুয়া স্যার। তিনি আমাদের সহায়তা করেন। সাথে শিক্ষক কিন্তু অনেকটা বন্ধুসুলভ খলিল স্যারকে পাই। কিন্তু এসব আনুষ্ঠানিক কিছু না।

আমাদের প্রচেষ্টা বন্ধ হয় না। বিজয় মেলায় বিতর্কের সুযোগ পেয়ে আমরা যোগ দেই। বিতর্কের দর্শক হয় তেমনটা আগে জানা ছিলো না।

হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বিশাল মঞ্চে দাঁড়িয়ে কথা বলা একধরনের চ্যালেঞ্জ। সামনের সারিতে বিপুল সংখ্যক মানুষ দেখে মাথা ঘুরে যাওয়ার অবস্থা। তারপরও যুক্তি-পাল্টা যুক্তি চলতে থাকলো। বিতর্ক শেষে ফলাফল আসলো। অবাক কাণ্ড! আমি হয়ে গেলাম সেরা বক্তা।

আমার সেই দিনকে স্মরণীয় করে দিলেন আয়োজকগণ। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন শিল্পী হাশেম খান। এতে প্রাপ্তির ষোলকলা পূর্ণ হলো। কালক্রমে অনেক বিতর্ক করেছি। জাতীয় পর্যায়ে নানান প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি। সেরা বক্তা হওয়ার সুযোগ হয়েছে অনেকবার।

তারপর সে পর্বের সমাপ্তি টেনে কর্মজীবন চলছিল। হঠাৎ একদিন ডাক আসে, চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশন থেকে। না, বিতর্ক করার জন্যে নয়। বিতর্কের বিচারকের আসনে বসার জন্যে। বিতর্কসভায় বিচারক হিসেবে এটা আমার হাতে খড়ি। প্রথম প্রথম একটু সঙ্কোচ লাগছিল। তবে ক্রমেই যেন মিশে যাচ্ছিলাম বিতর্কের সাথে। এক পর্যায়ে এমন হয়েছে, বিতার্কিক দেখলেই বলতে পারতাম, ভবিষ্যতে সে কতদূর যাবে।

প্রথা অনুযায়ী বিচারকার্যের পরে বিচারক হিসেবে দু-চার কথা বলার সুযোগ হতো। সেখানে কিছু পরামর্শ-অভিজ্ঞতা বিনিময় হতো। তাতে ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই ধন্যবাদ দিতেন। টিপস্ নিতেন। সরাসরি কলেজের একাধিক টিমকে প্রশিক্ষণ দিয়ে বিতর্কের জন্যে তৈরি করার সুযোগ হয়েছিল।

বিচারক হিসেবে যে জিনিসটা ভালো লাগতো, সেটা হলো স্বচ্ছতা। ফাউন্ডেশনের কেউ কখনো কোনো বিতার্কিকের জন্যে সুপারিশ করেন নি। কাউকে বিজয়ী করার ব্যাপারে বলেন নি। এমন কি আমরা জানতাম, হয়ত আয়োজকদের কেউ বিতর্কে অংশ নিচ্ছে। ভাবতাম সে বিজয়ী না হলে কোনো ধরনের চাপ আসতে পারে। কিন্তু না, কখনো সে চাপ আসেনি। শুধু তাই নয়, আমার পরিচিত কেউ বিতর্কে অংশ নিলে আমি সেখানে বিচার কাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশন করেই থেমে থাকেনি। শুধু বছরে একবার বিতর্কের আয়োজনের মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেনি। বিতর্ক একাডেমি করার মাধ্যমে একটা প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। বলা দরকার, একজন মানুষ কেন বিতর্ক করবে? সহজ কথায় বললে নিজেকে প্রস্তুত করার জন্যে।

যদি আমার নিজেকে দিয়ে উদাহরণ দেই, তাহলে বিশ্বের যে কারোর সামনে কথা বলতে আমি বিন্দুমাত্র কুণ্ঠিত হবো না। সঙ্কোচ বোধ করবো না।

এটা অনেকের যোগ্যতা থাকতে পারে। তবে পরিস্থিতি অনুযায়ী কোন্ কথাটা বলতে হবে এটা বিতর্ক চর্চার মাধ্যমে শেখা যায়।

জীবনে চলার পথে অনেক সুযোগ আমি গ্রহণ করতে পেরেছি পরিস্থিতি অনুযায়ী কথা বলতে পেরে (আরও সোজা করে বললে কথার পিঠে কথা বলে)। মানুষকে সম্মান করে, শ্রদ্ধা করেও যে উচিত কথাটা বলা যায় এটার মূলে আছে বিতর্কের অবদান।

করোনার প্রতিঘাতে আমাদের জীবনের অনেক কিছুতেই ছন্দপতন হয়েছে। সেই কারণে হয়তো চাঁদপুরে বিতর্ক আন্দোলন কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে আমার বিশ্বাস, এই গতি আবার ফিরে আসবে। আমরা গর্ব করে বলতে পারবো বিতর্ক আন্দোলনের আইকনিক শহর চাঁদপুর।

লেখক : সম্পাদক, স্বদেশ বাংলা; আজীবন সদস্য, চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশন (সিকেডিএফ)।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়