প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
যে বিতর্ক করে, বাচিকশিল্পের প্রচলিত ধারায় সে পারে না এমন কিছু নেই। একজন বিতার্কিক চাইলে একজন ভালো মঞ্চ উপস্থাপক হতে পারেন, একজন ভালো শিক্ষক হতে পারেন, একজন মোটিভেশনাল স্পিকার হতে পারেন, তিনি চাইলে ফুটবল, ক্রিকেট কিংবা যে কোনো খেলার ধারাবিবরণী দিতে পারেন, ভালো নেতা হতে পারেন, একজন দক্ষ সংগঠকও হতে পারেন। মোদ্দা কথা, তিনি চাইলে যে কোনো ক্ষেত্রে নিজের সামর্থ্যরে প্রমাণ রাখতে পারেন অনায়াসেই।
যিনি সাহস করে বিতর্ক মঞ্চে কথা বলতে পারেন, প্রতিপক্ষের নানান যুক্তিকে টেক্কা দিয়ে নিজের ভাবনাগুলো বাস্তবতাসুলভ করে সকলের মাঝে বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করতে পারেন, তিনি চাইলে সমাজ নামক মঞ্চে অনুরূপ ভাবে নিজেকে সাবলীল ও পরিপূর্ণভাবে উপস্থাপন করতে পারেন। অনেকের মনে হতে পারে, উপরোল্লিখিত কাজগুলো একজন বিতার্কিক করতে পারেন--এসব লেখার মানে নিতান্ত মাইন্ড ওয়াশ মাত্র। লেখাটি এই পর্যন্ত পড়ে যারা এমনটি ভাবছেন, তাদের সেই ভাবনা ভুল প্রমাণের জন্যেই মূলত লেখাটি লেখা।
আমরা কোনো কিছু পড়লে অনেকে তা পড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকি, আবার সুনির্দিষ্ট সময় পর সেটি ভুলেও যাই। অপর দিকে একজন বিতার্কিক যখন কোনো বিষয়ে পড়েন, তখন তিনি ওই অংশটুকু নিয়ে গভীর চিন্তা করেন, ঠিক ওই পড়ার মধ্যে বাস্তবিক দৃঢ়তা খোঁজেন, যৌক্তিক প্রমাণ খোঁজেন। এতে ওই বিতার্কিকের যেমনিভাবে ভাবনার পরিধি পূর্বের চেয়ে আরও বৃহত্তর হয়, অনুরূপভাবে ওই বিষয়টি একজন বিতার্কিক দীর্ঘ সময় ধারণ করতেও পারেন। যে বিতার্কিক মাইক্রোফোনটি হাতে নিয়ে সাবলীলভাবে কথা বলতে পারেন, যে কোনো মঞ্চে অনুরূপভাবে যে কোনো বিষয়ে উপস্থাপনা করা যে তার জন্যে ডাল-ভাতের মতোই সহজ হয়ে যায়।
আমাদের পারিপার্শ্বিকতায় যা কিছুই হোক না কেন, সেখানে কথার ব্যবহার হয়, আর সেই কথাগুলো যদি গঠনমূলক হয়, যুক্তিযুক্ত হয়, তাহলে তো একেবারে সোনায় সোহাগা। বিতার্কিকরা বিচক্ষণতার সাথে কথা বলে সকল ক্ষেত্রে তার সামর্থ্যের প্রমাণ রাখে। বিতার্কিকরা বাস্তবিক ও যোক্তিক চিন্তা করে বলেই তারা কোথাও হারে না, তা বিতর্ক মঞ্চ হোক, পরিবার হোক, সমাজ হোক। হয় তারা জিতে নয়ত শিখে। প্রকৃতপক্ষে বিতার্কিকরা কখনোই হারে না। বস্তুত বিতর্ক এবং বিতার্কিকদের পরাজয় নেই। তার কারণ হলো, আমি যদি বিতর্ক করতে গিয়ে আপাতত পয়েন্টের ব্যবধানে পিছিয়ে গিয়ে পরাজয় বরণ করি, তবুও আমি এই বিতর্কটিতে কেন হারলাম, কী ভুল ছিলো সেগুলো খুঁজে বের করতে পারি। এভাবেই শেখা হয় নূতন কিছু। এই শেখাটাই আসলে জেতা। তাই বলতেই হয়, বিতর্কে যারা আসে তারা হারে না। হয় জিতে, নয় শিখে।
শামীম হাসান : সাবেক দলপ্রধান, ফরিদগঞ্জ বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজ বিতর্ক দল; নিজস্ব প্রতিনিধি, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ, ফরিদগঞ্জ।