প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
যে বিতর্ক করে সে কথা শিখে, কথা বলতে শিখে, কথা বলাতে শিখে। বিতার্কিক কখনো তর্কে জড়ায় না। কথা বলে যৌক্তিক ভাষা দিয়ে। একজন বিতার্কিক কথার ভেতর কথা জন্ম দেয়, যুক্তির ভেতর যুক্তি জন্ম দেয়। সঠিক কথা সঠিক সময়ে সঠিক স্থানে উপস্থপন করার যোগ্যতা অর্জন করে। যোগ্যতা অর্জন করে নিজেকে মেলে ধরার। মনের জড়তা, মুখের জড়তা, উপস্থাপনের জড়তা দূর করার কৌশল শেখায় বিতর্ক।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পদ্ধতিগত শিক্ষার সাথে যখন বিতর্ক যোগ হয়, তখন একজন শিক্ষার্থীর সামনে উন্মুক্ত হয়ে যায় জ্ঞানের দরজা। যে দরজা দিয়ে বিতার্কিক প্রবেশ করে আবগাহন করে জ্ঞান-রাজ্যে। নতুন নতুন তথ্য জানার আগ্রহ জন্মায় নিজ থেকে। এখানে সেখানে ছুটে বেড়ায় তথ্য সংগ্রহের জন্যে। এ যেন এক পিপাসার্ত প্রাণ। যে পিপাসার চাহিদা কোনো পানীয় দ্বারা মিটে না। নিজেকে ব্যস্ত রাখে অনুসন্ধানী চোখে। কাজে কর্মে মেধা মননে হয়ে উঠে একজন সামর্থ্যবান মানুষ।
বৈশি^ক মহামারী করোনার কারণে সাময়িক স্থগিত হওয়া পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতা আবার চালু হয়েছে। প্রান্তিক পর্যায়ে বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে আজ মতলব দক্ষিণ উপজেলায় বসছে দ্বাদশ পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতার আসর। শিক্ষার্থীদের মাঝে এক উৎসবের আমেজ। প্রতিযোগিতার আমেজ। যে প্রতিযোগিতায় কেউ হেরে যায় না। কেউ কাউকে ছোট মনে করে না। পড়াশুনা করে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতামূলক পাঠশালা হলো চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশন এবং এর তত্ত্ববধানে পরিচালিত বিতর্ক প্রযোগিতা।
বিতর্ক নিয়মানুবর্তিতা শেখায়। কথা বলার জন্য সময়ের পরিমাপ শেখায়। অর্থাৎ কথা যত গুরুত্বপূর্ণই হোক না কেন তা বলার জন্যে সে কতটুকু সময় পাবে আর সে সময়ের কতটুকু সদ্ব্যবহার করা হয়েছে তার প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ করতে শেখায়। পরমতষহিষ্ণু হতে শেখায়। প্রতিপক্ষকে সম্মান দিয়ে ছুড়ে দেয়া প্রশ্নের উত্তর দিতে শেখায়। যথার্থ শব্দ চয়নের মাধ্যমে যুক্তি খণ্ডন করতে শেখায়।
বিতর্কের এমন সুন্দর পরিপাটি সুবিধাগুলো থেকে আজ আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত প্রায়। অতি উৎসাহী অভিভাবক, বিদেশে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীর বাবা-ভাই বা ভগ্নিপতি আদর করে একটি মোবাইল ফোন তুলে দেয় সেই শিক্ষার্থীর হাতে। এখন বই শোভা পায় না। তার হাতে এখন স্মার্ট ফোন। ক্রমাগত মোবাইলের সংস্পর্শ তার মন থেকে সকল প্রকার সৃজনশীল উদ্ভাবনী শক্তি লোপ করে। মোবাইল ফোন তাকে নিয়ে যায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ভেতর। শিক্ষার্থী এখন নিজ থেকে আর কিছু পড়তে চায় না। সে হয়ে যায় গুগল নির্ভর। এটা মেধাবী এবং যোগ্য শিক্ষার্থী উৎপাদনের অন্তরায়।
অপর দিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সম্মানিত প্রায় শিক্ষক সৃজনশীল কর্মকাণ্ড থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখেন। রুটিন ওয়ার্কের বাইরে তেমন কিছু করতে চান না। ফলে শিক্ষার্থীর মনে শেখার তৃষ্ণা জাগ্রত হয় না। এসবের কারণেও বিতর্কপ্রেমিক শিক্ষার্থী কমে গেছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য সামাজিক আন্দোলনের পাশাপাশি একাডেমিক নির্দেশনা থাকা দরকার। সরকারিভাবে জাতীয় বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিতর্কের পর্ব রাখতে দেখা যায়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এসব কর্মসূচি প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষকতা এবং বিশেষ করে সাহিত্যের শিক্ষকদের অসহযোগিতার কারণে ফলপ্রসূ হয় না।
এ ধরনের নেতিবাচক পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসার জন্যে পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স ও দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ এক যুগের বেশি সময় ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গ্রামে গঞ্জে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পশ্চাদমুখী মেধাবীদের বের করে সম্মুখে চলার সাহস যোগাচ্ছে। গোটা চাঁদপুর জুড়ে এমন অসংখ্য উদারহণ রয়েছে।
মুহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ : সহ-সভাপতি, সিকেডিএফ, মতলব দক্ষিণ; নিজস্ব প্রতিনিধি, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ।