বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ২৮ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

নতুন কারিকুলামে বিতর্ক চর্চার গুরুত্ব
মোঃ জাহিদ হাসান

চলতি ২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন কারিকুলাম ২০২১ বাস্তবায়নের কাজ চলছে। চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকে ১ম ও ২য় শ্রেণিতে, মাধ্যমিকে ৬ষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন কারিকুলামের বাস্তবায়নের কাজ চলমান আছে। আগামী ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণিতে, মাধ্যমিকে ৮ম ও ৯ম শ্রেণিতে, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকে ৫ম শ্রেণিতে, মাধ্যমিকে ১০ম শ্রেণিতে এবং ২০২৫ ও ২০২৬ শিক্ষাবর্ষে উচ্চ মাধ্যমিকে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন হবে। নতুন এ কারিকুলামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো : এই কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের মুখস্থ নির্ভরতা বাদ দিয়ে অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিখন কার্যক্রমকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ পূর্বের কারিকুলামে একজন শিক্ষার্থী যেখানে আগে পড়ে শিখতো, তারপর করতো; সেখানে নতুন কারিকুলামে একজন শিক্ষার্থী আগে আগে করবে, পরে বুঝবে এবং সবার শেষ শিখবে। আর এ পুরো প্রক্রিয়াটিতে একজন শিক্ষার্থী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপটে অভিযোজনের লক্ষ্যে কোনো একটি বিষয়ের নির্দিষ্ট যোগ্যতা অর্জন করবে জ্ঞান, দক্ষতা, মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গির যথাযথ সমন্বয়ের মাধ্যমে।

নতুন কারিকুলামে পাঠদান পদ্ধতি, শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনা, মূল্যায়ন পদ্ধতি, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর ভূমিকা ইত্যাদিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। যেখানে একজন শিক্ষক এখন আর ঠিক আগের নিয়মে পড়াবেন না, তিনি মূলত শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন শিখন অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে নির্দিষ্ট যোগ্যতা অর্জনের দিকে নিয়ে যাবেন। সেখানে একজন শিক্ষার্থী নির্দিষ্ট শিখন অভিজ্ঞতায় নিজের সক্রিয় অংশগ্রহণ বুঝাতে নীরব পাঠ, সরব পাঠ, একক কাজ, দলগত কাজ, উপস্থাপন, প্রদর্শন, প্রশ্নোত্তরসহ নানা ক্ষেত্রে নিজেকে সম্পৃক্ত করবে। আর এর মধ্য দিয়ে একজন শিক্ষার্থী তার কাঙ্ক্ষিত যোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হবে। নতুন কারিকুলামের সামগ্রিক আলোচনা থেকে এটা যে কেউ সহজে অনুমান করতে পারবে যে, অভিজ্ঞতাভিত্তিক এই শিখন প্রক্রিয়ায় একজন শিক্ষার্থীর সামগ্রিক উপস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারিকুলামে শিখনকালীন মূল্যায়ন ও সামষ্টিক মূল্যায়নে শিক্ষার্থীর আচরণিক বৈশিষ্ট্য, সক্রিয় অংশগ্রহণ ও উপস্থাপনাকে নির্ধারিত ১০টি (দশ) বিষয়ের জন্যেই পারদর্শিতার সূচক হিসেবে নেয়া হয়েছে। কারিকুলামকে নতুনভাবে পাওয়া শিক্ষার্থীরা পারদর্শিতার এসব সূচকে নিজেকে আলাদা আলাদা করে সম্পৃক্ত করা কিছুটা সময় সাপেক্ষব্যাপার। তবে শিক্ষার্থীরা অতি অল্প বয়স থেকে শুধুমাত্র একটি বিষয় চর্চার মাধ্যমে নতুন কারিকুলামের অধিকাংশ পারদর্শিতার সূচকের সাথে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে পারে। আর সেটি হলো বিতর্ক চর্চা। কিছুদিন আগেও যেটি সহপাঠক্রমিক বিষয় ছিল। কিন্তু বর্তমানে কয়েকটি বিষয়ে বিতর্ক চর্চাকে একেবারে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হয়েছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে একাধিক বিষয়ে নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুর উপর দলগতভাবে বিতর্কের সেশন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার মধ্য দিয়ে আমরা বিতর্ক চর্চার সামগ্রিক গুরুত্বটি অনুধাবন করতে পারি। তাছাড়া একজন শিক্ষার্থীর জন্যে যে সকল পারদর্শিতার সূচক আনা হয়েছে (আচরণিক বৈশিষ্ট্য, একক ও দলীয় কাজে সক্রিয় অংশগ্রহণ, উপস্থাপনা ইত্যাদি) তা কেবলমাত্র বিতর্ক চর্চার মাধ্যমেই সম্ভব।

শিক্ষা দেশের সকল মানুষের জন্যে একটি সাংবিধানিক অধিকার। সর্বজনীন শিক্ষা বিস্তারের পথ প্রশস্ত করতে নতুন কারিকুলামে শিক্ষাতে সহজলভ্য, প্রাণচাঞ্চল্য, মানবিক, আধুনিক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও যুক্তিনির্ভরতার কথা বলা হয়েছে। তবে বিতর্ক চর্চার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে যুক্তিনির্ভরতার বিষয়টি দুটি পক্ষের দিক থেকে মূল্যায়নের জন্যে সুযোগ আছে। রাষ্ট্রপক্ষ নতুন এ কারিকুলামকে বাস্তবায়নের পথে ২০১৭ সাল থেকে নানা বিষয়কে আলোচনা-পর্যালোচনা, মতামত গ্রহণ-বর্জনের মধ্য দিয়ে অত্যন্ত যুক্তিযুক্তভাবে বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক তেমনি একজন শিক্ষার্থী শিখন প্রক্রিয়ায় সামগ্রিক জ্ঞানকে ধারণ করে যৌক্তিক জ্ঞান অর্জনের পথকে বেছে নিতে পারে। আর উভয়ের ক্ষেত্রে বিতর্ক চর্চাটি একটি হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। আর তাই বলতে পারি, নতুন কারিকুলামে বিতর্ক চর্চার গুরুত্ব সীমাহীন, যা শিক্ষক-শিক্ষার্থীর বোধগম্যতায় আনা জরুরি।

মোঃ জাহিদ হাসান : টেলিভিশন বিতার্কিক, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, চাঁদপুর ডিবেট মুভমেন্ট (সিডিএম)।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়