বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

যে কারণে প্রতিটি শিশুর বিতর্ক শেখা উচিত
রাসেল হাসান

যে শিশু বিতর্ক শিখেনি, সে মূলত কথা বলা শিখেনি। পরিবার বা পারিপার্শ্বিকতা থেকে যা শিখেছে নিতান্তই তা প্রয়োজনের তাগিদে ভাব বিনিময় করা। কিন্তু এই ভাব বিনিময়টা যে শ্রুতিময় শব্দ দ্বারা, গাম্ভীর্যপূর্ণ বাচনভঙ্গি দ্বারা চমৎকারভাবে উপস্থাপন করা যায় তা বুঝতে হলে বিতর্ক শেখা জরুরি। অনেকেই জানেন না, কথা বলাটাও যে একটি আর্ট। চিত্রকর রংতুলিতে যেমন তার শৈল্পিক প্রতিভাকে ফুটিয়ে তোলেন, একজন প্রকৃত বিতার্কিকও বাচিকশিল্পের মাধ্যমে শ্রোতাকে মন্ত্রমুগ্ধের মতো আকৃষ্ট করে রাখেন। প্রতিপক্ষকে সম্মানের সাথে কথা বলে নিজের মতকে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ঝগড়ার মতো নেতিবাচক কাজটি এড়িয়ে যেতে পারেন একজন বিতার্কিকই।

বিতর্ক মানেই শব্দ ভেদে স্বরযন্ত্রের উঠানামার মাধ্যমে দারুণ শব্দচয়ন। বিতর্ক মানেই সুস্পষ্ট শুদ্ধ উচ্চারণে বাড়তি সতর্কতা, বিতর্ক মানে মাইক্রোফোনের সঠিক ব্যবহার জানা, বিতর্ক মানেই মঞ্চভীরুতা দূরীকরণ, একরোখা মনোভাবকে মুক্তি দিয়ে ইতিবাচক যুক্তির আশ্রয় গ্রহণ। বিতর্ক শেখায় পরমতসহিষ্ণুতা, সমায়ানুবর্তিতা, আত্মনির্ভরশীলতা। তাই অভিভাবকদের বলছি, যদি আপনার সন্তানকে বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী বানাতে চান, তবে বিতর্ক শেখান। বিতর্ক চর্চা পারে একের ভেতর অনেক গুণের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে।

এ প্রজন্মের অনেকেই নিজ পরিবারের শক্ত অবস্থান, রাজনৈতিক খুঁটির জোর কিংবা অর্থ দাম্ভিকতায় সমবয়সী বন্ধুদের সাথে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়ছে। এতে বাড়ছে বিভিন্ন ধরনের কিশোর অপরাধ। অর্থ-বিত্তের মাপকাঠিতে অপেক্ষাকৃত দুর্বল বন্ধুর সাথে কথা বলার সময় ‘চিৎকার’কে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। অথচ প্রতিপক্ষের সাথে মতানৈক্যে চিৎকার কখনো জয় এনে দেয় না, বরং যুক্তিহীন চিৎকার অযুক্তিকে চিৎ করে ফেলে দেয়। যুক্তির খেলায় জয় পেতে হলে যুক্তিবাদী হতে হয়, যুক্তিবাদী হতে হলে তথ্য-উপাত্ত সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণা থাকতে হয়, সাম্প্রতিক তথ্য সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হলে পুঁথিগতবিদ্যার পাশাপাশি বাইরের জগৎ সম্পর্কে জানতে হয়। আর জানতে হলে অবশ্যই পড়তে হবে। তাই বিতর্ক শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় মনোযোগী করে, মনোবিচ্ছেদ নয়। তাই নিজের সন্তানকে প্রকৃত জ্ঞানার্জন করাতে হলে বিনয়ের সাথে বলছি, বিতর্ক শেখান।

বহু অভিভাবকের কাছে শুনেছি, নিজ সন্তানকে কিছু বললেই তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে। একই ঘরের ভাই-বোনের মধ্যে ঝগড়া, হাতাহাতি এখন নিত্যদিনের ঘটনা। এর মূল কারণ সন্তানের মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতার অভাব। আপন ভাই-বোনের মততো না-ই, বাবা-মায়ের মতকেও তারা সহ্য করতে পারছে না। নিজে যা বলে তা-ই সঠিক বা তা হতেই হবে এমন একঘেঁয়েমি মতাদর্শিতা দূর করতে হলে শিশুকাল থেকেই বিতর্ক চর্চা করা উচিত। বিতর্ক মঞ্চ প্রতিপক্ষের মতকে সহ্য করার শিক্ষা দেয়। বিতর্ক শেখায়, রেগে গেলেন তো হেরে গেলেন। প্রতিপক্ষের তিক্ত কথাগুলো, তীরের মত ধেয়ে আসা প্রশ্নগুলোর উত্তর হাসিমুখে দিতে পারার নামই বিতর্ক। তাই অভিভাবকদের বলছি, যদি আপনার সন্তানকে পরমতসহিষ্ণু হিসেবে গড়ে তুলতে চান, তবে বিতর্ক শেখান।

কথায় যতই যুক্তির খই ফুটুক, বাস্তবতার নিরিখে তথ্য দিয়ে রসালো বক্তব্যটি যতোই শ্রুতিমধুর করে উপস্থাপন করুক, বিতর্কের সময় নির্দিষ্ট। এই যে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যুক্তির উক্তিকে পরিবেশন করার যে শিক্ষা তা শিশুকে সময়ানুবর্তিতা শেখায়। তাই সময়ের কাজ সময়ে করা, নির্দিষ্ট সময়ে কার্য সম্পাদন করার মতো শিক্ষাটি বিতর্ক থেকে শেখা যায় বাস্তবিকভাবে।

যুক্তির অস্ত্র যদি হাজারো ঝগড়াকে মুক্তি দিতে পারে তবে যুক্তিময় কথাই শ্রেয়। যুক্তির এই অস্ত্র সকলের কাছে থাকে না। নিত্যদিনের উক্তির মালায় যুক্তিকে তারাই গাঁথতে পারে যারা বিতর্ক অঙ্গনে বিচরণ করেছে বিতর্ক জিততে নয়, শিখতে। শৈশবে বিতর্ক মঞ্চে হেরেও বিতর্ক শিখেছেন যারা, জীবনের বিতর্কে বারবার জয়ী হয়েছেন তারা। তাই অভিভাবকগণ যদি মনে করেন আপনার সন্তান ‘জীবন বিতর্কে’ জয়ী হোক তবে মিনতি করে বলছি, তাকে বিতর্ক শেখান।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়