প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
চার ॥
২০১৮ সালে পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্কে আমার সুযোগ হয় ২য় বারের মতো মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করার। আমি তখন কুমিল্লা সেনানিবাসস্থ ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল ও কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী । রাজন দা ফোনে জানতে চাইলেন আমি থাকতে পারবো কিনা। তখন আমাদের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা চলমান। আমি দাদার কথায় রাজি হয়ে গেলাম।
২ এপ্রিল ২০১৮ বিকেল ৫টায় আমার পরীক্ষা শেষ হলো। হোস্টেলে এসে সব গুছিয়ে ৫:৩০ নাগাদ রওনা হলাম। তখন কুমিল্লা-চাঁদপুর সড়কের কাজ চলমান ছিলো। এক পাশে রাস্তার কাজ চলতো, অন্য পাশে গাড়ি চলতো। বাড়ি ফিরতে রাত ১০টা বেজে গেলো।
রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাবো এমন সময় মনে হলো, আগামীকাল তো আবার সকাল ৮টার পূর্বেই কচুয়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে থাকতে হবে। তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ি। কিন্তু রাত প্রায় একটা বেজে গেলো, আমার দুচোখের পাতা বন্ধ হচ্ছে না। মনে মনে ভাবছি, এই রাতের আবার কী দরকার ছিলো? কখন সকাল হবে? কখন সূর্য দেখা দিবে? ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারিনি।
৩.০৪.২০১৮ ফোনে এলার্ম দেয়া ছিলো ভোর ৫টা। কিন্তু ভোর ৪:৩০-এ আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। নামাজ পড়লাম, ফ্রেশ হয়ে রওনা দিলাম কচুয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু গাড়ি পাচ্ছি না। হেঁটেই রওনা দিলাম। রহিমানগর সুরমা বাস কাউন্টারের কাছে একটা সিএনজি অটোরিকশা পেলাম।
কাজী শাহাদাত আংকেল রাজন দাদার কাছে নাস্তা পাঠালেন আমাদের জন্যে। নাস্তা শেষে আমরা শোভাযাত্রার প্রস্তুতি নিলাম। তখন ইউএনও ছিলেন নীলিমা আফরোজ মহোদয়। দেখলাম খুব দ্রুত হেঁটে আসছেন তিনি। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা বীথি রাণী চক্রবর্ত্তীও তাঁর সাথে যোগ দিলেন। শাহাদাত আংকেলকে আমরা মাঝখানে রাখতে চাইলাম। কিন্তু সন্তানবৎসল পিতা ছোট্ট আকিবার আবদার মেটাতে রয়ে গেলেন এক পাশে।
আমাদের স্কুলের বিতর্ক দলের সদস্যরা এসে বললো, ভাইয়া আমাদের বক্তব্যটা একটু গুছিয়ে দিন। আমি তাদের কিছু যুক্তি দিলাম, আবার কিঞ্চিত সংশোধনও করে দিলাম। মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মজার একটি স্মৃতি আছে।
একটি ডিবেট শুরু হবে। হঠাৎ করে আমি বললাম, আমি একটি ফলাফল ঘোষণা করবো। আহসান আংকেল বলে উঠলেন, আরে, এখন কিসের ফলাফল? রাজন দা ওনাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, ওকে বলতে দেন। আমি বললাম, বিতর্ক যাই হোক, বিজয়ী হবে পালাখাল রোস্তম আলী কলেজ। কারণ, বিতর্কে পক্ষ এবং বিপক্ষে ছিলো পালাখাল কলেজেরই দুটি দল।
সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন। ভাবলাম, যাক লোডশেডিং আর গরমে অসহ্য দশর্ককে নিয়ে আরো ৪০ মিনিট কাটাতে পারবো।
বিতর্ক শেষ হলে শ্রদ্ধাভাজন চাচা ফরহাদ চৌধুরীর নিমন্ত্রণে সাংবাদিক নেতা ও সিকেডিএফ কচুয়ার মান্যবর সভাপতি রাকিবুল হাসান ভাইয়ার বাড়িতে আমরা দুপুরের খাবার খেলাম।
আমাদের মাহমুদা খানম আন্টি আমাদের সাথে অনেক ছবি তুললেন। পরবর্তীতে যা চাঁদপুর কণ্ঠে ছাপা হয়।
পুনশ্চঃ এ বছর ২০২৩ সালের ৭ই অক্টোবর রহিমানগর বিএবি উচ্চ বিদ্যালয়ে আয়োজিত হচ্ছে পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠের এক যুগপূর্তির যাত্রা। আমি স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও প্রাক্তন বিতর্ক দলের দলপ্রধান হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। ২০১৩ সাল হতে বিতর্ক আন্দোলনের সঙ্গে আছি। ২০১৭ সালে কাজী শাহাদাত আংকেল আমাকে সিকেডিএফ কচুয়া শাখার সদস্য করেন। সেই থেকে সংগঠনটির পাশে থেকে মডারেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছি। চলমান বিতর্কে আমাকে বিচারক হিসেবে মনোনীত করাতে আমি সিকেডিএফের সবার প্রতি বিশেষ করে কাজী শাহাদাত আংকেলের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমি যতদিন বাঁচি এ আন্দোলনের পাশে থাকতে চাই। কাজী শাহাদাত আংকেল যে আলোর মশাল জ্বেলেছেন তার আলোকে পুরো চাঁদপুর আলোকিত হয়েছে। সৃষ্টি হয়েছে বহু বিতার্কিক। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো প্রেজেন্টেশনগুলো চাঁদপুরের বিতার্কিকরাই করে আসছে। প্রযুক্তির কল্যাণে আমার লেখাগুলো আমার বিভাগের শিক্ষকদের নিকটও পৌঁছে যায়। তারা এখন প্রতিনিয়ত আমার লেখালেখির খোঁজ খবর নেন। বিশেষ করে বিভাগীয় প্রধান ড. রওনক আরা বেগম ম্যাম, সহযোগী অধ্যাপক তপন ভট্টাচার্য্য স্যার, কবির উদ্দিন আহমেদ স্যার, প্রভাষক মাহবুব আলম স্যার উল্লেখযোগ্য।
আজকের এই শুভক্ষণে আমি আমার হাই স্কুল জীবনের শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। বিশেষভাবে আমাদের প্রধান শিক্ষক আবুল হোসেন পাটোয়ারী স্যার ও বিতর্ক শিক্ষক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আজকের মতো ইতি টানছি। (চলবে)
মোঃ মেহেদী হাসান সোহেল : বিএসএস (অনার্স) ৩য় বর্ষ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়; সদস্য, চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশন (সিকেডিএফ)।