প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০
॥ পর্ব ২ ॥
আমি খুব কঠিন মানুষ। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ হচ্ছিল। আমরা ট্রেনে ছিলাম। বোমাবর্ষণ হচ্ছিল। সহযাত্রীরা কেঁদেছিল, আমি কাঁদিনি। ১৯৮০ সালে আমার বাবা মারা যান। সবাই কেঁদেছিল, আমি কাঁদিনি। কিন্তু আজ এক বক্তার বক্তব্য শুনে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। সেই বক্তাটি হলো মেহেদী হাসান সোহেল। আমি একটু তাকে দাঁড়িয়ে পরিচিত হওয়ার অনুরোধ করছি। হলভর্তি অতিথি, বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ আয়োজক নেতৃবৃন্দের সামনে এভাবেই নিজের মনের অভিব্যক্তি তুলে ধরেছিলেন চাঁদপুরে বিতর্ক আন্দোলনের কাণ্ডারী চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত আংকেল।
২০১৬ সালে আমার স্কুল জীবনে এবং পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্কে শেষ বির্তক ছিল এটি। আমি, রাবেয়া এবং আব্দুল্লাহ ৩ জন মিলে ঠিক করলাম এবার বিতর্কে আমরা চাঁদপুরে চ্যাম্পিয়ন হবো। যেই কথা সেই কাজ। আমরা চর্চা করতে লাগলাম। বিষয় নির্ধারণ করা হলো ‘আজকের বাংলাদেশই শহীদদের স্বপ্নের বাংলাদেশ’। আমি দলপ্রধান, রাবেয়া ২য় বক্তা এবং আব্দুল্লাহ ছিল প্রথম বক্তা। বিষয় সম্পর্কে মিল রেখে গলাতে একটি জাতীয় পতাকা ঝুলিয়ে বক্তব্য দেওয়া শুরু করলাম, যার শুরুটা ছিল এমন-
স্বাধীনতার ৪৫ বছর হলো। কিন্তু জীবনযুদ্ধে এখনও পরাধীন কুষ্টিয়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আব্দুল বারিক। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এই সংগ্রামীকে আজ রাস্তাতে মাদুর পেতে নত মস্তকে জুতা সেলাই করতে হয়। মোবাইলে ভিডিও চালু করে সেদিনের বিতর্কে দর্শকরা করতালিতে হলরুম মুখরিত করে ফেলে। ফলে বিচারকম-লীর ঘোষণার আগেই হলরুমে আনন্দ অনুভূতি দেখতে পাই সবার চোখে মুখে। তা আরও নিশ্চিত হয়ে যায় কাজী শাহাদাত আংকেলের বক্তব্য শোনার পর। আমি সেই বিতর্কে শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হই। সর্বোচ্চ নাম্বার পাই। দলীয় এবং দলপ্রধান উভয় পর্যায়ে প্রথম হই। বিতর্ক শেষে মঞ্চে শাহাদাত আংকেল মানিক স্যারকে বার বার বললেন, আপনি এদের প্রতি খেয়াল রাখেন, এরা এবার ভালো করবে। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো দল এবার কচুয়ায় আছে। নানা ভাইয়ের হঠাৎ মৃত্যু, প্রতিষ্ঠানের অনীহাসহ নানা প্রতিকূলতা, আমার অসুস্থতা, ডাক্তারের নিষেধ সত্ত্বেও আমি বিতর্কে অংশ নেই এবং কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত উত্তীর্ণ হই। রোটারী ভবনের দেয়ালে আর পত্রিকাতে দলপ্রধানদের ছবি দেয়া হতো। আমরা আনন্দিত হতাম।
আজ আগস্টের ৫ তারিখ। ২০২৩ সাল। মনে নানা স্মৃতি ভেসে বেড়াচ্ছে। মনে পড়ছে কত কথা। মনে পড়ে তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুর সবুর মন্ডল ও পুলিশ সুপার শামছুন্নাহার মহোদয়ের হাত থেকে প্রতিশ্রুতিশীল বিতার্কিক হিসেবে স্বীকৃতি পাবার কথা। সে বছর পাড়াগাঁয়ের রহিমানগর বি.এ.বি. উচ্চ বিদ্যালয় সারা জেলাতে একদিনের বিতর্কে শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হয়। আর আমি হই শ্রেষ্ঠ বক্তা। এরপর আর সরাসরি বিতর্ক করবার সুযোগ হয়নি। কিন্তু মডারেটর হিসেবে কাজ করবার সুযোগ হয়েছিল। সেসব নিয়েও রয়েছে না বলা অনেক কথা। কাজী শাহাদাত আংকেল আমার প্রেরণা। আমি এ মানুষটির কাছে বড্ড বেশি ঋণী। যতই দিন যায়, তিনি এ ঋণ বাড়িয়েই চলেছেন। বারে বারে তাগিদ দিয়ে লিখিয়েছেন। আমার মতো নগণ্যকে তিনি তার পত্রিকাতে লিখার জন্যে সবসময় তাগিদ দিয়েছেন।
আপন ব্যস্ততায় মানুষটিকে স্মরণ করতে ভুললেও তিনি আমাকে ভুলেননি কখনো। এভাবেই ২০০৯ সাল থেকে হাজারো বিতার্কিককে আগলে রেখেছেন এ জীবন্ত কিংবদন্তি। জয়তু চাঁদপুর কণ্ঠ-পাঞ্জেরী বিতর্ক আন্দোলন। (চলবে)।