প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০
বিতর্ক একটি শক্তিশালী যুক্তিবাদী কাঠামো, যা শিক্ষার্থীদের সমৃদ্ধির মাধ্যমে আলোকিত করে এবং তাদের ভাবনা ও যুক্তির দক্ষতাকে বৃদ্ধি করে। এটি তাদের মতামতের সঠিকতা, বিচারশীলতা বৃদ্ধি করে এবং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করার ক্ষমতা দেয়, যা কোনো তথ্য বা তত্ত্বের সত্যতা বোঝার জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ। সেই সাথে বলা যায়, বিতর্ক আমাদের চিন্তাভাবনা ও ধারণাগুলোর একটি সংগঠিত রূপ, যা আমাদেরকে আলোচনা করতে উৎসাহিত করে এবং নতুন ধারণা উদ্ভাবনে অনুপ্রাণিত করে। বিতর্কের মাধ্যমে বিতার্কিকরা তাদের বক্তব্যকে পরীক্ষা করতে পারে ও যুক্তিগুলো প্রখরভাবে উপস্থাপন করতে পারে। বিতর্ক শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বর্তমানে একটি মুখ্য কার্যক্রমে পরিণত হয়েছে। সহ-শিক্ষা কার্যক্রমে বিতর্ক একটি অপরিহার্য উপাদান। বিতর্ক শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাধীনচেতা মনোভাব বৃদ্ধি করে তাদের যুক্তিসঙ্গত ও বিশ্লেষণাত্মক চিন্তাভাবনার উন্নয়ন ঘটায়।
বিতর্ক শেখায় প্রতিপক্ষের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে কীভাবে তাদের যুক্তির বিরোধিতা করে নিজের যুক্তিকে উপস্থাপন করা যায়। পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে যখন একজন বিতার্কিক প্রচণ্ড স্নায়ুচাপের মধ্যে থেকেও নিজের বক্তব্য উপস্থাপন করে তখন তার ভেতরকার সত্তা অনুপ্রাণিত হয়। সে সময় হেরে গেলেও বলতে পারে, পরের বিতর্কে ‘আমি পারবো’ এবং এই ধারণাগত মনোভাব তার কথা বলার ভয়কে দূর করে উদ্যমী করে তোলে।
সজীবতা এবং আত্মবিশ্বাস একজন শিক্ষার্থীর গুরুত্বপূর্ণ মানসিক গুণাবলি, এটি তাদের কার্যকলাপ এবং মানসিক উন্নয়নের জন্যে প্রয়োজনীয়। যে কোনো ধারার বিতর্ক শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই দুটি গুণাবলি অপরিসীমভাবে বৃদ্ধি করে, যা তাদের মানসিক বিকাশ ও চিন্তাভাবনার প্রসারে অপরিহার্য। বিতর্ক শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে ভূমিকা রাখার পাশাপাশি যোগাযোগ দক্ষতা ও সমন্বয়সাধন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। বিতর্কের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অন্যের সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করতে পারে এবং মতামতের সাথে সামঞ্জস্য ও সংশ্লিষ্টতা গড়ে তুলতে পারে, যা তাদের সকল নির্দেশক প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন মানদ- এবং নীতিমালা মেনে চলতে সাহায্য করে।
তাছাড়া বিতর্ক এমন একটি মাধ্যম, যা সমাজের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ সৃষ্টি করে, যেমন : নীতি নির্ধারণ করা, নীতিমালা পরিচালনা এবং ন্যায় প্রয়োগ। এটি একটি পদ্ধতি যা শিক্ষা, সহ-শিক্ষা এবং সামাজিক সংগঠনে কৌশলগত উন্নতির জন্যেও ব্যবহৃত হতে পারে।
মোট কথা যখন একজন ব্যক্তি তার মতামতকে যুক্তি সহকারে প্রকাশ করে এবং অন্যের মতামতকে সম্মান দেখায়, তখন তার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। সুতরাং বিতর্ক করার মাধ্যমে একজন বিতার্কিক নিজের যুক্তি উপস্থাপন করার পাশাপাশি অন্যের কথা শোনার সাথে সাথে নতুন ধারণা ও বিচার করার ক্ষমতা অর্জন করে।
তাই বিতর্কের মাধ্যমে এই ধরনের নতুন ধারণা অর্জন করার জন্যে এবং শিক্ষার্থীদের আত্মোন্নয়ন, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে সহশিক্ষা কার্যক্রম হিসেবে এর প্রসার অত্যাবশ্যকীয়। আর সহ-শিক্ষার উপকরণ হিসেবে বিতর্ক জীবনের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয়।
এবার চাঁদপুরের বিতর্ক প্রেক্ষাপট নিয়ে বলা যাক। চাঁদপুরে পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতা চাঁদপুরের বিতার্কিক তৈরিতে মূল ভিত্তি হিসেবে সবসময়ই কাজ করে আসছে। জেলা শহরের বাইরে প্রতিটি উপজেলায় বিতর্কের প্রসার, বিতর্ক সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সম্যক ধারণা তৈরি করছে সিকেডিএফ। বর্তমানে আমরা দেখছি জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে চাঁদপুরের বিতার্কিকরা অসাধারণ বিতর্ক করছে এবং ভালো বক্তা হিসেবে তারা ব্যাপক পরিচিতি অর্জন করেছে। আর এই স্বনামধন্য বিতার্কিক ও সুবক্তাদের বেশিরভাগের হাতেখড়ি ঘটেছে পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। যেহেতু আমার ১৪-১৫ বছরের এই বিতর্ক জীবনের শুরুটা এই বিতর্ক প্রতিযোগিতা থেকেই হয়েছিলো, তাই পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতার প্রতি আমার আলাদা টান রয়েছে।
তিন বছর বন্ধের পর আবারো শুরু হতে যাচ্ছে প্রতিযোগিতাটি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যুক্তির মঞ্চ মুখরিত করতে, নতুন বিতার্কিক সৃষ্টি করতে এবং তাদের আত্মবিশ্বাস, আত্মোন্নয়নে পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতা পূর্বের ন্যায় অনবদ্য ভূমিকা রাখবে।
ভিভিয়ান ঘোষ : সভাপতি, চাঁদপুর ডিবেট মুভমেন্ট (সিডিএম)।