প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
![না বলা কথা](/assets/news_photos/2023/07/16/image-35454.jpg)
১৭ মার্চ ২০১৩। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিবস। অনুষ্ঠান চলছে রহিমানগর বি.এ.বি. উচ্চ বিদ্যালয়ের হলরুমে। সাংবাদিক ফরহাদ আংকেল এলেন প্রধান শিক্ষকের কক্ষে। হাতে একটা চিঠি। বিতর্কের চিঠি। হেড পণ্ডিত বাবু ব্রজ বিহারী চক্রবর্ত্তী স্যার হলরুমে আমার কাছে এসে বললেন, কিরে তুই কি বিতর্ক করবি? কিছু না ভেবেই বললাম, জ্বি সার।
হেড স্যার কো-কারিকুলাম সংক্রান্ত যে কোনো চিঠি পেলেই সবার আগে আমাকে ডেকে পাঠান। স্যার আমাকে বললেন বিতর্ক দল গঠন করতে।
এর আগে আমার দাবি ও দরখাস্তের প্রেক্ষিতে রহিমানগর হাইস্কুল ডিবেটিং সোসাইটি (জঐঝউঝ) গঠন করা হয়। মহিউদ্দিন স্যারের অনুপ্রেরণাতে প্রতি বৃহস্পতিবার ক্লাস শেষে চলতো আমাদের বিতর্ক চর্চা।
সে বছর যেহেতু আমরা একেবারে নবীন ছিলাম সেহেতু ১টি দল বিতর্কে অংশ নেয়। আমি ১ম বক্তা, সহপাঠী বিশাখা মজুমদারকে ২য় বক্তা এবং ফাতেমা আক্তার সাথী (তৎকালীন ১০ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত) কে দলপ্রধান করে পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্কের জন্যে দল গঠন করা হলো। ২৫ মার্চ ২০১৩ প্রান্তিক পর্বের তারিখ জানিয়ে চিঠি দেয়া হলো।
মজার বিষয় হলো, আমি তখন সপ্তম শ্রেণিতে পড়ি। আব্বু, আম্মু তখনও জানতেন না যে, ২৫ তারিখে বিতর্ক। যাক অনেক কষ্টে ওনাদের রাজি করালাম। প্রতিপক্ষ হিসেবে পেলাম কচুয়ার সেরা প্রতিষ্ঠান কচুয়া সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় দলকে। মনে মনে কিছুটা ভীতিও কাজ করছিল। আমরা কচুয়ার সে প্রতিষ্ঠানকে ধরাশায়ী করি এবং জয়লাভ করি।
বিতর্কের বিষয় ছিল ‘ছাত্র রাজনীতি মানে রাজনৈতিক দলের মতাদর্শে একীভূত হয়ে কাজ করা’। সপ্তম শ্রেণির একজন ছাত্রের জন্যে বিষয়টি একেবারে সহজ ছিল না। তার ওপর প্রথম বিতর্ক।
২য় বিতর্ক অর্থাৎ অগ্রযাত্রা পর্বে বিষয় ছিলো ‘গণতন্ত্রে নেতার চেয়ে কর্মীর ভূমিকাই প্রধান’। প্রতিপক্ষ তৎকালীন চ্যাম্পিয়ন দল মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। সেই বিতর্কে আমরা হেরে যাই। কিন্তু আমাদের নম্বর বিবেচনায় রাখা হয় ওয়েটিং লিস্টে। শ্রদ্ধেয় নজরুল ইসলাম স্বপন আংকেল ফোন করলেন। জানালেন তোমরা পরবর্তী পর্বে উত্তীর্ণ হয়েছ। প্রতিপক্ষ করা হলো চাঁদপুরের আরেক হেভিওয়েট দল আল আমিন একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজকে। এরই মধ্যে মূল্যায়ন পরীক্ষা। কয়েকদিন প্রাইভেটে ক্লাস মিস করা, প্রতিষ্ঠানের অনীহা থাকা সত্ত্বেও নিজস্ব উদ্যোগে আমরা বিতর্কে অংশ নেই। এবারও বিজিত হলাম।
জীবন এক যুদ্ধক্ষেত্রের নাম। জীবন হারাতে চায় নানান অজুহাতে। কিন্তু শাহাদাত আংকেলের সেই প্রিয় উক্তি, ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া আংকেলের ভাষায় ‘যে আসে বিতর্কে সে হারে না’। এই হেরে গিয়েই আমাদের যে যাত্রা শুরু, তা আমাকে চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্কে মডারেটর হওয়ার সুযোগ পর্যন্ত করে দিয়েছিল।
সেসব কথা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখবার প্রত্যাশা করি। ২০২০ সালে সকল প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও করোনা মহামারির কারণে যেখানে জনজীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে, সেই সময়ে সকল কিছুর মতো থেমে যায় বিতর্ক আন্দোলনও। আমরা আশাবাদী অতীতের চাইতেই আলোকিত হবে আমাদের আন্দোলন। স্বপ্ন দেখি চাঁদপুর শহর হবে বিতর্কের রাজধানী। আর আমাদের সে শহরের কর্ণধার হবেন কাজী শাহাদাত আংকেল। প্রিয় আংকেলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু এখন সবচেয়ে বেশি কাম্য। এই প্রত্যাশায় আপাতত ইতি টানলাম। (চলবে)
মেহেদী হাসান সোহেল : দলপ্রধান, প্রতিশ্রুতিশীল বির্তাকিক ও মডারেটর, পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতা; সদস্য, সিকেডিফ, কচুয়া উপজেলা।