বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৩, ০০:০০

পেশীর জোর নয়, যুক্তির জোর চাই
মোঃ আবদুল্লাহ আল নোমান

বিতর্ক, বিতার্কিক এবং বিতর্কপ্রেমী শব্দ তিনটি নিয়ে গঠিত একটি বিতর্কমালা। এই মালার বন্ধনটা এতোটাই শক্তিশালী যে, আপনি শিক্ষার্থী থাকাবস্থায় তার প্রেমে পড়লে বৃদ্ধ বয়সেও মন চাইবে মঞ্চে গিয়ে আরেকবার বিতর্ক করে আসি বা জমজমাট বিতর্কটা শুনে আসি। এই শুদ্ধচর্চার বিতর্ক বাগানের দক্ষ মালি হয়ে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতা। যেখানে রয়েছে নিঃস্বার্থ নিবেদিত কিছু তরুণ।

আমাদের সমাজ মনে করে, শিক্ষার্থীদের কেবলমাত্র এবং একমাত্র কাজ পড়াশোনা করা। পড়াশোনা ছাড়া তাদের কাজ মূল্যহীন। ধরুন, শিক্ষার মূল্য ১ এবং শিক্ষা ব্যতীত বাকি সকল কাজের মূল্য ০। এখন কোনো শিক্ষার্থী যদি পড়াশোনা না করে বাকি যত কাজ আছে তা করে, উদাহরণ : বিতর্ক, রোভারিং, কবিতা আবৃত্তি, নাচ ইত্যাদি। তাহলে ওই শিক্ষার্থীর মূল্য হবে ০। আবার ওই শিক্ষার্থী যদি পড়াশোনা করে এবং পাশাপাশি বিতর্ক করে, তাহলে তার মূল্য ১০, আবার রোভারিং করলে ১০০, আবার কবিতা আবৃত্তি জানা থাকলে ১০০০। অর্থাৎ ১ সংখ্যাটির ডানে যত শূন্য বসাতে পারবেন তার মান তত বৃদ্ধি পাবে। শুধুমাত্র এই বিতর্ক, রোভারিং এবং সাংস্কৃতিক সনদ থাকাতে ঢাকার বাড্ডাতে একটি কলেজে চাকুরি হয়েছিল আমার।

বিতর্কের স্বপ্নটা দেখেছিলাম ২০০৯ সালে। জেলাব্যাপী একটি বিতর্ক প্রতিযোগিতা হবে, তার জন্যে আমাদের বিদ্যালয়ে একটি বিতর্ক দল গঠন করা হবে, বিভিন্ন যাচাই বাছাই করে আমাকে ২য় বক্তা নির্বাচন করা হলো। মহান আল্লাহ হয়ত চান নি আমি তখন বিতর্ক করি, তাই দীর্ঘ একটা সময় আমাকে অসুস্থ থাকতে হয়েছিল।

২০১০ সাল। এসএসসি পাসের পর চাঁদপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হলাম। আন্তঃবিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতা শুরু হলো। আমার স্পষ্ট মনে আছে, আমি ক্লাস শেষ করে শুধুমাত্র বিতর্ক দেখার জন্য অনেকটা সময় ধরে বসে থাকতাম।

২০১২ সাল। এইচএসসি পাসের পর চাঁদপুর সরকারি কলেজে গণিত বিভাগে ভর্তি হলাম। শুনলাম ৬ষ্ঠ পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিটি বিভাগের ন্যায় আমাদের বিভাগেও একটি বিতর্ক দল তৈরি করতে হবে। বড় ভাই মোঃ সালাহ উদ্দিন ভাইয়ের পরিচর্যায় বিভিন্ন পরীক্ষা শেষে বেশ ক'জন শিক্ষার্থীর মাঝ থেকে আমাকে দলনেতা নির্বাচন করলেন। সেদিন যতটা খুশি হয়েছিলাম, তার চেয়েও বেশি চিন্তায় পড়ে গেলাম। এতোদিন স্বপ্ন দখতাম বিতর্ক করবো, আর এখন একটি দলের নেতৃত্ব আমার কাছে।

আমার স্পষ্ট মনে আছে, আমি আয়নার সামনে, খোলা মাঠে, মোবাইলে রেকর্ড করে, পড়ার টেবিলে প্র্যাকটিস করতাম। চলে এলো সেই দিনটি। প্রতিপক্ষ ছিল বাবুরহাট স্কুল এন্ড কলেজ। খুব সুন্দর একটি বিতর্ক হলো, আমরা জয়লাভ করলাম। আমি শ্রেষ্ঠ বক্তা নির্বাচিত হলাম। আত্মবিশ্বাসটা আরো বেড়ে গেলো। মনে হলো, আমি পারবো।

দেখতে দেখতে কোয়ার্টার ফাইনালে আমরা। প্রতিপক্ষ ফরিদগঞ্জ লেখক ফোরাম। যারা ইতিমধ্যে দুবার চ্যাম্পিয়ন। আমরা ৪ ব্যবধানে হেরে গেলাম এবং ফরিদগঞ্জ লেখক ফোরাম সেবারও চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। চাঁদপুর জেলায় আমরা সেরা ৫ এবং চাঁদপুর সরকারি কলেজে আমরা সেরা হয়েছিলাম।

৭ম পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় শুরুটা দারুণ হলো। দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম সেমি-ফাইনালে। প্রতিপক্ষ চাঁদপুর সরকারি মহিলা কলেজ। খুবই জমজমাট একটি বিতর্ক হলো, উপস্থিত অনেকেই অভিনন্দন জানালো, কেউ কেউ তো সেবার আসরের চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে অগ্রিম শুভেচ্ছা জানালো। ফলাফলে অপ্রত্যাশিতভাবে আমরা পয়েন্ট ৫ (০.৫) ব্যাবধানে হেরে গেলাম। খুব দুঃখ পেয়েছিলাম। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম জীবনে আর বিতর্কই করবো না। অনেক কান্না করেছিলাম। তখন মনে পড়ে গেলো, ধ্বংসস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে যে বিজয়ের ঘোষণা দিতে পারে সে-ই প্রকৃত যোদ্ধা। সেবার জেলায় সেরা ৩ এবং চাঁদপুর সরকারি কলেজে সেরা হয়েছিলাম। পরের বছর শুরু হলো ৮ম পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতা। দেখতে দেখতে আমরা ফাইনালে। প্রতিপক্ষ চাঁদপুর সরকারি কলেজর 'গ' দল। ৫ তারিখে অনার্স তয় বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে, ৬ তারিখ কলেজে গেলাম স্যারদের দোয়া আনার জন্য। সেদিন শুধু দোয়া নয়, একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সাক্ষী হলাম এবং কান্না করতে করতে আমরা বাসায় আসলাম। তখনও বিতর্কের স্ক্রীপ্ট লিখা হয়নি। লটারির মাধ্যমে বিষয়ের কোন্ পক্ষে পড়বো, কোন্ পয়েন্ট দিয়ে শুরু করবো, কী করবো বুঝতে পারি নি। শুধু একটি প্রচণ্ড জিদ কাজ করছিল। নির্ঘুম রাত কাটিয়ে আমরা বিতর্কের মঞ্চে। অত্যন্ত জমজমাট একটি বিতর্ক হলো। ফলাফল ঘোষণায় শ্রদ্ধেয় রাজন দা। দেখা গেল আমরা চ্যাম্পিয়ন এবং আমি শ্রেষ্ঠ বক্তা। সেদিন আমি এবং আমার সহযোদ্ধারা খুব কেঁদেছিলাম। মনে হলো, এখন যদি আমার বাবা-মা এখানে থাকতেন কতোই খুশি হতেন। যাদের কথা না বললেই নয়, আমার সহযোদ্ধা সুব্রত দেবনাথ এবং মৌসুমী সাহা। এক সাথেই পড়াশোনা করেছি। আমাদের মাঝে আত্মার সম্পর্ক। শুধুমাত্র এই বিতর্কের জন্যে আমরা তিনজন মতলব, হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জে সঠিক তথ্যের জন্যে ছুটে বেড়িয়েছি। তখন আমাদের কারোরই এনড্রয়েড মোবাইল ফোন ছিল না। আমাদের বলা হয় পরিশ্রমী বিতার্কিক। কষ্ট করলে যে কেষ্ট মেলে তার জ্বলন্ত প্রমাণ আমরা তিন জন। জাতীয় শিশু বিতর্কে অংশগ্রহণ করলাম, সেখানেও চ্যাম্পিয়ন এবং শ্রেষ্ঠ বক্তা হলাম। আজ আমি বলতেই পারি, আমি বিতার্কিক। আমি চ্যাম্পিয়ন বিতার্কিক।

মোঃ আবদুল্লাহ আল নোমান : ৮ম পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতায় কলেজ পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন দলের দলপ্রধান ও শ্রেষ্ঠ বক্তা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়