প্রকাশ : ০২ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০
আঁধার রাত
লঞ্চের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছি। মুক্ত বিমল শান্ত পরিবেশ। একরাশ মোলায়েম স্বচ্ছ বাতাস কেটে যাচ্ছে গা ঘেঁষে। বুলিয়ে দিচ্ছে কোমল পরশ। বাতাসের অবগাহনে প্রফুল্ল হয়ে ওঠে তনুমন। এমন নির্মলতা বোধ হয় আগে কখনো অনুভবের চেষ্টাও করিনি। যেন আজই প্রথম বাতাসের সাথে পরিচিত হলাম। হৃদয়তো জানা অজানা সব যন্ত্রণাকে লোমকূপের মধ্য দিয়ে মনরাজ্যে আবির্ভূত হয়ে তাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে বহুদূরে।
বাতাস যে মানুষের এত কাছের হতে পারে এতটা ছন্দময়ী হতে পারে তা যেন আজ প্রথম বুঝলাম। কী চমৎকার তার অদেখা অবয়ব! কী নির্লোভা তার বিস্তৃতি! হায়, মানুষও যদি ওমন হতো!
মাথা উঁচিয়ে আকাশের দিকে তাকালাম; টুকরো টুকরো মেঘ জমে আছে। তারাশূন্য রাত। হয়ত মেঘের নিচে চাপা পড়ে খুব করে কাতরাচ্ছে তারারা। হয়তবা অন্যান্য রাতের মত আজও ছড়াতে চায় আলো কিন্তু মেঘরাও নাছোড়বান্দা সন্ধ্যার আঁধার নামতেই সেই যে টুঁটি চেপে ধরল আর ছাড়ার নাম নেই।
কিন্তু চাঁদ মামা কোথায়? আবার একটু ভালো করে তাকালাম; কই চাঁদটাকেতো কোথাও দেখতেই পাচ্ছি না! তাহলে কি তারাদের মত সেও মেঘের জালে বন্দি! নাকি আমাদের ওপর রাগ করে বালিশ পেতে ঘুমিয়ে পড়েছে!
হলেও হতে পারে; আগেতো সন্ধ্যা নামলেই ছেলে-মেয়েরা নেচে গেয়ে চাঁদকে বরণ করত। হৈ হুল্লোড় করে যে যার মত চাঁদকে ‘চুরি’ করে পালাত!
চাঁদের বুড়ির গপ্প করত। মায়েরা তার শিশুদের আঁচলে জড়িয়ে উঠোনে নেমে চাঁদের দিকে তাকিয়ে গাইত ‘আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা, চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা, ধান কাটলে কুঁড়ো দেব, মাছ কাটলে মুড়ো দেব’ আরো কত কী ছন্দ! কিন্তু সময় বদলানোর সাথে সাথে সব যেন ভুলে গেছে মানুষ। এখন আর কেউ চাঁদকে মামা বলে ডাকে না, চাঁদ দেখে শিশুরা আনন্দে নৃত্যে মেতে ওঠে না; তাই হয়ত চাঁদ মামা বেজায় চটে আছেন স্বার্থপর পৃথিবীর মানুষগুলোর ওপর। আগের মত আর আলো ছড়াবেন না বলে গোঁ ধরেছেন। সত্যি সত্যি যদি এমন হয় তবে কী হবে?
যতদিন বিদ্যুৎ ছিলো না ততদিন রাত জেগে জোৎস্নার চাঁদ দেখে মন ভরাতাম, কল্পনার রাজ্যে ভর করে এঁকে যেতাম কত শত স্বপ্ন ছবি। তখন যেন চাঁদই ছিলো আমাদের মনোজগৎকে সজীব রাখার অন্যতম অনুষঙ্গ। আর এখন; আমাদের সব আছে, বিদ্যুতের কৃত্রিম আলোকচ্ছটা দিয়ে নিজেদের মন মানসকে সচল রাখছি, ল্যাম্পপোস্টের আলোয় পথ চলছি। তা ছাড়া এত ব্যস্ততার মধ্যে আমাদের চন্দ্রসুখ উপভোগের সময়ই বা কোথায়? সুতরাং এখন চাঁদের কী প্রয়োজন? যেটুকু বাকি আছে তা হলো চাঁদটাকে ডিজিটাল উপায়ে প্যাকেটজাত করে যাদু ঘরের স্বচ্ছ আয়নায় বাক্সবন্দী করা।
অন্তত যাতে পরবর্তী প্রজন্ম জানতে পারে চাঁদ নামে পৃথিবীর একটা উপগ্রহ ছিলো যাকে এখন শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের ভিআইপি গ্যালারিতে স্থান দেয়া হয়েছে। চল, ওটাকে এবার একটু দেখে আসা যাক!
হায়রে বিকারগ্রস্ত মানুষ? থুক্কু, বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ!