প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
আজ রাফাতের মনটি খুব খারাপ। তার মনে হচ্ছে যেনো তার চেয়ে অসহায় কেউ নেই। তার আপনজন বলতে কেউ নেই। কেউ তার ভালো চায় না। এই পৃথিবীতে সেই সবচেয়ে দুঃখী মানুষ। সে যেই কাজ করবে তাতেই সব সমস্যা থাকবে। পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যার্থ মানুষটিও যেনো সেই।
বারান্দায় দাঁড়িয়ে এসবই ভাবছে রাফাত। স্কুল থেকে ফেরার পথে একটা পাখির দোকান আছে। মুরগী থেকে শুরু করে বাবুই, ঘুঘুসহ কোয়েল পাখিও সেখানে পাওয়া যায়। রাফাতের একটি আলাদা অনুরাগ রয়েছে পশু পাখির প্রতি।
তবে সে এগুলোর দেখাশোনা করতে পারে না। এর আগে তার মামা তার জন্য পাঁচ জোড়া কোয়েল পাখি এনেছিল। একে একে সবগুলা মরে যেতে থাকে। শেষে একটা মাদি কোয়েল ছিল। তার স্বাস্থ্য প্রথম থেকেই ভালো ছিল। অনেকদিন সেটা ডিম দিয়েছিল। পরে একদিন খাঁচা খোলা রাখা ছিল। শিকারী পাখি এসে নিয়ে গিয়েছিল তাকে।
এরপর থেকে অনেকদিন তার উপর বিধিনিষেধ ছিল তার আম্মুর। কারণ পাখিগুলোর ময়লা খাঁচার চারিপাশে ছড়িয়ে যায়। আর তা রাফাতের আম্মুকেই পরিষ্কার করতে হয়। যাবতীয় যত্নও তার আম্মুকেও নিতে হতো। কিন্তু আজ স্কুল থেকে ফেরার পথে ঐ দোকানের একটা শালিক পাখির ছানা তাকে খুব আকৃষ্ট করায় সে তা তার বহুদিনের জমানো টাকা দিয়ে কিনে ফেলে। কিনার সময় একদমই হুশ ছিল না তার আম্মুর ব্যাপারে। বাসায় আসার পর একটা তুলকালাম হয়ে গেল।
তার আম্মু বলতে শুরু করেন, ‘তোর সাহস কম না। এতগুলো পাখি মারা গেলো তোর জন্য। তুই তো যত্ন নিতে পারিসই না। উল্টো আমাকে অতিষ্ঠ করে ফেলেছিস তোর এক শখ নিয়ে। এখন যদি এই পাখির ছানাটারে ফেরত দিয়া না আসিস তবে আমি তোকেই বের করে দিবো ঘর থেকে।’
আসলে রাফাতের আম্মুর রাগটা শুধু তার ছেলের শখের জন্য নয়। রাফাত তার এই শখের পাখিগুলোর সাথে আবার অদ্ভুত সব কাজও করে। যেমন : পুরো ঘর তাদের তাড়া করে বেড়ায়, তাদের চামচ দিয়ে জোর করে খাইয়ে দেয়, পাখিগুলোকে উঁচু স্থান থেকে নিচে ফেলে দেয় - আরো কত কি! তার এসব কাজের জন্য তার আম্মু পুরো অতিষ্ঠ হয়ে গেছেন। কারণ পাখিগুলোর পালক আর পায়খানা দিয়ে পুরো ঘর ভরে গিয়েছে। তাই আজ তিনি কোনোভাবেই রাফাতের এমন শখকে মেনে নিবেন না।
রাফাত শেষে নিরুপায় হয়ে স্কুলের পোষাক ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে শালিক পাখির ছানাটাকে নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল বাসা থেকে।তবে তার মন কোনোভাবেই সায় দিচ্ছিল না বাচ্চাটাকে ফেরত দেয়াতে। কারণ এক সে অনেকদিন বাদে একটা পাখির ছানা কিনেছে আর দুই হলো শালিক ছানাটা তাকে এতটুকু সময়েই পছন্দ করে নিয়েছে।
রাফাত একটা টানাপোড়েনের মাঝে পড়ে গেলো। একদিকে তার সাধারণ জীবন আর অন্যদিকে তার শখ। আশিক হঠাৎই শক্ত হয়ে যায়। না, তার শখ কখনোই তার জীবনকে এত প্রকটভাবে প্রভাবিত করতে পারবে না। কখখনো না। হয় সে দুটোকেই গ্রহণ করবে আর নয়তো সাধারণ জীবনে ফিরে আসবে। কারণ তার শখ কখনোই তাকে বড় করতে পারবে না।
সে যত শখকে আগলে রাখতে চাইবে ততোই সে দূরে সরতে থাকবে তার লক্ষ্যের কেন্দ্র থেকে। তাই সে সিদ্ধান্ত নেয়, এই ছানাকে সে এমন একজনের কাছে দিবে যে এর সঠিক পরিচর্চা করতে পারবে। কারণ যদি সে একে মুক্ত আকাশে ছেড়ে তবে তার জীবনে নেমে আসবে ঘোর অমানিশা। আর যদি তাকে দোকানে ফেরত দেয় তবে একে বরণ করতে হবে পরাধীনতাকে।
তার ভালোবাসার ছানাকে সে এই দুটির কোনোটির দিকেই ঠেলে দিতে পারে না। তাই সে ভাবতে থাকে কার কাছে ছানাটা সবথেকে বেশি নিরাপদ থাকবে। তার একজনের নাম মনে পড়ে যায় তৎক্ষনাৎ। রফিক ভাই। হ্যাঁ এই ছানাটির সবথেকে বেশি যত্ন রফিক ভাইই নিতে পারবে। তাই সে হাঁটা ধরে রফিক ভাইয়ের বাসার উদ্দেশ্যে।
রফিক ভাইয়ের সাথে কথা বলে শালিক ছানাকে দিয়ে আসে রাফাত। আসলে তিনি হচ্ছেন রাফাতের প্রিয় মানুষদের একজন। তিনিও পশু পাখিদের ভালোবাসেন। তবে তিনি শুধু অসুস্থ বা উদ্ধার করা কিংবা অন্যদের থেকে পাওয়া পশু পাখিদেরই যত্ন নেন। এরপর সঠিক সময়ে ছেড়ে দেন।
রাফাত এতক্ষণ আজ সারাদিনের কাজগুলোর কথাই মনে করছিল। ভাগ্যকে কত সহজেই না বরণ করতে হয়েছে তাকে। এভাবেই তো জীবন এগিয়ে চলে আপন গতিতে। এসব মেনেই তো পথ চলতে হয় সুদূর ভবিষ্যতের। রাফাত আবার শক্ত হয়ে যায়।