শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০

জঞ্জাল জীবন
মোহাম্মদ তাইয়্যেব হোসাইন

শুক্রবার পবিত্র দিন গরিবের হজে¦র দিন আবার কারো কাছে ভীষণ কষ্টের দিনও বটে। বিশেষ করে ব্যাচেলরদের কষ্টের সীমা থাকে না শুক্রবারের দিন। রুম পরিষ্কার, ছোট্ট ছোট্ট জমে থাকা কাজের সমাধান, পুরো সপ্তাহ জুড়ে পরিহিত জামাকাপড় ধোঁয়া, খাওয়া দাওয়া মহা সমস্যা। শুক্রবার আসলেই বুয়ার ফোন নাম্বার বন্ধ থাকে সেদিন শত চেষ্টা করেও বুয়ার খোজ পাওয়া মুশকিল হয়ে যায়। শত শত কাজ করার পরে নিজেই রান্না করে খেতে হয়।

শুক্রবার আসলেই আব্দুর রহমান ভাই আমাকে দাওয়াত দেন। মাসের চারটা শুক্রবার প্রায় সময় ওনার বাসায় আমার দুপুরের অথবা রাতের খাবার খাওয়া হয়। শুক্রবার অন্যান্য ব্যাচেলর মতো আমার শুক্রবার ভিন্ন হয়ে থাকে, কারণ আমার আছে আব্দুর রহমান ভাই নিশ্চিতে খাওয়া দাওয়া করা যায়। আমার ম্যাচে বুয়া না আসলেও আমার সমস্যা নেই। জুমার নামাজ শেষে সাহেবের মতো আব্দুর রহমান ভাইয়ের বাসায় গিয়ে দুপুরের বুড়ি ভোজন করব। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বরাবরের মতোই আব্দুর রহমান ভাই ফোন দিলেন আগামীকাল শুক্রবার ওনার বাসায় বই পড়া প্রতিযোগিতা হবে বিকেল তিনটা উপস্থিত থাকার জন্য বলছেন। আমি মহা খুশি আগামীকাল আব্দুর রহমান ভাইয়ের বাসায় বই পড়া প্রতিযোগিতা আছে। যথা সময়ের চেয়ে এক ঘন্টা আগেই দুইটা বাজে যাবো। তাহলে দুপুরের খাওয়া আব্দুর রহমান ভাইয়ের সাথে খেতে পারবো। বই পড়া প্রতিযোগিতা আর শুক্রবার দুপুরের খাওয়া না খেতেই আনন্দে আত্মহারা হয়ে চোখ ছোট হয়ে কখন যে ঘুমিয়ে গিয়েছি মনেই নাই। সকালে সূর্য পূর্বের জানালা দিয়ে একদম আমার চোখে সকাল বেলার লাল টুকটুকে সূর্য ঘোষের হোটেলের রুটির মতো মন চায় এখনই খেয়ে ফেলি। সূর্যোদয় সময় এত নম্র ভদ্র হয়ে উদয় হয় মনে প্রশান্তি লাগে সূর্য নিয়ে কবিতা ছড়া মনের অজান্তেই বের হয়। কিন্তু দুপুরে সূর্যের তেজস্ক্রিয়তা প্রখরতা আসল রূপ দেখা যায়। সূর্যের সাথে আমাদের মুজাহিদ ভাইয়ের সাথে মিল আছে এতো মিষ্টিমুখে কথা বলে আবার হঠাৎ রেগে যান। সূর্য নিয়ে নানান কথাবার্তা মানুষের সাথে সূর্যের মিল অমিল ইত্যাদি চিন্তা করতে করতে সকালের নাস্তার কথা ভুলে গিয়েছি। যাক ভালো হয়েছে বুয়া আসে নাই রান্না হয় নাই আমার খুদা নাই গোসল করে জুমার নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে মসজিদে দ্বিতীয় কাতারে বসে হুজুরের ওয়াজ শুনতেছি। মধুর কন্ঠ কুরআন তেলাওয়াত মাশাল্লাহ্ একবারে মক্কা মদিনা মসজিদের হুজুরের মতো। কুরআন শরীফের আয়াত ইয়াআইয়ুহাল্লাজিনা ... বলে যে টান দিয়েছে ঠিক তখনই আমার পেটের ভিতরে মুচড়ে উঠছে । গতকাল রাত খাবার খাওয়া হয় নাই সকালে সূর্যোদয় নিয়ে নানান চিন্তামূখী ভাবনা সকালবেলার নাস্তা করতে ভুলে গেছি। হুজুরের কুরআন তেলাওয়াত আয়াতের শেষ অংশ ওয়া আহছানু তা' ওয়িলা-। উচ্চারিত হওয়ার সাথেই আমি অন্য জগতে হারিয়ে গেছি এতো সুন্দর কুরআন তেলাওয়াত বাংলা অর্থ খুব সুন্দর করে বললেন। থেমে থেমে কথা বলেন মানুষের মস্তিষ্কের থেকে হৃদয়ে অব্দি কথা পৌঁছানোর জন্য যতটুকু সময় লাগে ঠিক ততটুকু থেমেই কথা বলেন। মসজিদের সবাই মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে হুজুর কুরআন থেকে মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিচ্ছেন মানুষ গায়ে মেখে নিচ্ছে। দুই রাকাত নামাজে বেশ সুন্দর কুরআন তেলাওয়াত করছেন। অনর্গল টান টান ভাব ছিলো মনে হয়েছিল এখনই রুকুতে চলে যাবে টান টান মুহুর্তের মধ্য দিয়ে জুমার নামাজ শেষ। আমার চোখে মুখে খুদা মোয়াজ্জিন সাহেব মাইক্রোফোনে বলে দিয়েছেন বাকি নামাজ শেষ দোয়া আছে এবং তবররুক নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছেন। আমার এক দুই পিছ জিলাপি দিয়ে কিছু হবে না অনেক খুদা। অনেক খুদা দুইজন তিনজনের খাবার আমি একাই খেতে পারব এমন খুদা নিয়ে আব্দুর রহমান ভাইয়ের বাসার দিকে রওনা দিলাম।

পেটের সমস্ত ক্ষুধা উদার করে সালাম দিলাম খাবার না খেতেই তৃপ্তির ঢেকুর দিলাম। খোশ গল্প শেষে আব্দুর রহমান ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম দুপুরের খাবার খেয়েছেন,ভাইয়ের পূর্ণিমার চাঁদের মতো উজ্জ্বল মুখখানি মেঘে ঢেকে যাওয়া চাঁদ মতো হয়ে গেছে মলিন মুখে না বলে দিলেন। আমি নিশ্চিত হয়ে গেলাম আজকে রান্না হয় নাই তবুও উনি আমাকে সকালবেলায় রেখে যাওয়া দুটি রুটি ভাজি দিয়েছেন । যাক রুটি ভাজি খাওয়াতে মোটামুটি খুদা নিবারণ হয়েছে।

বই পড়ার পর এখন একদম খুদা নাই বই পাঠ অনুষ্ঠান কিছুক্ষণের মধ্যেই শেষ। সন্ধ্যা হয়ে আসছে পরিচিত জাহিদ ভাই উনি সমাজ সেবা করে বেড়ান হঠাৎ মনে পরার সাথে সাথেই ফোন দিয়েছি। সন্ধ্যায় নামাজ পড়ে মসজিদের সামনে অপেক্ষা করতে বললেন যথাসময়ের আগ মুহূর্তে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। উনার শরীরের অবয়ব আমার দেখা আর কেউ নাই দেখতে কুস্তি খেলোয়াড় থেকে কম হবে না। খাওয়া দাওয়াতে সমস্যা উনাকে বলার সাথেই উনার পরিচিত একজনের বাসায় রওয়ানা দিলাম বেশ কয়েকবার মনে হলো আমার রাতের খাবার আজকে কপালে নাই তবুও নিরবে হেটে চলছি। বেশকিছু পথ যাওয়ার পরেই এবার বলে ফেলছি ভাই "আমরা যার বাসা যাই তাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেন রাতে খাওয়া যাবে কিনা।"

জাহিদ ভাই কথার মধ্যে চাপ দিয়ে বলেন উনি স্থানীয় সবসময়ই খাওয়া দাওয়া ব্যবস্থা থাকে। আমার কথাটা শুনে মন ভরে নাই তবুও হেটে চলছি বাসার কাছাকাছি এসে এবার ফোন দিলেন যার বাসায় আসছি উনি হাসপাতালে উনার ফুফাতো ভাইয়ের ছেলে অসুস্থ। আমার হাসি উজ্জ্বল মলিন মুখ দাঁত দেখিয়ে হাসি দিয়ে জাহিদ ভাইকে আমার কাছে লজ্জা থেকে রক্ষা করলাম। অবয়ব দিলাম ভাই আমি বাসায় গিয়ে রান্না করে খেয়ে নিবো। কিন্তু রান্না করার মতো কিছুই নাই চোখে মুখে ভীষণ ক্লান্তির চাপ কেউ দেখে না। মনে হয় কেউ পিছন থেকে ডেকে বলে এই ছেলে খাবার খেয়ে যাও, বেশ কয়েক বার পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখছি । হটাৎ ফোন আসল যার বাসা খাবার খাওয়ার জন্য গিয়েছি, শুকরিয়া আদায় করি তৃপ্তি ফুরিয়ে খাবার খেতে হবে। যা দিবে তাই খাব গলা সমান গলদ গলন করব সামনে আরও কয়েক দিন না খেয়ে থাকতে হবে পরিস্থিতি মোটেও ভালো না। এসব মনে মনে চিন্তা করতে করতে ফোন কেটে গেল আবার ফোন আসল এবার সাথে সাথে রিসিভ করলাম। রিসিভ করে যা শুনলাম একদম হাটু গেড়ে বসে গেলাম । প্রথমে জিজ্ঞেস করলেন টাকা আছে?

আমি নির্দ্বিধায় বললাম হ্যাঁ। তারপরই বললেন উনার ফুফাতো ভাইয়ের ছেলে হাসপাতালে ভর্তি মুরগির গোস্ত অথবা মাছ দিয়ে খাবার খেতে চায়। আমাকে হোটেল থেকে নিয়ে আসতে বললেন টাকা দিয়ে দিবেন হাসপাতালে। আমি আনন্দের সাথে বললাম অবশ্যই আমি নিয়ে আসতেছি। নিজে খেতে না পারলেও অন্যকে খাওয়ানোর মাঝে আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায় ছোট্ট শিশু খাবে এতেই আমার খাওয়া হয়ে যাবে। মনে মনে শিশুর খাওয়ার দৃশ্য চোখে না দেখেও মস্তিষ্কে ভালো করেই উপলব্দি করতেছি অসুখের মুখে একটু ভালো তরকারি দিয়ে খাবার খেতে পারলে অসুখ কমে যায়। শিশুর মুরগির গোস্ত দিয়ে ভাত খাওয়ার দৃশ্য মস্তিষ্ক ধারণ করলেও আমার পেট ভরে যায়। মুরগির গোস্ত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর অনেক জোরাজুরি করে টাকা ফেরত দিয়েছে। আমি কোনভাবে টাকা নিতে চাইনি উনি রাগ করবেন না নিলে তাই নিলাম। রাত প্রায় এগারোটা বাজে বাসায় গিয়ে ঘুম দিতে হবে সারাদিন খাবার খাওয়ার জন্য ঘুরে শহরের সমস্ত বালু শরীরে মেখে নিয়েছি বুক পকেটে টাকার বদলে বালু জমে আছে। রুমে প্রবেশ করা মাত্র সাবেক ম্যাচ পরিচালক মিনহাজের চিল্লাচিল্লি দমকা ধমকি আমি নিস্তব্ধ নিস্তেজ দেহ নিয়ে দাড়িয়ে আছি।

মিল ম্যানেজার কে ধমকাচ্ছে কেনো রান্না হলো না? ম্যানেজার ভয়ে নিচু গলায় বলে দিয়েছে তাইয়্যেব টাকা দেয় নাই তাই বাজার হয় না রান্নাবান্না হয় নাই। মিনহাজ আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে,আমার এই মুহূর্তে রুমে প্রবেশ করা ঠিক হবে না দুই পা পিছনে এসে রুমের বাইরে দাড়িয়ে সব শুনতেছি। বেশ কিছুক্ষণ শুনছি পরিস্থিতি বিশৃঙ্খল হয়ে উঠছে আমি অপরাধীর মতোই রুমে প্রবেশ করে সালাম দিলাম সালামের জবাব কেউ দিলো না। মনে হয় আমি আগুনে পানি ঢেলে দিয়েছি। মিনহাজ ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলছে " যে টাকা দিবে না তার খাবার বন্ধ রাখবেন। " এই কথা শুনে বজ্রপাতের আঘাতের মতো চমকে উঠছে শরীর লোমকূপ থেকে ঘাম বের হয়। মিনহাজের সাথে আমার অনেক দিনের সম্পর্ক এক ক্লাস জুনিয়র তারপরও অনেক সম্মান করে আদর্শিক আত্মার সম্পর্ক। সে আমার পারিবারিক আমার সম্পর্কে বিস্তারিত জানে তারপরও এমন কথা বলছে। চোখে শিশির বিন্দু জল জমে আছে কিছুক্ষণ পরেই শ্রাবণের বৃষ্টির মতো অশ্রু গড়িয়ে পড়বে। বুকের ভিতরে যন্ত্রণা করে শরীরে আঘাত করে নাই ভাগ্য ভালো রুম মেম্বার সবাই নিস্তেজ হয়ে আছে। নিঝুম রাত চাঁদের আলো চোখের অশ্রু দিয়ে মেখে খেতে খুব স্বাদ হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়