শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

মধ্যবিত্ত
আফিফ আহমেদ

জীবনটা যে কতই না কষ্টের হতে পারে তা মাঝে মাঝেই টের পাই, বিশেষ করে যখন মা-বাবার কাছ থেকে প্রয়োজনে টাকা চাই। তবে দোষটা তাদেরকে দেয়া কখনোই ঠিক হবেনা। কারণ সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও যখন আমাদের চাহিদা মেটাতে পারেনা, তখন আমাদের চেয়ে তারাই বেশি কষ্ট পায়।

তাদের নিয়মিত কথা, কিছুদিন আগেইতো টাকা দিলাম, আবার কোথা থেকে দেই? (কথাটা শুনতে অবশ্য ভালোই লাগে)। ফোনের ওপাশ থেকে কান্নার আওয়াজটা হয়তো শোনা যায়না, তবে তাদের ব্যর্থতার বুকফাটা আর্তনাদটা ঠিকই অনুভব করা যায়। এক পর্যায়ে অভিমান করে হয়তো কিছু না বলেই ফোনটা কেটে দেই। তবে তাদের বুঝতে বাকি থাকেনা যে, ছেলে কেনো এভাবে কলটা কেটে দিলো...!!

ঘন্টা খানেক পরেই বিকাশ থেকে সেই পরিচিত মেসেজ (Cash In Tk 1,000.00 from 017******** successfu­l.Fee Tk 0.00. Balance Tk **. TrxID.......) এটি আসে। মেসেজ পেয়ে খুশি হলেও নিরবে ভাবি কোথায় থেকে কেমনে দিলো টাকা?

যাই হোক, কষ্ট হলেও যেভাবে সম্ভব ম্যানেজ করে পাঠায়। কারণ তারা স্বপ্ন দেখে তাদের ছেলে ডিপ্লোমায় পড়ে ইন্জিনিয়ার হবে। তাই পড়াশুনা করতে তো টাকা লাগবেই। আর আমরা যারা এই মধ্যবিত্ত স্থানটিতে আছি সবাই মা-বাবার কষ্টটা একটু হলেও বুঝি।

তাই বন্ধুদের সাথে রানার প্লাজা বা নিউ মার্কেটে গেলেও নিজেদের কাপড় কেনার জন্য সেই পরিচিত স্টেশন বাজারকেই বেঁছে নেই। এক্ষেত্রে বন্ধুদের চেয়ে আমাদের সময় একটু বেশি লাগে। সবার সাথে যাতে মেনে চলা যায়, এই ভেবে যাচাই-বাছাইয়ে তো একটু সময় লাগেই।

খাবার-দাবারের বেলায় আমাদের ভাগ্যে কখনই চাইনিজ বা ফাস্টফুড জোঠেনা। প্রকৃত ব্যাপারটা গোপন রেখে আমরা এগুলোকে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর মনে করি। সকালের খাবার টাকাটা বাঁচানোর জন্য অনেক সময় ঘুমেই কেটে দেই, নাস্তা করলেও অল্প খরচেই সেড়ে নেই। দুপুর খাবার ২০ টাকা, আর রাতের খাবার ১৬ টাকার খাবার দিয়েই অনায়াসেই দিন পার করে দিই। এতে কেউ কিছু বললেও আমি কারো ধার ধারিনা।

কারণ আমরা জানি, আজ যারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে আছেন, তারাও একসময় এই খাবারগুলোই খেয়ে গেছেন। আরেকটা চরম সত্য হচ্ছে, মেয়েদের পেছনে টাকা ব্যয় না করার কারণে অনেক সময় যোগ্যতা থাকা সত্বেও মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের ভাগ্যে প্রেম জুটেনা। সত্যটা স্বীকার করলেও আমরা বলি, পলিটেকনিক লাইফে প্রেম করা যাবে না। ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠিত হতে হলে বেশি করে পড়াশোনা করা দরকার।

তাই রাত জেগে ফোনে কথা বলার মত সময় আমাদের নেই। এখানে কিন্তু ফ্লেক্সি লোডের ব্যাপার­টা ও গোপন। সত্যি কথা বলতে কি, ১০ টাকা বা ২০ টাকার উপর ফ্লেক্সি দেয়ার সাহস সাধারণত মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের হয়না। তবে কিভাবে সবার সাথে মেনে চলতে হয়, সেটা আমাদের ভালোভাবেই জানা আছে।

বাবা চালায় বাটন মোবাইল, যেটাতে সকালে চার্জ দিলে বিকেলেই নাই। আর আমাদের কিনে দেয় দামি স্মার্ট মোবাইল। ক্যাম্পাসের ওয়াইফাই সুুবিধা দিয়ে আমরা ইন্টারনেট, ফেসবুক চালাই। ক্যাম্পাসের বাইরে থাকলে জিরো ফেসবুকে সম্পর্কে কেউ কিছু বললে আমাদের যুক্তি থাকে, মাঝে মাঝে হঠাৎ করেই চোখের সামনে খারাপ ছবি চলে আসে, সেগুলো থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যই আমরা জিরো ফেসবুক চালাই।

আসলে আমরা অনেক ভালো তো (ভালো কি না জানি না) তবে এভাবেই চলতে থাকে আমাদের মত মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেদের জীবন।

একসাথে চলাফেরা করা কয়েক জনের সাথে নিজের অবস্থান চিন্তা করলে মাঝরাতে নিজের অজান্তেই চোখের পানিতে বালিশ ভিজে যায়। এতে অবশ্য সমস্যা হয়না। কারণ এসময় মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেরা ছাড়া কেউ জেগেও থাকেনা।

চোখের পানি মুছে তখনি শপথ করি, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। মা-বাবার দুঃখ-কষ্ট দূর করবই। তারপর শপথ নিয়ে মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেরা মা বাবার স্বপ্ন পূরনের জন্য চলতে থাকে তখন সে ছিটকে পড়ে ঐসব বড়লোকদের অবৈধ টাকার কারণে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়