শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০০:০০

ভয়ঙ্কর মাঝ রাত
আসমা আফরিন

আমি তখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি। ত্বকি, মিশু, রকি ও হিমু আমার বন্ধু। ওদের সাথেই বেড়ানো, স্কুলে যাওয়া খেলাধুলা সব। কখনো কখনো ঢিল মারতাম মৌচাকে, দল বেঁধে পুকুরে ঝাঁপ দিতাম। আবার কখনো বিলে শাপলা তুলতে যাওয়া। এসবই হতো ওদেও সাথে।

স্কুলটা ছিল আমাদের বাড়ি থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে। বর্ষাকালে সে যে কি অবস্থা! রাস্তায় হাঁটু সমান কাদা-পানি। রাস্তার দু’ধার, খাল-বিল পানিতে কানায়-কানায় পূর্ণ। স্কুলে যেতে যেতে শুনতে পেতাম কোলা ব্যাঙের ডাক। মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে ব্যাঙের মাথায় ঢিল ছুঁড়তাম। ব্যাঙ পানিতে ডুব দিয়ে আবার আরেক কোণায় গিয়ে ডাক জুড়তো। মাঝে মাঝে স্কুল ফাঁকি দিয়ে যেতাম মাছ ধরতে। তারপর সেই মাছ লুকিয়ে রেখে বিকেল বেলা যার যার বাড়ি থেকে চাল, ডাল, মসলা চুরি করে এনে বনভোজন। তারপর কলার পাতায় বসে খাওয়ার পালা। কখনো বা পাখি মেরে রোস্ট। এভাবেই দিন পার! অবশেষে ভালো ছেলে মেয়েদের মতো সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফেরা।

স্কুলে যাওয়ার পথে পড়তো বিরাট একটা জঙ্গল। কোন গাছে কয়টা পাখির বাসা আছে সব কিছুই আমাদের আয়ত্তে ছিল। বাগানে ছিল মস্ত বড় একটা বকুল গাছ। প্রতিদিন ফজরের আগেই চলে যেতাম ফুল কুড়াতে। একটু দেরি হলে আবার অন্যরা এসে কুড়িয়ে নিয়ে যাবে। এবার বাসায় এসে চলতো মালা গাঁথার পালা।

একদিন আমি আর মিশু যুক্তি করলাম, কাল আমরা দু’জনেই ফুল কুড়তে যাবো। ওরা এসে ডাকলে বলব, আমরা অসুস্থ, আজকে তোরা তিনজনই যা। কথা মতো কাজ হলো।

পরদিন মাঝরাত। মিশু এসে ডাক দেয়ার সাথে সাথে উঠলাম। চলে গেলাম সোজা বকুল তলায়। এসেই তো আমাদের চোখ ছানাবড়া! দেখি ত্বকি, রকি ও হিমু তিনজন মিলে বকুল গাছে। আমাদের দেখা মাত্রই ওরা বলে উঠল, আমাদের সাথে চালাকি তাই না! দেখ আমরা তোদের আগেই চলে এসেছি। এখন যদি ফুল নিতে চাস তো আমাদের সাথে এসে যোগ দে। নইলে একটা ফুলও পাবি না। শোনা মাত্রই মিশু তরতর করে গাছে উঠে গেল। আমি একা আর নিচে কী করবো? উঠে পড়লাম গাছে। ওমা! গাছে উঠে দেখি কাউকে চিনি না। হিমুর রূপও পাল্টে গেছে। একজনের দিকে তাকালে চারজন করে দেখতে পাচ্ছি। মুহূর্তের মধ্যে আমার সমস্ত শরীর থরথর করে কাঁপতে লাগলো। চোখে কিচ্ছুু দেখতে পাচ্ছি না। এই বুঝি মারা যাবো। তারা বলল, এই তুই খামোখা ভয় পাচ্ছিস কেন? তোকে আমাদের দেশে নিয়ে যাবো। তোর কোন ক্ষতি করব না। এই বলেই তারা আমার কাছে আসতে চাইলো। অমনি আমি হাত-পা ছেড়ে পড়ে গেলাম নিচে। একজন বলল, আমাদের হাতে আর বেশি সময় নেই এখনই একে নিয়ে পালাতে হবে। বলতে না বলতেই আজান শোনা গেল। আজান শোনার সাথে সাথে চিৎকার করতে করতে সবাই পালিয়ে গেল। তারপর আমি আর কিছুই বলতে পারি না। সকালে দেখি আমি আমার বাড়ির বারান্দায় শুয়ে আছি। পাড়ার সবাই আমাকে দেখতে এসেছে।

গত রাতের ঘটনাগুলো ভাবতে লাগলাম। কিভাবে কি হলো? তাহলে কী ওরা সত্যিই হিমু, ত্বকি আর রাব্বি ছিল না? শুনলাম হিমু নাকি কাল সন্ধ্যায় ওর নানার বাড়ি চলে গেছে। আর ওরাও কাল আমাদের আগে ফুল কুড়াতে যায়নি। তাহলে?

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়