প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০২২, ০০:০০
এই তো সেদিনের কথা। কলেজ থেকে সব ফ্রেন্ড জোর করে ঘুরতে নিয়ে গেলো। কারণ আজ আমার জন্মদিন। তো সবাই মিলে ট্রিট চাইলো তাদেরকে ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে। ওহ হো আমার পরিচয়টাই তো দেয়া হলো না! আমার নাম রিয়া। আমি এবার অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। যাই হোক, ইচ্ছা না থাকলেও তাদের সবার সাথে ঘুরতে গেলাম নদীর পাড়। এখানে বেশ ভালই লাগে শীতল হাওয়া, নদীর ওপর দিয়ে বয়ে আশা ছোট ছোট ঢেউ, কিছু গাছপালা এবং বেশ কিছু ছোট ছোট দোকান আছে নদীর পাড়ে, বেশ ভালোই লাগছে এখানে। অনেক লোক ঘুরতে আসে আর সবাই এখানে আসার কারণ হচ্ছে এখানে হাওয়াটা বেশ মধুর বললেই চলে। এখানে যতবার আসি বেশ ভালই লাগে । আর সব থেকে বড় কথা এখানের জায়গাটা এবং এখানে মাধুর্যতা অদ্ভুত একদম প্রাকৃতিক। বন্ধুদের সাথে আসলাম ভালো লাগছে আর সব থেকে বড় কথা সবাই একসাথে এসে বেশ মজা পাচ্ছি। তো সবাই তো আমার অবস্থা পুরা খারাপ করে দিল রং দিয়ে সবকিছু ভরপুর করে ফেলছে। এরই মধ্যে এক বৃদ্ধ চাচা এসে বলে কুলফি নেন বেশ ভালো খেতে একবার খান বারবার খেতে ইচ্ছে করবে।
-কত করে চাচা।
-একটা দশ টাকা, বিশ টাকা, ত্রিশ টাকা অবধি আছে।
-আচ্ছা দশ টাকা দামের দশ জন কে দশটা দেন।
-আচ্ছা।
সবাইকে দিয়ে আমারটা যেই নিবো অমনি দূরে একটি বেঞ্চের দিকে চোখ গেলো। একটি ছোট্ট বাচ্চা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আর সবাইকে দেখছে। একবার কুলফিওয়ালাকে দেখছে তো আরেকবার আমাদেরকে দেখছে। আমার চোখে চোখ পড়তেই মেয়েটা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। একটা জামা পরা ছিলো অনেক জায়গা দিয়ে তালি দেয়া। কয়েক রকমের কাপড় দিয়ে সেলাই করা। আর একটা সেলোয়ার পরা। সেলোয়ারের এক পায়ের কিছুটা কাপড় ছেঁড়া, মাথার চুলগুলো এলোমেলো। আমি অনেকটা সময় তার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না। আমি অনেক সাহস নিয়ে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম। তবে যখনই ডাক দিতে যাব ঠিক তখনই হঠাৎ ওকে কেউ একজন ডাক দিয়ে নিয়ে গেল। আর সেও তার সাথে ছুটতে লাগলো। যেন পৃথিবীর সব সুখ তাদের মধ্যেই আছে। নিষ্পাপ দুটি প্রাণ। যে ডাক দিয়ে নিয়ে গেল সেও তারই মতন ছোট্ট একটা শিশু। তারও তার মতই সবকিছু । তার মতোই পোশাক-আশাক। তাদের দেখে মনে হচ্ছে ছয়-সাত বছরের শিশু হবে। আমি সেই মেয়েটির চোখ দেখেছিলাম। মেয়েটির চোখে আমার চোখ পড়েছে। মায়াবী চোখ একদম মায়াবী একজোড়া চোখ। একদম জান্নাতের এক টুকরো নিষ্পাপ প্রাণ। একদম ফুলের একটি পাপড়ি। আমি আর কথা বলতে পারিনি। তাদের এমন একটা দৃশ্য দেখে । আমি আগে কখনো এভাবে তাদেরকে দেখিনি। তাদের নিয়ে কোনো ভাবনাও আসেনি আমার মাথায়। হঠাৎ মোবারক আমাকে ডাক দিলো।
-কিরে তুই এতো দূরে কি করছিসো এখানে আয়।
-হাঁ আসছি।
এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ওদের থেকে এতোটা দূরে চলে এসেছিলাম নিজেও জানি না। প্রায় সন্ধ্যা নেমে এলো। তাই সবাই সবার থেকে বিদায় নিয়ে সবাই সবার বাড়িতে চলে গেলাম। কিন্ত, আমার মাথা থেকে একটি প্রশ্ন যাচ্ছেই না? ওই ছোট্ট শিশুটি কার? কার ওই বাচ্চা দুটো? তাদের বাবা মা কোথায়? তাদের পরেনে ছেঁড়া জামা কেন? মেয়েটি আমার দিকে ওভাবে কেন তাকিয়েছিলো? আমাকে কি কিছু বলতে চেয়েছিল? আমাকে যদি কিছু বলতে চাইত তো আমার কাছে আসলো না কেন? আমাদের সবাইকে ওভাবে কেন দেখছিল? আর আমার চোখ তার চোখে পড়তে কেন এভাবে দাঁড়িয়ে গেল? এত কিছু ভাবতে ভাবতে বাসায় ফিরলাম। রুমে ঢুকেই টাওয়ালটা হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে এক কাপ কফি নিয়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে পড়লাম। মাথা থেকে কিছুতেই ওই ভাবনাগুলো সরাতে পারছি না।
আজ আকাশটা বেশ গম্ভীর হয়ে আছে। আকাশের দিকে চেয়ে আছি। পুরো চারপাশটা নীরব হয়ে আছে। মনে হচ্ছে আজ মেঘ নামবে। বৃষ্টি হলে ভালোই হবে। মাথাটা বেশ ধরেছে। অনেকদিন পর এত ভাবনা ভাবলাম। এতটা ভাবনা না কোনদিন ভাবেনি। আজ ভেবে মাথা পুরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কালকে আবার যাবো সেখানে ওই মেয়েটাকে খুঁজবো, খুঁজে বের করবোই। অনেকটা রাত হয়েছে তাই শুয়ে পড়লাম। কালকে গিয়ে কিভাবে খুঁজবো না খুঁজবো এসব ভেবে ভেবে কখন সে ঘুমিয়ে পড়লাম নিজেও জানি না। মায়ের ডাকে ঘুম থেকে উঠে দেখি ৯টা বেজে গেছে। আমি তড়িঘড়ি করে রেডি হয়ে নাস্তা করে কলেজে চলে এলাম। মাথায় সেই একটাই প্রশ্ন? মেয়েটি কে? কেন এমন ভাবে তাকিয়ে ছিল? ক্লাসটা কোনমতে শেষ করলাম । আজ স্যারের কোন কিছুই মাথায় ঢুকলো না। কি বলছে কিছুই বুঝতে পারিনি। যাই হোক ক্লাস শেষ করে নদীর পাড়ে চলে এলাম। আজ আকাশটা বেশ ভালো লাগছে । শীতল হাওয়া মনটা বেশ নাড়িয়ে দিচ্ছে। একটা মধ্যবয়স্ক আংকেল এসে বলতেছে বাদাম লাগবে আপামণি। তো একা বসে আছি তাই বললাম, দেন ১০ টাকার।
-এই নিন।
আমি চারপাশে সেই মেয়েটাকে খুঁজছি কিন্তু পাচ্ছি না। হঠাৎ আমি অনুভব করি কেউ একজন আমার জামা ধরে টানছে। আর বলছে, আপু পাঁচটা টিয়া দাও না?
আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি আর ভাবছি এ তো সেই মেয়েটি নয়, কিন্তু এরও তো তার মতোই পোষাক-আশাক তার মতোই সবকিছু। কিন্তু এই-বা কে? (আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)।