রবিবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৩৪

খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

কৃষিকণ্ঠ প্রতিবেদক
খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

শীত নামতেই জমে উঠেছে চঁাদপুরের গ্রামীণ জনপদ। গ্রামবাংলার শীত মানেই খেজুরের রস সংগ্রহ। সেই দৃশ্যই যেন জানান দিচ্ছে, কিছু ঐতিহ্য এখনো জীবন্ত ও প্রাণবন্ত। ভোরে মাটির হঁাড়িতে ঝরে পড়া খেজুরের রসের মিষ্টি সুবাস যেন জানিয়ে দেয় গ্রামবাংলার চিরচেনা ঐতিহ্য এখনো টিকে আছে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে চলছে গাছিদের ব্যস্ততা। খেজুর গাছে নল বসিয়ে রস সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

চঁাদপুর সদর উপজেলার কল্যাণপুর ইউনিয়নের খেরুদিয়া গ্রামের অভিজ্ঞ গাছি রুহুল মিয়া। তিনি দীর্ঘদিন ধরে গ্রামের অভিজ্ঞ গাছি হিসেবে রস সংগ্রহ করছেন। তিনি বলেন, ‘আগের মতো খেজুর গাছ আর দেখা যায় না। তবুও যে গাছগুলো আছে, সেগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চেষ্টা করছি। অগ্রহায়ণ থেকে মাঘ পর্যন্ত রস সংগ্রহ চলে। দুপুরের পর থেকে গাছ প্রস্তুত করে নল বসাই। রাতভর ফেঁাটা ফেঁাটা রস এসে হঁাড়ি ভরে যায়। ভোরে গিয়ে রস সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করি। তবে আগের মতো রস পাওয়া যায় না।’

স্থানীয় বাবুল গাজী ও শুক্কুর আলী বলেন, ‘অনভিজ্ঞ গাছিদের ভুল পদ্ধতিতে গাছ কাটার কারণে অনেক গাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে খেজুরের রসের উৎপাদনও কমে এসেছে। একসময় শীত এলে গাছিদের ঘরে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার ভিড় লেগে থাকতো। এখন সেই দৃশ্য বিরল হলেও গ্রামের মানুষের আগ্রহ এখনো কমেনি।’

এদিকে রস সংগ্রহের পর গ্রামবাসী তৈরি করেন ক্ষীর, পায়েস, পিঠা, নাড়ুসহ শীতের ঐতিহ্যবাহী খাবার। আত্মীয়-স্বজনকে আপ্যায়নের সময় এসব খাবার এখনো শীতের আনন্দ দ্বিগুণ করে।

চঁাদপুর সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চঁাদপুর সদর উপজেলার আয়তন প্রায় ৩০৮.৭৮ বর্গ কি.মি., যা চঁাদপুর জেলার সবচেয়ে বড়ো উপজেলা। এ উপজেলায় বর্তমানে প্রায় ৩ হাজার ২৮৭টি খেজুর গাছ আছে। এর মধ্যে অধিকাংশ গাছেই রস সংগ্রহের কাজ চলমান।

জেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মোবারক হোসেন বলেন, ‘খেজুর রস সংগ্রহ গ্রামীণ জীবনের ঐতিহ্যমণ্ডিত পেশা। তবে অনভিজ্ঞ গাছিদের ভুল পদ্ধতিতে গাছ কাটার কারণে অনেক গাছ মরে যাচ্ছে, যা উদ্বেগের বিষয়। নতুন গাছি ও কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিলে এবং সরকারি উদ্যোগে ব্যাপকভাবে খেজুর গাছ রোপণ শুরু হলে ঐতিহ্য শুধু টিকেই থাকবে না বরং আয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে’।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়