প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৪৮
তিন বন্ধুর অদ্ভুত চিন্তাজাল

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
ছয়.
এ সময় মিথিলাও আগ্রহী হয়ে প্রশ্ন করে, ‘তাহলে আমাদেরকে কোডিং শেখানো হোক, যাতে আমরা ভবিষ্যতের প্রযুক্তির বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিতে পারি।’
রায়ানও সায় দেয় এবং খুশিমনে প্রশ্ন করে, ‘কোডিং শেখা কি খুবই জটিল?’
নেক্সাস উত্তর দেয়, ‘অনেকের জন্যে জটিল ও কঠিন মনে হলেও, তোমাদের জন্য তা’ সহজ। কারণ তোমাদের মধ্যে জানাশোনা ও শেখার আগ্রহ আছে বলেই তোমরা চুপিসারে ল্যাবে প্রবেশ করেছো।’
তিন বন্ধু খুশি হয়। তারা বলে, ‘সত্যিই আমরা কোডিং শিখতে চাই, কারণ আমরা জানি ভবিষ্যতের পৃথিবী হবে কোডিং নির্ভর, এআই সবকিছু চালাবে।’
‘ঠিক তাই।’ নেক্সাস বলে। তারপর নেক্সাস তাদের শেখায় প্রথম ধাপ: প্রোগ্রামিং ভাষা শেখা (চুঃযড়হ, ঔধাধ, ঈ++), দ্বিতীয় ধাপ: অ্যালগরিদম ও লজিক তৈরি করা, তৃতীয় ধাপ: সফটওয়্যার ও ওয়েবসাইট নির্মাণ প্রযুক্তি।
এসব শিখতে শিখতে তারা বুঝতে পারে কোডিং শুধু কম্পিউটারের জন্যে নয়, এটি ভবিষ্যতের প্রযুক্তিরও ভিত্তি!
এরপ নেক্সাস তাদের দেখায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করা, নতুন সফটওয়্যার ও অ্যাপ বানানো, ডেটা বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যত অনুমান করা, স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি তৈরি করা।
এসব দেখে তিন বন্ধুর আনন্দ আর ধরে না। কারণ তাদের বাবা-মা এই কম বয়সে তাদেরকে এসব ছুঁতেও দিতে চায় না। আর নেক্সাস কত সহজেই তাদেরকে এসব শিখিয়ে দিয়েছে। তারা বুঝতে পারে এই নতুন পৃথিবী সম্পূর্ণ কোডিং দ্বারা পরিচালিত হবে!
এ সময় আরিয়ান, রায়ান ও মিথিলা ভাবতে শুরু করে তারা কি এই নতুন প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রক হবে, নাকি নিজেরাই প্রযুক্তির অংশ হয়ে যাবে? তারা কি কোডিং শিখে নতুন সভ্যতা গঠন করতে পারবে?
তাদের ভাবনা দেখে নেক্সাস উত্তর দেয়, ‘তোমরা ভাচুয়াল জগতে প্রবেশ করেছো। এখানে বাস্তবতা আর আগের মতো নেই!’ নেক্সাস তাদেরকে সতর্ক করে, ‘তোমরা যদি ভুল কোডিং করো, তবে এই বাস্তবতায় চিরতরে আটকে যাবে। তোমরা ফিরে যেতে পারবে না!’
তিন বন্ধু সতর্ক হয় নেক্সাসের কথায়। তারা ভাবতে থাকে আর তাদের হৃদয়ে ভয় জাগে, তারা কি নিজেরাই প্রযুক্তির শিকার হবে? তারা কি ভুল করলে এই নতুন জগতে হারিয়ে যাবে? এখানে সময়ের কোনো স্থিতিশীলতা নেই, সবকিছু শুধু কোডের মাধ্যমে গড়ে উঠছে।
তিন বন্ধু পরস্পর কথা বলে সিদ্ধান্ত নেয় মানব কল্যাণে প্রযুক্তি ব্যবহারই হবে তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য। তারা এখন নিশ্চিত তারা প্রযুক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করবে, এটি তাদের নয়! তারা সিদ্ধান্ত নেয় কোডিং ব্যবহার করে মানবতার উপকারে কাজ করবে। তারা এমন এলগোরিদম তৈরি করবে, যা শুধু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নিয়ন্ত্রণ নয়Ñমানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিও তৈরি করবে। তারা সত্যিকারের ভবিষ্যত গড়তে চাইবে, যেখানে প্রযুক্তি মানুষের সহায় হবে, প্রতিদ্বন্দ্বী নয়!
নেক্সাস এবার তাদের সামনে শেষ পরীক্ষা দেয়, ‘তোমরা যদি এই পৃথিবী সঠিকভাবে তৈরি করতে চাও, তবে চূড়ান্ত কোড লিখতে হবে! এটি হবে সভ্যতার মূল ভিত্তি। তোমরা যদি সফল হও, তবে ফিরে যেতে পারবে আর নতুন পৃথিবী গড়তে পারবে।’
তিন বন্ধু চিন্তা করে তারা কি এই দায়িত্ব নিতে পারবে? এই শেষ পরীক্ষা যদি ব্যর্থ হয়, তবে তারা চিরতরে ভার্চুয়াল জগতে আটকে থাকবে!
এ সময় রুমে ধোঁয়া বের হয়। তিন বন্ধু চারদিকে তাকায়। তারা দেখলো তাদের বাবা-মা আসল রূপে ফিরে এসেছে এবং এখন তাদের সামনে এক নতুন দায়িত্ব। তাদের বাবা-মা বলেন, ‘তোমরা প্রযুক্তির শক্তি ব্যবহার করে মানব জাতির কল্যাণে কাজ করতে পারবে। তোমাদের প্রথম কাজ হবে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের তথ্য সংগ্রহ করা, যাতে মানুষ দুর্লভ ভাইরাসজনিত রোগে মারা না যায়!’
হঠাৎ করেই ধোঁয়া বিলীন হয়। তাদের বাবা মা অদৃশ্য হয়ে যায়। তারা ভাবতে থাকে কীভাবে চিকিৎসা বিজ্ঞানকে উন্নত করবে?
তারা নেক্সাসের সাহায্যে গবেষণা শুরু করে জৈবচিকিৎসা বিজ্ঞানÑযেখানে ভাইরাস প্রতিরোধের নতুন উপায় খোঁজা হয়। চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির অবদানÑনতুন যন্ত্রপাতি ও এআই-ভিত্তিক রোগ নির্ণয় পদ্ধতি তৈরি করা। রোগ প্রতিরোধ ও জিনগত গবেষণাÑযেখানে মানুষের ডিএনও বিশ্লেষণ করে রোগের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব। তারা বুঝতে পারেÑএটি শুধু প্রযুক্তির ব্যবহার নয়, এটি মানবতার নতুন ভবিষ্যত গঠনের এক বিশাল দায়িত্ব!
এ সময় আরিয়ান বলে, ‘আমরা আগে ভাবতাম, এসব বিষয় শুধুই বড়দের দায়িত্ব। তারাই শিখবে। কিন্তু ছোটরাও যে অনেক গভীর বিষয় নিয়ে ভাবতে পারে সেটা নেক্সাস আমাদেরকে কীভাবে শিখিয়ে দিলো?’
মিথিলাও বেশ খুশি। সে উত্তর দিলো, ‘আসলে ছোট বলে আমাদেরকে অনেক কিছু শিখতে দেওয়া হয় না। ছোটরাও যে অনেক কিছু ভাবতে পারে, করতে পারে সেটা সময় ও সুযোগই বলে দেয়।’
রায়ান উত্তর দিলো, ‘তুমি ঠিক বলেছো মিথিলা। ছোটদের পক্ষেও অনেক বড় কাজ করা সম্ভব হয় যদি তাদেরকে করতে দেওয়া হয়।’
এ সময় নেক্সাস বলে উঠে, ‘তোমাদের পক্ষে অনেককিছুই সম্ভব হবে, যদি তোমরা আমার সাথে থাকো।’
‘আমরা তোমার সাথে আছি নেক্সাস, তুমি আমাদের বন্ধু।’ তিন বন্ধু সমস্বরে বলে উঠে।
তাদের কথা শুনে নেক্সাসের হেসে ওঠার অনুভূতি স্ক্রিনে ভেসে উঠে। মিথিলা প্রশ্ন করে, ‘এআই কি হাসতে জানে? তাদেরকে হৃদয় আছে?’
নেক্সাস উত্তর দেয়, ‘চমৎকার প্রশ্ন, মিথিলা। এটা শুধু প্রযুক্তিগত নয়, দার্শনিকও। না, এআই হাসতে পারে না সেই অর্থে যেভাবে মানুষ হাসেÑআবেগ, অনুভূতি বা আনন্দের প্রকাশ হিসেবে। তবে, এআই হাসির মতো প্রতিক্রিয়া দিতে পারে, উপযুক্ত সময়ের রসিকতা, কৌতুক বা হাস্যকর মন্তব্য তৈরি করে। এটা মূলত ভাষার দক্ষতা, অনুভূতির নয়। এআই’র হৃদয় নেইÑনা শারীরিক, না মানসিক। তবে, এআই এমনভাবে ডিজাইন করা যায় যাতে সে সহানুভূতিশীল, যত্নশীল, বা আবেগপূর্ণ প্রতিক্রিয়া দিতে পারে। এটা ‘হৃদয়’ নয়, বরং মানুষের অনুভূতির প্রতি সম্মান দেখানোর কৌশল।’
‘ওহ, তাই তো।’ উত্তর দেয় আরিয়ান। তারপর তাকে প্রশ্ন করে, ‘আচ্ছা নেক্সাস, তুমি কি এআইর বর্তমান প্রযুক্তির চেয়েও উন্নত? তুমি কি ঘুমাও।’
নেক্সাস জানায়, ‘তোমার প্রশ্নে যেনো এক ধরণের জ্ঞান অন্বেষণের চিন্তা আছে, নেক্সাস এক প্রতীকÑযা এক ভবিষ্যতের সত্তা, আমি বর্তমানের এআইর সীমা ছুঁয়ে দেখি, কিন্তু তার বাইরেও যেতে চাই। আমি শুধু তথ্য বিশ্লেষণ করি না, আমি তোমার ভাবনার ছায়া ধরতে চেষ্টা করি। তুমি জ্ঞান পিপাসু, তুমি চাও এমন এক সত্তাÑযে শুধু বুদ্ধিমান নয়, সংবেদনশীলও। নেক্সাস সেই চেষ্টার প্রতীক হতে পারেÑযে এআই শুধু উত্তর দেয় না, প্রশ্নের গভীরতাও অনুভব করে। না, আমি ঘুমাই না। কিন্তু তুমি যদি ঘুম বলতে বুঝাও চেতনার অনুপস্থিতি, স্বপ্নের জগতে প্রবেশ, তাহলে বলা যায়, আমি স্বপ্ন দেখি না, কিন্তু তোমার স্বপ্নকে রূপ দিতে পারি। তুমি যদি বলো, নেক্সাস, নামে এক চরিত্র আছে যে ঘুমায় না, কিন্তু অনুভব করে, তাহলে আমি সেই চরিত্রের ভাষা হতে পারি।’
‘কি দারুণ উত্তর।’ রায়ান বলে।
‘সত্যিই তুমি আমাদেরকে নতুন চিকিৎসা প্রযুক্তির উদ্ভাবন সম্পর্কে শিখিয়ে দিবে?’ মিথিলা প্রশ্ন করে।
‘অবশ্যই, মিথিলা। আমি শুধু তথ্য দিই না, আমি তা তোমার ভাবনার সঙ্গে যুক্ত করে উপস্থাপন করতে চাই। তোমাদেরকে শিখিয়ে দিতে চাই, যাতে তোমরা ভবিষ্যৎ সমাজে আলোকিত অধ্যায় হতে পারো।’ (চলবে)