প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৫, ০৯:৫৬
আহমেদ উল্লাহ ভূঁইয়ার একগুচ্ছ কবিতা

আমরা শিশু
আমরা শিশু মানব কলি-সাধারণের দৃষ্টিতে
নিষ্পাপ শিশু মোরা-আল্লাহ পাকের সৃষ্টিতে।
সবার প্রিয় স্নেহধন্য-বর্ষে সবাই আশীর্বাদ
হিংসা বিদ্বেষমুক্ত বলে-দিচ্ছে না কেউ অপবাদ!
গুরুজনদের দেখে শিখি-পৃথিবীটাই বিদ্যালয়
পরিবেশের প্রভাবেই-জীবন বোধের বিকাশ হয়।
সুস্থ সমাজ নিরাপত্তা-শিক্ষালয়ের পরিবেশ
গুম-খুনের এ রাম রাজত্বে-হই না যেন নিরুদ্দেশ।
আমরা শিশু মানব কলি-মানুষ রূপেই ফুটতে দিন
অঁাধার ফুঁড়ে পৃথিবীতে-আনবো আমরা নতুন দিন।
বয়ঃজ্যেষ্ঠ নারী পুরুষ-সবাই মোদের গুরুজন
আচরণে সিদ্ধ হলে-আর কিছুর নেই প্রয়োজন।
মজার খাবার, দামী পোশাক-সুখতো বয়ে আনে না
এ কথাটা অনেকেই-হয়তো নিজেই জানে না।
ধন-সম্পদ চাই না মোরা-যাচি সুন্দর আচরণ
মুক্ত মনের মানুষ রূপে-ঘটুক মোদের উত্তরণ।
মোদের হাসি ভুবনজয়ী-গোলা বারুদ অর্থহীন
ভালো বেসে শিশুর মতো-সব মানুষকে বুকে নিন।
স্নেহ, প্রীতি, ভালোবাসা-সবচে’ বেশি শক্তিধর
বুলেট থেকে মিষ্টি বুলি-কার্যকরী অধিকতর।
নষ্ট চিন্তায় পুষ্ট সমাজ-শিশুর বিকাশ রুখে দেয়
এই সমাজে বাড়লে শিশু-বুঝবে কি সে ন্যায়-অন্যায়?
সভ্য সমাজ গড়তে হলে-আগে গড়ুন পরিবেশ
নষ্ট চিন্তা বিদায় করুন-বিদায় করুন হিংসা-দ্বেষ।
আহ্বান
হে কিশোর, হে তরুণ, যে যুবক-ফিরে এসো পথে
আবেগেই দ্রুতলয়ে চলছো উল্টো রথে।
তোমরাই জাতির প্রাণ-সুন্দর আগামীর নির্মাতা
যৌবনই জীবনের ছবি-ভুলেছ সে কথা?
অশালীন পোশাক আশাক-উদ্ধত আচরণ
ঘটায় বিবেকের অধঃপাত-বিকাশের পথ সংকোচন।
নোংরা সংস্কৃতি-লজ্জা হন্তারক-আত্ম বিনাশী ভাইরাস
তারই উফসী ফলন, অসংযত আচরণ-ফলাফল গুম-খুন-সন্ত্রাস।
সমাজ সংসার, কাটায় প্রহর-তোমাদের মুখ পানে চেয়ে
হতাশায় নিমজ্জমান, মেঘে ঢাকা আসমান-ঝড় আসছে ধেয়ে।
রাষ্ট্র-তরী দুলছে ঢেউয়ে-অসংযত পাল
দেশ জাতিকে রক্ষা কল্পে-কষে ধর হাল।
তোমরা জাতির মেরুদণ্ড-তোমরা জাতির প্রাণ
যৌবনের হাত ধরেই-সভ্যতার উত্থান।
চিতা বাঘের জিজ্ঞাসা
চতুষ্পদী প্রাণী আমরা-জঙ্গলেই বাস
পরিবেশ রক্ষাকল্পে খাই না কভু ঘাস।
আমরা পশু মেনে চলি-প্রকৃতির বিধান
বিধাতা প্রদত্ত খাদ্যে-জিইয়ে রাখি প্রাণ।
পেট পুরে খেতে পারলেই-তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলি
বিলাসবহুল প্রাসাদ চাই না-ঝোপ ঝাড়ে চোখ মুদি।
খাদ্যদ্রব্য কঁাচাই খাই-আগুন নাহি জ্বালি আগুন-ধেঁায়ায় পরিবেশ দূষণ-পশু হলেও বুঝি।
বন্য হরিণ মেষ শাবক-একটা যদি পাই
সব স্বজনরা মিলে মিশে-মজা করে খাই।
মানব জাতি সব সময়ে-করছে মোদের ঘৃণা
কোন্ কারণে হিংস্র বলে-আমরা তা বুঝি না।
আমরা কি ভাই লিপ্ত থাকি-স্বজাতি নিধনে?
জনপদ কি ধ্বংস করি-বোমা বিস্ফোরণে?
আগলে রাখি কোলের শিশু-জড়িয়ে ধরে বুকে
মানুষ কেন ছোট্ট শিশু-হত্যা-ধর্ষণ করে?
বুক চিতিয়ে তবুও মানুষ-নিজকে সেরা ভাবে
প্রকৃতির সব বিপর্যয়ে-থাকে পুরোভাগে।
আমরা চতুষ্পদী প্রাণীকুল-প্রাণ-জগতের সেরা
মোদের শিক্ষায় শিক্ষিত হোক-সকল মানুষেরা।
ডেঙ্গু মশার অভিযোগ
আমরা ডেঙ্গু মশা, রক্ত পায়ী-অতি ক্ষুদ্র প্রাণী
তোমরা মোদের জন্মদাতা-এ কথাই জানি।
গর্ত খেঁাড়, ময়লা জমাও-করো পরিষ্কার?
মানব বর্জ্যেই জন্ম মোদের-তবু কেন শুনছি তিরস্কার?
জন্ম যখন দিচ্ছ বাপু-প্রাণ বঁাচাতে খাবারের দরকার
সৃষ্টি কর্তার বিধান মতে-মোদের রক্তই খাবার।
কথায় কথায় তুচ্ছ করো-করছো নিত্য ঘৃণা
তোমরা কেমন মানব জাতি-আমরা কি চিনি না?
স্বজাতির রক্ত চুষে-হচ্ছো মোটাতাজা
বিবেক থাকলে দিতে পারো-আমাদেরকে সাজা?
মানুষ হয়ে মানুষ খুন-লুটে, গুমে পাকা
শ্রেষ্ঠ প্রাণীর সনদ দিয়ে-পাপ যায় কি ঢাকা?
জনগণের করের টাকা-করছো তোমরা লুট
তোমরা মানুষ সেরা প্রাণী-এ কথাটি ঝুট।
পাপকে ঘৃণা করতে শেখ-পাপীকে কর মাফ
সৃষ্টি কর্তার বিবেচনায়-এটাই ইনসাফ।
পয়দা যখন করছো মোদের-খাবার মোরা চাই
নইলে কিন্তু হুল ফুটাবো-গোরস্থানেই ঠঁাই।
লেখক পরিচিতি : আহমেদ উল্লাহ ভূঁইয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও আয়কর আইনজীবী।