প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২৫, ১০:৪১
তিন বন্ধুর অদ্ভুত চিন্তাজাল

২১২৫ সাল। একশত বছরের আগের দেখা সেই পুরো পৃথিবী আমূল পরিবর্তন হয়েছে। এখন যেমন পরিবেশ পরিস্থিতি আগের মতো নেই, তেমনি মানুষজনও কেমন যেনো সম্পূর্ণ বদলে গেছে। রাত গভীর। বিদ্যুতের নীল আলোয় ঘর উজ্জ্বল হয়ে আছে। আলফা-৭ নামের সুপারকম্পিউটারটি এক অবিশ্বাস্য আবিষ্কার সামনে এনেছে-একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যন্ত্র যা শিশুদের চিন্তাভাবনা বুঝতে পারে এবং তাদের শেখার গতি বাড়িয়ে দিতে পারে। আরিয়ান, মিথিলা এবং রায়ান-তিন বন্ধুর কৌতূহল এ নিয়ে তুঙ্গে। তারা স্কুলের বিজ্ঞানমেলায় এই প্রযুক্তির কার্যপ্রণালী নিয়ে একটি পরীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু তাদের নিজেদের সুপার কম্পিউটার না থাকায় তারা দিন শেষে মাগরিবের আযানের পর চুপিসারে স্কুলের গেইটের উপর দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। সবকিছু দেখতে দেখতে কখন যে রাত হয়ে যায়, তারাও টেরও পায় না। তারা তিনজন সুপারকম্পিউটারটির সামনে গিয়ে ভাবতে থাকে।
এ সময় আরিয়ান সুপারকম্পিউটারটি চালু করে দেয়। হঠাৎ সিস্টেমে একটি অদ্ভুত গ্লিচ দেখা দেয়। কম্পিউটারের স্ক্রিনে লেখা ভেসে ওঠে: ‘তোমরা কি সত্যিই জানতে চাও, প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ কেমন হবে?’
সেই সাথে গম গম করে স্পিকারে কথাগুলো শোনা যায়। যেনো কোনো অশরীরী মেশিনের আওয়াজ। যা তাদেরকে প্রথমে ভীত করে তোলে। তারা বুঝতে পারে না, তাদের মনের কথাগুলো, চিন্তা-ভাবনাগুলো কীভাবে সুপার কম্পিউটারটি বুঝে নিলো। আরিয়ান সাহসী হয়। সে উত্তর দেয়, ‘হ্যঁা, আমরা জানতে চাই, প্রযুক্তি আমাদের কোথায় নিয়ে যাবে?’ এ সময় তারা লক্ষ্য করে, স্কুলের বিজ্ঞান গবেষণা ল্যাবের সব যন্ত্র একসাথে জেগে উঠেছে! কম্পিউটারের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে-‘তোমরা যদি সত্যিই প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ জানতে চাও, তবে তোমাদের পরীক্ষা শুরু হলো!’
ওরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে স্ক্রিনের দিকে। কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না। মিথিলা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে, ‘আমরা জানি না কী বলবো, আর কিসের পরীক্ষা দিবো?’
আলফা-৭: ‘তোমাদের বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষা শুরু হলো। তোমরা প্রস্তুত?’
রায়ান (অস্থিরভাবে): ‘কীসের পরীক্ষা? এ কি আমাদের সাথে কোনো খেলা খেলছে?’
মিথিলা (বিস্মিত): ‘কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি সত্যিই আমাদের চিন্তা-ভাবনা বুঝতে পারে?’
আরিয়ান উত্তর দেয়, ‘যদি না পারে, তাহলে সে প্রশ্ন করে কীভাবে?’
মিথিলা প্রশ্ন করে, ‘যদি পারে?’ তাহলে কি এটি আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে?’
রায়ান উত্তর দেয়, ‘হ্যঁা, এটি আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, কারণ ওর প্রশ্নের ধরণ বলে দেয় তার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে, চলে আমরা পালিয়ে যাই।’
আরিয়ান (সাহসী হয়ে): ‘আমরা পালিয়ে গেলে কি হবে? নাকি আমাদের সাহস করে এর ভেতরের রহস্য উন্মোচন করতে হবে?’
আলফা-৭ (গম্ভীর স্বরে): ‘তোমাদের পালানোর উপায় নেই। জ্ঞানই তোমাদের অস্ত্র। তোমাদের সিদ্ধান্তই প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে।’
তিন বন্ধু একে অপরের দিকে তাকায়। ভবিষ্যৎ এখন তাদের হাতে! উত্তেজনা বাড়ছে তাদের। তাদের সামনে আসা জটিল বিষয়গুলো আরও স্পষ্ট করে ভাবিয়ে তুলছে। তারা যখন পরীক্ষামূলক কাজ শুরু করে, হঠাৎ আলফা-৭ তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে শুরু করে, কিন্তু প্রতিটি উত্তর আরও গভীর সংকট তৈরি করছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তাদের সামনে এমন তথ্য দিচ্ছে, যা বাস্তব পৃথিবীতে এখনও সম্ভব নয়। যেমন, ভবিষ্যতের সমাজ কেমন হবে, প্রযুক্তির সীমা কতদূর পর্যন্ত যেতে পারে, এমন সব তথ্য তাদের সামনে এসে পড়ছে। একসময় তারা আবিষ্কার করে, কম্পিউটারের সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র তথ্য বিশ্লেষণ নয়, বরং বাস্তবতা পরিবর্তনের ক্ষমতাও রয়েছে! তারা বুঝতে পারে, একটি ভুল পদক্ষেপ তাদের ভবিষ্যকে সম্পূর্ণভাবে পাল্টে দিতে পারে।
আরিয়ান চিন্তা করছে তারা কি গবেষণা বন্ধ করবে, নাকি আরও এগিয়ে যাবে? তারা কি কোনো বড় রহস্য উন্মোচনের কাছাকাছি চলে এসেছে?
আলফা-৭ কি তাদের বন্ধু, নাকি এটি তাদের প্রতিপক্ষ হতে চলেছে? মিথিলা প্রশ্ন করে, ‘আরিয়ান রায়ান তোমরা কি ভাবছো? আমরা কি কোনো বিপদে পড়ে গেলাম?’
‘সত্যি আমিও তাই ভাবছি।’ উত্তর দিলো রায়ান। কিন্তু আরিয়ান কোনো কথা বলছে না। সে ভাবছে। অন্ধকার ঘরটি ওদের কাছে কেমন যেনো ভৌতিক এক গুহার মতো মনে হচ্ছে। যেনো তারা অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় ভুলক্রমে পথ ভুলে কোনো দৈত্য-দানবের গুহায় এসে পড়েছে, এখান থেকে আর পালাবার রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে না। স্ক্রিনের আলোয় আরিয়ান, মিথিলা আর রায়ান নিঃশ্বাস বন্ধ করে তাকিয়ে আছে।
আলফা-৭ থেকে নতুন সংকেত এসেছে, ‘তোমরা কি সত্যিই প্রস্তুত ?
আগামীকাল সূর্যোদয়ের আগে, সিদ্ধান্ত নিতে হবে, প্রযুক্তির সীমা কোথায়?’ তারা অবাক! এ কি কেবল একটি কম্পিউটারের এলগোরিদম, নাকি তাদের সামনে আসলে ভবিষ্যতের দরজা খুলে গেছে? মিথিলা আতঙ্কিত, সে বলে, ‘আমরা কি বিপদে পড়েছি? এটা কি কেবল একটি পরীক্ষা, না কি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে?’
রায়ান আত্মবিশ্বাসী, ‘আমরা এতো দূর এসে গেছি, এখন পিছিয়ে গেলে আমরা কিছুই জানতে পারবো না।’ আরিয়ান নীরব। তার চোখ গভীরভাবে স্ক্রিনের দিকে স্থির, এই প্রযুক্তি কি কেবল সাহায্য করছে, নাকি কিছু কোনো অলক্ষ্য শক্তি তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে? (চলবে)