সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০২৪  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা গণফোরামের কর্মী সমাবেশ
  •   নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনে ফরিদগঞ্জে অবাধে ইলিশ বিক্রি
  •   পিকনিকে যাওয়া শিক্ষার্থীর মরদেহ মেঘনায় ভেসে উঠলো দুদিন পর
  •   নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজি না করার শপথ করিয়েছেন এমএ হান্নান
  •   বিকেলে ইলিশ জব্দ ও জরিমানা

প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:১১

সাক্ষাৎকার: ডা. মো. হাসানুর রহমান

চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের অবকাঠামোগত উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি

আলআমিন হোসাইন
চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের অবকাঠামোগত উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি

ডা. মো. হাসানুর রহমান। তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা চাঁদপুরে। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ থেকে তিনি এমবিবিএস ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। বর্তমানে চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ডা. মো. হাসানুর রহমান সম্প্রতি দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের ‘চিকিৎসাঙ্গন’ বিভাগে সাক্ষাৎকার দেন। এই সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে তাঁর চিকিৎসাজীবনের সুখ-দুঃখ, পেশাগত চ্যালেঞ্জ, শিক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ এবং চিকিৎসা পেশার প্রতি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : কেমন আছেন?

ডা. মো. হাসানুর রহমান : আলহামদুলিল্লাহ, মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে কোথায়?

ডা. মো. হাসানুর রহমান : চাঁদপুর শহরেই আমার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা। বাবা বাংলাদেশ রেলওয়েতে চাকরি করতেন। আমরা বড়স্টেশন এলাকার রেলওয়ে কোয়ার্টারে থাকতাম।

চাঁদপুর কণ্ঠ : শিক্ষাজীবন সম্পর্কে বলুন।

ডা. মো. হাসানুর রহমান : পড়াশোনা শুরু হয় চাঁদপুর রেলওয়ে আক্কাস আলী স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে। পরে পঞ্চম শ্রেণিতে আল-আমিন একাডেমীতে ভর্তি হয়ে এসএসসি শেষ করি। এইচএসসি সম্পন্ন করি চাঁদপুর সরকারি কলেজে। এরপর কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট এবং মহাখালী বক্ষব্যাধি হাসপাতাল থেকে বিভিন্ন ডিগ্রি অর্জন করি। ২১তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে ২০০৩ সালে হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসক হওয়ার ভাবনা কীভাবে শুরু হলো?

ডা. মো. হাসানুর রহমান : শৈশবে বড়স্টেশনে একটি দুর্ঘটনা ঘটে। এক ব্যক্তির পা মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। তখন মনে হয়েছিল, চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে পারলে ভালো লাগবে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

ডা. মো. হাসানুর রহমান : প্রথম দিনটি ছিল আমার জীবনের স্মরণীয় মুহূর্ত। সরকারি মেডিকেলে পড়েছি, যা জনগণের ট্যাক্সের টাকায় চলে। তাই মানুষের কল্যাণে সেবা করার শপথ নিয়েছি। চেষ্টা করি যেন কারও ক্ষতি না হয় এবং প্রয়োজনে সিনিয়রদের কাছে রোগী পাঠাই। রোগীদের সেবা করা আমার নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চাঁদপুর মেডিকেল কলেজে কবে যোগদান করেছেন?

ডা. মো. হাসানুর রহমান : ২০২৪ সালের ২ মে সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবং সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : কলেজের সার্বিক অবস্থা নিয়ে কিছু বলুন।

ডা. মো. হাসানুর রহমান : এ প্রতিষ্ঠানে অনেক সুযোগ-সুবিধার ঘাটতি রয়েছে। পর্যাপ্ত ক্লাসরুম, প্র্যাক্টিক্যাল রুম, লাইব্রেরি, এবং বিনোদনের পরিবেশের অভাব আছে। এমনকি আমার বসার জন্যও আলাদা কক্ষ নেই। ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্টের রুমে বসে রোগী দেখি। আমি মনে করি, চাঁদপুর মেডিকেল কলেজের অবকাঠামোগত উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : শিক্ষার্থীদের কাছে আপনার প্রত্যাশা কী?

ডা. মো. হাসানুর রহমান : আমি চাই, শিক্ষার্থীরা যোগ্য চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবায় আত্মনিয়োগ করুক। তারা যেন আমার থেকেও ভালো চিকিৎসক হয় এবং সারা বিশ্বে সেবা দিতে পারে। রোগীদের প্রতি যত্নশীল আচরণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চাঁদপুর কণ্ঠ : মানবিক চিকিৎসক হওয়ার জন্য আপনার পরামর্শ কী?

ডা. মো. হাসানুর রহমান : প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে এবং সুন্দর আচরণ বজায় রাখতে হবে। আপনি ভালো চিকিৎসা জানেন, কিন্তু কর্কশভাবে কথা বললে তা মূল্যহীন হয়ে যায়। সেবার মাধ্যমে মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত।

চাঁদপুর কণ্ঠ : চিকিৎসা জীবনের সুখ-দুঃখের কিছু স্মৃতি জানতে চাই।

ডা. মো. হাসানুর রহমান : সুখের স্মৃতি হলোÑকুমিল্লা মেডিকেল কলেজে ইন্টার্নি করার সময় একজন মুমূর্ষু নারীকে রক্ত দিয়েছিলাম, যার ফলে তিনি সুস্থ হন। এটি আমাকে ভীষণ তৃপ্তি দিয়েছে।

দুঃখের স্মৃতিÑচট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে থাকাকালীন এক কাস্টমস কর্মকর্তার ছেলে সন্ত্রাসী হামলায় আহত হয়ে আমাদের কাছে আসে। আমরা সেবা দিয়ে তাকে বারডেমে পাঠাই। সিঙ্গাপুরে গিয়ে সুস্থ হলেও তিন মাস পর জটিলতায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনা আমাকে ভীষণ কষ্ট দেয়।

চাঁদপুর কণ্ঠ : পাঠদান করতে গিয়ে কী কী প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন?

ডা. মো. হাসানুর রহমান : আগেই বলেছি, আমাদের এখানে নানা সঙ্কট রয়েছে। আমরা জোড়াতালি দিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে যাচ্ছি। একটি ব্যাচের ক্লাস হলে অন্য ব্যাচকে বাইরে অপেক্ষা করতে হয়। মাইক্রোফোন বা প্রজেক্টরের সংকটও রয়েছে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করা জরুরি।

চাঁদপুর কণ্ঠ : অবসর সময় কীভাবে কাটান?

ডা. মো. হাসানুর রহমান : অবসরে কোরআন তেলাওয়াত করি এবং এখন পর্যন্ত সত্তরবার খতম করেছি। প্রচুর জিকির করি। পাশাপাশি টিভিতে খবর ও খেলা দেখি এবং পরিবারকে সময় দিই।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনাকে ধন্যবাদ।

ডা. মো. হাসানুর রহমান : আপনাকেও ধন্যবাদ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়