প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০৭
টেস্টোস্টেরন কমার কারণ ও প্রতিকার
প্রাকৃতিক নিয়মে বয়স বৃদ্ধি সাথে অনেক কিছুই কমতে পারে। এর মধ্যে পুরুষের হরমোন টেস্টোস্টেরনও আছে। তবে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে অভ্যস্ত হতে পারলে টেস্টোস্টেরনয়ের মাত্রা উন্নত রাখা সম্ভব।
টেস্টোস্টেরন যা করে : প্রথমত এই হরমোন তৈরি হয় অণ্ডোকষে। যা পুরুষের বেড়ে ওঠা, স্বভাব, পেশির বিস্তৃতি, হাড়ের ঘনত্ব ও যৌন আকাক্সক্ষাতে ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি মন-মেজাজ ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলে। “বয়ঃসন্ধিতে টেস্টোস্টেরন কম থাকে, বয়ঃসন্ধিতে থেকে বৃদ্ধি পায়, আর প্রতি বছর ধারাবাহিকভাবে এক শতংশ পরিমাণে কমতে থাকে। তবে ব্যতিক্রমও আছে”Ñহার্ভার্ড হেল্থ প্রকাশনায় মন্তব্য করেন মার্কিন চিকিৎসক জেনিফার ফিশার।
টেস্টোস্টেরন কমার কারণ : মস্তিষ্কের পিটুইটারি গ্রন্থি পুরুষের টেস্টোস্টেরন উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে। অণ্ডকোষে এই গ্রন্থি সংকেত পাঠিয়ে টেস্টোস্টেরন উৎপন্নের নির্দেশ দেয়। এই ঘুর্ণায়মান সংকেতের আদান প্রদান এবং হরমোনের মাত্রা সতর্কতার সাথে নিয়ন্ত্রিত হয় রক্তের মাধ্যমেÑব্যাখ্যা করেন ডা. ফিশার। এই প্রক্রিয়াতে কোনো প্রভাব পড়লে টেস্টোস্টেরন’য়ের মাত্রা কমতে পারে। বয়স বৃদ্ধি ছাড়াও এমন প্রভাবের মধ্যে রয়েছেÑস্থূলতা, দীর্ঘমেয়াদি রোগ, যেমনÑবৃক্কের সমস্যা, ডায়াবেটিস, ফুসফুসের রোগ এবং সিরোসিস, জটিল রোগ, যেমনÑহার্ট অ্যাটাক, কোনো ধরনের অস্ত্রোপচার বা মাথায় আঘাত, ‘গ্লুকোকোরটিকোইডস’ স্টেরয়েডস হরমোন এবং ‘ওপিওডিস’ জনিত সমস্যা, মানসিক চাপ, ঘুমের সমস্যা, টিউমার্স।
টেস্টোস্টেরন স্বল্প হওয়ার লক্ষণ : প্রাথমিক অবস্থায় তেমন কোনো উপসর্গ দেখা না দিলেও, যখন দেখা দেয় তখন বুঝতে হবে টেস্টোস্টেরন মাত্রা কমে অতিমাত্রায় প্রভাব ফেলেছে।
ডা. ফিশার বলেন, “কিছু সাধারণ লক্ষণের মধ্যে আছে ক্লান্তি বোধ, যোগাযোগ বা কথা বলায় সমস্যা, মেজাজের পরিবর্তন।”
এছাড়ও দেখা দেয়Ñযৌন আকাক্সক্ষা কমা, ‘ইরেক্টাইল ডিসফাংশন’, উর্বরতায় সমস্যা, শারীরিক পরিবর্তন, যেমনÑপেশির ক্ষয়, দেহের চবি বাড়া, চুল পাতলা হওয়া। এই ধরনের লক্ষণ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে টেস্টোস্টেরনয়ের মাত্রা পরীক্ষা করা উচিত।
প্রকৃতিক পন্থায় টেস্টোস্টেরনেয়ের মাত্রা বজায় রাখার উপায়
বয়সের সাথে এই হরমোন হ্রাসের গতি কমাতে জীবনযাপনে নির্দিষ্ট কিছু পরিবর্তনের প্রয়োজন পড়বে। ওষুধের পরিবর্তে বরং চিকিৎসকরা প্রায়ই এসব পরিবর্তনের বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং ওজন কমানো : ডা. ফিশার জানান, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা টেস্টোস্টেরনয়ের মাত্রা বজায় রাখার জন্য জরুরি। বিশেষ করে পেটের চারপাশ। কারণ এই অংশের চর্বি টেস্টোস্টেরনয়ের মাত্রা কমায়।
“ওজন কমানোর সাথে সুষম খাদ্যাভ্যাস ও প্রতিদিন ব্যায়াম করলে টেস্টোস্টেরন উৎপাদন ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে”Ñবলেন ‘আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ দিয় আমেরিকান মেডিকেল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশন’য়ের এই লেখক।
ব্যায়াম : নিয়মিত শরীরচর্চা হল টেস্টোস্টেরন বজায় রাখার সেরা উপায়ের একটা। ভারোত্তলন ও ‘কার্ডিও’ ব্যায়াম যেমনÑদৌড়ানো বা সাঁতার কাটলে এই হরমোন বৃদ্ধি পায়।
আরও কিছু পরিবর্তন জীবনযাত্রায় আনার প্রয়োজন পড়তে পারে। যেমনÑ
খাদ্যাভ্যাস : স্বাস্থ্যকর চর্বি, প্রোটিন এবং পুষ্টিকর ফল সবজি টেস্টোস্টেরনয়ের স্বাস্থ্যকর উৎপাদন ঘটায়। পেঁয়াজ, শামুক, চর্বিযুক্ত মাছ (ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস) এবং এক্সট্রাভার্জিন অলিভ অয়েল- এসব খাবার টেস্টোস্টেরন বাড়াতে সাহায্য করে।
অ্যালকোহল পরিহার : অতিরিক্ত মদ্যপান টেস্টোস্টেরনয়ের মাত্রা কমিয়ে দেয়। যৌনকার্যে ব্যাঘাত ঘটায় আর বীজের পরিমাণ কমায়। তাই অ্যালকোহল পরিহার করতে হবে বা গ্রহণ করতে হবে সীমিত।
ধূমপান : নিকোটিন টেস্টোস্টেরনয়ের মাত্রা কমাতে ভূমিকা রাখে।
পারিপার্শ্বিক দূষণ : প্লাস্টিক সামগ্রিতে থাকা কিছু রাসায়নিক, যেমনÑ‘বিসফেনল এ’ বা বিপিএÑহরমোন উৎপাদনের গ্রন্থির কাজ ব্যহত করতে পারে। ফলে টেস্টোস্টেরনয়ের মাত্রা কমার পাশাপাশি শুক্রাণুর সংখ্যাও কমতে পারে। তাই ‘বিপিএ-ফ্রি’ লেখা পণ্য ব্যবহার করার চেষ্টা করতে হবে।
টেস্টোস্টেরন উৎপাদনে ঘুমের ভূমিকা : “পর্যাপ্ত ঘুম টেস্টোস্টেরনয়ের মাত্রা বজায় রাখতে প্রয়োজন পড়ে। বেশিরভাগ টেস্টোস্টেরনয়ের নিঃসরণ ঘটে ঘুমের সময়” বলেন ডা. ফিশার।
‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ অর্থাৎ ঘুমের মাঝে নিঃশ্বাস কিছুক্ষণের জন্য আটকে যাওয়ার সমস্যা থেকে হরমোনের মাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, এরমধ্যে টেস্টোস্টেরনও আছে।
তাই সাত থেকে নয় ঘণ্টা মানসম্পন্ন ঘুমের চেষ্টা করতে হবে প্রতি রাতেÑপরামর্শ দিন এই চিকিৎসক। যদি ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ বা ঘুমের কোনো সমস্যা থাকে তবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে সমাধান করতে হবে।