শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২৯ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

আমের ফুল ও ফল ঝরা রোধের উপায় ও সার ব্যবস্থাপনা

আমের ফুল ও ফল ঝরা রোধের উপায় ও সার ব্যবস্থাপনা
কৃষিকণ্ঠ প্রতিবেদক ॥

আম হচ্ছে বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় ফল। আমকে তাই ফলের রাজা বলা হয়। আমের মুকুল আসা ও ফল ধরার সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাঙ্ক্ষিত ফলন পেতে এ সময় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া অপরিহার্য। কেননা সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে আমের উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

আম গাছে সঠিক সময়ে ও সঠিক মাত্রায় সার, সেচ, পোকামাকড়, রোগবালাই ব্যবস্থাপনা না করায় আমের ফুল ও ফল ঝরে যায় এবং সামগ্রিক ভাবে আমের উৎপাদন ব্যাহত হয়। আম উৎপাদনকারী বাংলাদেশের ১৪টি জেলার ২০টি উপজেলায় কৃষক পর্যায়ে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে আমের ফুল ও ফল ঝরা রোধের উপায় নিম্নরূপ--

ক) ফসল সংগ্রহের পর আগস্ট মাসে রোগাক্রান্ত মরা ও অপ্রয়োজনীয় ডালপালা, শাখা-প্রশাখা এবং পরগাছা ছেঁটে গাছে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে ।

খ) সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ হতে নিম্ন বর্ণিত উপায়ে সার প্রয়োগ করতে হবে।

গ) আমের মুকুল আসার ৭-১০ দিনের মধ্যে অথবা মুকুলের দৈর্ঘ্য ১ থেকে দেড় ইঞ্চি হলে (অবশ্যই ফুল ফুটে যাবার আগে) আমের হপার পোকা দমনের জন্য ইমিডাক্লোপ্রিড (ইমিটাফ, টিডো, কনফিডর) ৭০ ডব্লিউ জি বা অন্য নামের অনুমোদিত কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ০.২ গ্রাম হারে অথবা সাইপারমেথ্রিন (রেলোথ্রিন, কট, রিপকর্ড) ১০ ইসি বা অন্য নামের অনুমোদিত কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে বা অন্যান্য অনুমোদিত কীটনাশক এবং এথ্রাকনোজ রোগ দমনের জন্য ম্যানকোজেব (ইন্ডোফিল, ডাইথেন, কম্প্যানিয়ন ) এমণ্ড৪৫ নামক বা অন্যান্য অনুমোদিত ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে একত্রে মিশিয়ে আম গাছের মুকুল, পাতা, শাখা প্রশাখা ও কাণ্ডে ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। এরপর ৪-৫ সপ্তাহের মধ্যে আম মটরদানা আকৃতির হলে একই ধরনের কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক উল্লিখিত মাত্রায় একত্রে মিশিয়ে মুকুল পাতা ও কাণ্ড ও শাখা প্রশাখা ভিজিয়ে আর একবার স্প্রে করতে হবে। আম গাছে হপার পোকা এবং এথ্রাকনোজ রোগের হাত থেকে মুকুল রক্ষা করার জন্য উপরিউক্ত পদ্ধতিতে ২ (দুই) বার কীটনাশক এবং ছত্রাকনাশকের একত্রে প্রয়োগ করাই যথেষ্ট। তবে প্রয়োজনে দুই বা ততোধিক স্প্রে করা যেতে পারে।

এছাড়াও সাধারণত মাঘ-ফাল্গুনে আম গাছে মুকুল-ফুল-গুটি আসে। আমের এ অবস্থায় ছত্রাকজনিত রোগ পাউডারি মিলডিউ-এর আক্রমণ বেশি দেখা যায়। আক্রান্ত অংশে পাউডারের গুঁড়ার মতো এক প্রকার জিনিস দেখা যায়। রোগের ব্যাপক অবস্থায় আক্রান্ত অংশ সাদা পাউডারে মুকুল ঢেকে যায় এবং আমের গুটি ঝরে পড়ে। তাই পাওডারি মিলডিও রোগের জন্য ফুল আসার আগে একবার এবং ফুল ধরার পর একবার সালফারজাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন কুমুলাস ডিএফ, ম্যাকসালফার, থিওভিট, রনভিট দুই গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হয়।

ঘ) মাটিতে রসের অভাবে আমের গুটি ঝরে গেলে গাছের চার পাশে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। আমের গুটি মটরদানার মতো হলেই প্রথমে একবার গাছের গোড়ায় পানি সেচ দিতে হবে। প্রথম সেচ দেয়ার পর থেকে বৃষ্টিপাত না হওয়া পর্যন্ত ১৫ দিন পর পর সেচ দিতে হবে। অর্থাৎ আম গাছে ভরা মুকুলের সময় থেকে শুরু করে ১৫ দিন অন্তর অন্তর আম গাছের গোড়ায় ৪ বার সেচ দিতে হবে। সেচের পাশাপাশি হরমোন প্রয়োগ করেও আমের গুটি ঝরা কমানো যায়। যেমন, আমের গুটি মটরদানার মতো হলে প্রতি লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ইউরিয়া সার অথবা প্রতি ৪.৫ লিটার পানিতে দুই মিলিলিটার হারে প্লানোফিক্স হরমোন পানিতে মিশিয়ে আমের গুটিতে স্প্রে করলে গুটি ঝরা কমে যায়।

ঙ) আবার ফুল ফোটা অবস্থায় জিবেরেলিক অ্যাসিড প্রতি লিটার পানিতে ৫০ মিলিগ্রাম হারে স্প্রে করলেও আমের গুটি ঝরা কমে যায়। এছাড়াও প্রতি মুকুলে আমের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ফুল ফোটার ১০ ও ২০ দিন পর দুইবার ১০ লিটার পানিতে ছয় গ্রাম হারে বোরিক অ্যাসিড স্প্রে করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।

গাছে সার প্রয়োগ : চারা রোপণের পর গাছের সঠিক বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত সার প্রয়োগ করা আবশ্যক। গাছ বৃদ্ধির সাথে সাথে সারের পরিমাণও বাড়াতে হবে। বয়স ভিত্তিতে গাছপ্রতি সারের পরিমাণ নি¤েœ দেওয়া হলো-

উৎস : কৃষি প্রযুক্তি হাতবই-২০১৭

প্রয়োগ পদ্ধতি : বয়স ভেদে নির্ধারিত সম্পূর্ণ পরিমাণ গোবর, টিএসপি, জিপসাম, জিংক সালফেট এবং বরিক এসিড এবং অর্ধেক ইউরিয়া ও অর্ধেক এমওপি সার সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট ইউরিয়া ও এমওপি সার সমান দুই ভাগ করে এক ভাগ মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে যখন ফল মটর দানার মত হয় তখন এবং অবশিষ্ট ইউরিয়া ও এমওপি সার মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রয়োগ করতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, গাছের চারিদিকে গোড়া থেকে কমপক্ষে ১ থেকে ১.৫ মি. দূরে হালকাভাবে কুপিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে সার প্রয়োগ করতে হবে। গাছের বয়স বেশি হলে এই দূরত্ব বাড়তে পারে। সার প্রয়োগের পর হালকা সেচ দিতে হবে।

আম পূর্ণাঙ্গ ফলে রূপ নেয় কয়েকটি পর্যায় অতিক্রম করে। প্রথমে মুকুল, মুকুল থেকে ফুল, ফুল থেকে গুটি এবং গুটি বড় হয়ে আম ফলে রূপ নেয়। প্রতিটি পর্যায়েই আমগাছের বালাই ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব দিতে হবে। তবে মুকুল আসার আগে এবং পরে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কেননা, মকুল ঝরে পড়েই আমের উৎপাদন বহুলাংশে হ্রাস পায়।

বিঃ দ্রঃ গাছে মুকুল আসার আগে যেমন স্প্রে করার প্রয়োজন নেই, তেমনি মকুল ফোটা অবস্থায় কোনোভাবেই স্প্রে করা ঠিক হবে না। কেননা এই সময় প্রচুর সংখ্যক উপকারী পোকা আম বাগানে আসে এবং পরাগায়ণে সহযোগিতা করে। মনে রাখতে হবে যে, গাছে মুকুল আসার পর সঠিকভাবে দুবার স্প্রে করতে পারলেই গাছে প্রচুর আম থাকবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়