মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৫  |   ৩২ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৪৫

স্মৃতি দিয়ে ঘেরা

সামিরা মেহনাজ নুসরাত
স্মৃতি দিয়ে ঘেরা

চাঁদ সওদাগরের নামানুসারেই হোক আর চাঁদ ফকিরের নামানুসারেই হোক স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ব্র্যান্ডিং জেলার নাম ‘চাঁদপুর’। বিশ্বের অনন্য তিন নদীর সঙ্গমস্থল এবং শহরের কোলঘেঁষে প্রবাহিত বাংলাদেশের টেমস খ্যাত ডাকাতিয়া ও মেঘনার উর্বর পলিতে নির্মিত ‘ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর’ রুপ-মাধুর্যসহ সর্বক্ষেত্রে সত্যিই অপার্থিব। দেশ সেরা জ্ঞানীগুণী জন্মেছেন এ জেলায়। শিক্ষা, সংস্কৃতি,সাহিত্য, খেলাধুলা, রাজনীতিসহ সকল ক্ষেত্রেই অতুলনীয় চাঁদপুর। এতদ অঞ্চলের সেবা মহিয়সী বিনির্মাণে যে বিদ্যাপীঠটি অনন্য সাধারণ ভূমিকা রেখেছে, সেই আলোকবর্তিকাই আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা চাঁদপুর জেলার নারী শিক্ষার অন্যতম কালজয়ী এবং প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, চাঁদপুর।

চাঁদপুর-লাকসাম রেল লাইনের উত্তর পার্শ্বে লেক এবং লেকের উত্তর পার্শ্বে সবুজ গাছপালায় ঘেরা মনোরম পরিবেশে আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান অবস্থান। বিদ্যালয়ের সামনে দক্ষিণে শহিদ মুক্তিযোদ্ধা সড়ক এবং পূর্বে হাজী মহসিন রোড। চারদিকে পাকা দেয়ালবেষ্টিত আমার বিদ্যালয়টির সামনে রয়েছে একটি মাঠ। বিদ্যালয়টির দুইটি তিন তলা এবং একটি দোতলা (একাডেমিক ও প্রশাসনিক) ভবন রয়েছে।

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই আজ হতে আরও প্রায় একশত বছর পূর্বে ১৯২১ সালে আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ‘মাতৃপীঠ’ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়।

চাঁদপুর শহরের কালীবাড়ি মন্দিরে ডা. যোগেশ চন্দ্র সুর, চাঁদপুর কারমাইকেল প্রেসের স্বত্বাধিকারী অ্যাড. ধীরেন্দ্র চন্দ্র সোম, অ্যাড. বরদা প্রসন্ন মজুমদার এবং তাঁদের সুযোগ্য সহধর্মিণীরাসহ আরো অনেক শিক্ষানুরাগী মিলে জেলার মেয়েদের শিক্ষা প্রসারের জন্যে মাতৃপীঠ নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং সেই সিদ্ধান্তের আলোকে চাঁদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র জোড়পুকুর পাড়ে তখন বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। গুণীজনদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় অতি অল্প সময়ে বিদ্যালয়টির সুনাম ও মর্যাদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এর ছাত্রীসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলশ্রুতিতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় বিদ্যালয়টিকে সুপরিসর জায়গায় স্থানান্তর করার চিন্তাভাবনা করা হয়। তৎকালীন কয়েকজন বিদ্যোৎসাহী ও বিত্তবান ব্যক্তির প্রচেষ্টায় আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে ছায়াবাণী সিনেমা হলের মোড়ে শহিদ মুক্তিযোদ্ধা সড়কের উত্তর পার্শ্বে (বর্তমান অবস্থানে) স্থানান্তর করা হয়। সেই সময়ের নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দের আন্তরিক প্রচেষ্টায় বিদ্যালয়টির সুনাম ও মর্যাদা দিন দিন বাড়তে থাকে। এক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের সর্বাঙ্গীণ উন্নতি সাধনে তৎকালীন প্রধান শিক্ষিকা মিসেস সখিনা খাতুন, সহকারী শিক্ষিকা মিসেস রহিমা ওয়াদুদ ও প্রয়াত বাবু বিষ্ণুচরণ পাল মহোশয়ের অবদান অপরিসীম।

১৯৬৯ সালে আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে জাতীয়করণ করা হয়। পূর্বে একটা সময়ে আমার এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে ছাত্রীরা ১ম শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়নের সুযোগ পেতো। বর্তমানে ৪র্থ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত বিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সুযোগ বিদ্যমান। ২০০৯ সাল থেকে আমার বিদ্যালয়ে প্রভাতী ও দিবা দুই শিফট চালু করা হয়। বর্তমানে ও প্রভাতী এবং দিবা দুই শিফটই চালু রয়েছে।

আমার এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে প্রভাতী ও দিবা শিফট-এ ৪র্থ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত মোট ১৪৫৭ জন ছাত্রী বর্তমানে অধ্যয়নরত। আমার বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক, সিনিয়র শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকসহ মোট ৪৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা কর্মরত। একজন উচ্চমান সহকারী ও ৭ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আছেন। বিদ্যালয়টিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ চালু রয়েছে। আমার বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা প্রতিটি পরীক্ষায় প্রায় শতভাগ ফলাফল অর্জন করে থাকে। পড়াশোনার পাশাপাশি উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা খেলাধুলা, সাহিত্য এবং সাংস্কৃতিক নানা কাজে উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করে থাকে এবং কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে চলেছে। বিভিন্ন পর্যায়ে তাঁদের সাফল্য আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছে। শুধুমাত্র তাতেই শেষ নয়, শত বছরের পরিক্রমায় আমার এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রাক্তন অসংখ্য ছাত্রী রাষ্ট্রীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বরত ছিলেন এবং আছেন। আমার এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির সর্বাঙ্গীন উন্নতি ও ধারাবাহিক সাফল্যে সবাই গৌরবান্বিত হন।।

পরিশেষে আমার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে লেখা আমার একটি স্বরচিত কবিতার কয়েকটি চরণ :

‘সেই রাস্তাটি মনে পড়ে এখনো

যেখানে স্কুলটি আমার ছিলো দাঁড়িয়ে,

সেটি জুড়েই ছিল আমার ছোট পৃথিবী

আর এখন আমি অন্য পৃথিবীর বাসিন্দা।’

সামিরা মেহনাজ নুসরাত : দশম শ্রেণি, মাতৃপীঠ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়