শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯:৪৩

অবসর সুবিধা বোর্ড থেকে পাচ্ছেন না অর্থ

হাসপাতালের বিছানায় শিক্ষকের আর্তনাদ : অর্থাভাবে চিকিৎসা বন্ধ

চাঁদপুর কণ্ঠ রিপোর্ট।
হাসপাতালের বিছানায় শিক্ষকের আর্তনাদ :  অর্থাভাবে চিকিৎসা বন্ধ
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিক্ষক মো. তাফাজ্জল হোসেন।

ফরিদগঞ্জ উপজেলার ষোলদানা গ্রামের মো. তাফাজ্জল হোসেন। দীর্ঘ ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষা সেবায় নিজেকে নিবেদন করা এই শিক্ষক ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বর লতিফগঞ্জ ফাজিল মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। কিন্তু অবসর গ্রহণের পর থেকেই তিনি চরম অবহেলা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার শিকার হন। অবসরকালীন সুবিধার টাকা আজও তার হাতে পৌঁছেনি। আর এই দীর্ঘ অপেক্ষা এখন তার জীবন-মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি তিনি তার অবসর ও কল্যাণ সুবিধার জন্যে প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র বাংলাদেশ অবসর সুবিধা বোর্ডে জমা দেন। পরবর্তীতে কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে তার ব্যাংক হিসেবে পৌঁছালেও অবসর সুবিধার অর্থ এখনো আটকে আছে। এর মধ্যেই তার জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে দুটি প্রাণঘাতী রোগ—মূত্রথলির ক্যান্সার এবং পরবর্তীতে ফুসফুসের ক্যান্সার।

তাফাজ্জল হোসেন জানান, মূত্রথলির ক্যান্সার ধরা পড়ার পর থেকেই তার চিকিৎসা খরচ মেটাতে ঋণগ্রস্ত হতে হয়। আর ফুসফুসের ক্যান্সার ধরা পড়ার পর পরিস্থিতি আরও গুরুতর হয়ে উঠে। গত এক বছরে তিনি আহছানিয়া মিশন ক্যান্সার হাসপাতাল ও জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। কেমোথেরাপি, সিটি স্ক্যান এবং অন্যান্য জটিল চিকিৎসা চালাতে গিয়ে তিনি এখন প্রায় ২৫-৩০ লক্ষ টাকার ঋণে ডুবে গেছেন। অথচ এতোকিছুর পরও অবসর সুবিধার অর্থ তার হাতে এসে পৌঁছায়নি।

বর্তমানে তাফাজ্জল হোসেন জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি আছেন। তার ফুসফুসে পানি জমেছে, যা অপসারণে নিয়মিত চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে তার এই চিকিৎসা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তার পরিবারের সদস্যরা জানান, বারবার অবসর বোর্ডে ধর্ণা দিয়েও কোনো সাড়া মিলেনি। প্রক্রিয়াগত দীর্ঘসূত্রিতা ও জটিলতা যেন এক অসহায় মানুষের জন্যে মৃত্যুদণ্ড সমতুল্য হয়ে গেছে।

তাফাজ্জল হোসেন বলেন, "আমি সারাজীবন শিক্ষার আলো ছড়িয়েছি, কিন্তু আজ জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আমি অন্ধকারে পড়ে আছি। অবসর সুবিধার টাকাটা যদি আগে পেতাম, তাহলে হয়তো এতোদিনে চিকিৎসার খরচ নিয়ে এভাবে লড়াই করতে হতো না। আজ আমি বেঁচে থাকার জন্যে মানুষের দয়ার ওপর নির্ভরশীল।"

এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার সহকর্মী ও স্থানীয়রা। একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের প্রতি এমন উদাসীনতা শুধু অমানবিক নয়, বরং প্রক্রিয়াগত জটিলতার নিকৃষ্ট উদাহরণ।

সচেতন মহলের অভিমত, অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তাফাজ্জল হোসেনের অবসর সুবিধার অর্থ প্রদান করার জন্যে পদক্ষেপ নিতে হবে। তার এই মানবিক আর্তনাদ আমাদের প্রত্যেকের হৃদয়কে স্পর্শ করবে, যদি আমরা তার পাশে দাঁড়াই। একদিকে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই, অন্যদিকে ঋণের ভার—এই অসম যুদ্ধের অবসান হোক। প্রশাসন এবং সমাজের সবার প্রতি আহ্বান, তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন। আমরা কি একজন শিক্ষকের জীবন বাঁচানোর দায়িত্ব নিতে পারি না? প্রশাসনিক জটিলতার অবসান ঘটিয়ে তাফাজ্জল হোসেনের অবসর সুবিধার অর্থ দ্রুত তার হাতে তুলে দিন—এই দাবি ছাড়া আমাদের অন্য কিছু নেই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়