শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২১:১৭

চান্দ্রা বাজারের কাপড় ব্যবসায়ীকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর সত্যতা মিলেছে বিভাগীয় তদন্তে

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালকসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

অনলাইন ডেস্ক
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালকসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা

চাঁদপুর সদর উপজেলার ১২নং চান্দ্রা ইউনিয়নের স্বনামধন্য কাপড় ব্যবসায়ী ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য জহির মিজিকে ইয়াবা দিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে ফাঁসানোর ঘটনায় চাঁদপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক একেএম দিদারুল আলমসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

গতকাল চাঁদপুর সদরের মোকাম বিজ্ঞ আমলী আদালতে মামলাটি করেন ভুক্তভোগী জহির মিজি। মামলার অন্য আসামীরা হলেন: চাঁদপুর সদর উপজেলার বাখরপুর গ্রামের হারুনুর রশিদ গাজীর ছেলে মোঃ জামাল গাজী, চাঁদপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিদর্শক বাপন সেন, উপ-পরিদর্শক মোঃ মজিবুর রহমান, মোঃ পিয়ার হোসেন, সহকারী উপ-পরিদর্শক মোঃ আশ্রাফ আলী ও সিপাহী মোঃ সাইফুল ইসলাম। তাদের বিরুদ্ধে ১৪৩/২২০/৩২৩/৩৩০/৩৮৬/৩৮৭/৩৮৯ ও ৩৪ দন্ডবিধিতে মামলাটি করা হয়েছে।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, দুই নম্বর আসামী মোঃ জামাল গাজী এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি। তার বিরুদ্ধে ৪টি মাদক মামলা রয়েছে। মামলার অন্য ছয় আসামীরা সরকারি দায়িত্ব পালনের নামে জামাল গাজীসহ অন্য মাদক কারবারীদের কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়ে থাকে। মামলার প্রধান আসামী জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক একেএম দিদারুল আলমকে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে এলাকায় মাদক বিষয়ে তথ্য প্রদান করতো জহির মিজি। জহির মিজির তথ্যের ভিত্তিতে জামাল গাজীকে ২২০ পিচ ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে আদালতে চালান দেয়া হয়।

এদিকে তথ্য প্রদানের বিষয়টি জামাল গাজীকে জানিয়ে দেন একেএম দিদারুল আলম। এতে জামাল গাজী ক্ষিপ্ত হয়ে জহির মিজিকে ফাঁসাতে বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করতে থাকে। সে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী জামাল গাজীর স্ত্রী আমেনা বেগম বাদী হয়ে জহির মিজির বিরুদ্ধে চাঁদপুর সদর আমলী আদালতে ৩২৩/৩২৪/৩০৭/৩৫৪/৫০৬(২)/৩৪ ধারায় মামলা করেন। মামলা নং সিআর ৪৭৪/২০২০ইং। যদিও চাঁদপুর সদর থানার উপ-পরিদর্শক বিপ্লব কুমার নাহা মামলা তদন্ত করে সত্যতা পাননি। এরপরই জামাল গাজী পুনরায় ষড়যন্ত্র শুরু করে।

২০২০ সালের ৫ ডিসেম্বর শনিবার সকালে জহির বাড়ি থেকে বের হয়ে চৌরাস্তায় আসার পথে পূর্বপরিকল্পিতভাবে মাদকদ্রব্যের কর্মকর্তা দিদারুল আলম হাজির হলে জামাল গাজীসহ তারা ২/৩ জন জহিরকে ঘেরাও দিয়ে ধরে গুরুতর আঘাত করে। এ সময় জহিরের সঙ্গে থাকা (বিকাশ ব্যবসার কাজে ব্যবহৃত) ৫ লাখ ৬০ হাজার টাকার ব্যাগসহ তারা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় জামাল গাজী জহিরের লুঙ্গির কোমরে ইয়াবা গুঁজে দেয়ার চেষ্টা করে।

জহির বিষয়টি বুঝতে পেরে ইয়াবার প্যাকেট পাশের পুকুরে ফেলে দেয়। পুকুর থেকে ইয়াবার প্যাকেট আবারো উঠিয়ে জামাল গাজীর হাত থেকে জহির মিজির হাতে দিয়ে অন্য আসামীরা জহিরকে হেন্ডকাপ পরিয়ে গাড়িতে তুলে অফিসে নিয়ে আসার চেষ্টা করে। এ সময় মামলার সাক্ষীরা প্রতিবাদ করলে তাদের উপরও চড়াও হয় মামলার ৩/৪/৫/৬/৭নং আসামী। এ সময় জহিরের কাছে ইয়াবা পেয়েছে এমন কথা স্বীকার করতে চাপ প্রয়োগ করা হয়। এক পর্যায়ে মামলার প্রধান দুই সাক্ষী মোঃ মোক্তার আহমেদ ও জাহিদ হোসেন মিজিকে প্রস্তাব দেয়া হয় ৫ লাখ টাকা ঘুষ দিলে ইয়াবার সংখ্যা কম দেখানো হবে। শুধু তাই নয়, টাকা না দিলে ক্রসফায়ারেরও ভীতি দেখানো হয়।

তাদের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় জহির মিজিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ২০১৮-এর ৩৬(১)-এর ১০(ক) ধারা অনুসারে ৪২০ পিচ ইয়াবা জব্দ দেখিয়ে জি.আর ৪৬৯/২০২০খ্রিঃ মিথ্যা মামলা দিয়ে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হয়। এরপর জহিরকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো এবং মুক্তির দাবিতে হাজার হাজার মানুষ মানববন্ধন ও গণস্বাক্ষর দেয়। এমনকি পরিবারের তরফ থেকে চাঁদপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনও করা হয়।

এরই মধ্যে মামলার প্রধান সাক্ষী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের বরাবরে একটি অভিযোগ দেন। পরে এ ঘটনায় মহাপরিচালক বিভাগীয় কার্যালয় চট্টগ্রামকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়। চলতি বছরের ২৪ জুন বিভাগীয় তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রদান করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক হুমায়ুন কবির আখন্দ।

তিনি সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন, আসামীদের জবানবন্দিসহ বিভিন্ন তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে ৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে ব্যবসায়ী জহির মিজি ঘটনার শিকার বলে উল্লেখ করা হয় এবং তাকে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে মিথ্যা মামলায় জড়িতকরণের ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত সহকারী পরিচালক একেএম দিদারুল আলমের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থাগ্রহণের জন্যে আবেদন করা হয়।

এ প্রসঙ্গে চাঁদপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক একেএম দিদারুল আলম বলেন, আদালতে মামলা হয়েছে তা আমি শুনেছি। তবে ইতোপূর্বে যিনি তদন্ত রিপোর্ট দিয়েছেন এটির কোনো ভিত্তি নেই। এ কারণে নতুন করে আরো একটি তদন্ত টিম গঠন করে দিয়েছে হেড অফিস। বাদী পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডঃ এবিএম সানাউল্লাহ ও অ্যাডঃ হুমায়ুন কবির সুমন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়