প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২১, ১২:২২
হাশেম আলীর প্রশান্তির ঘুম
মাথার নিচে ক্রাচ, শার্টের পকেটে কয়েক ডজন কলম, বাম হাতটি নগর সড়কের ডিভাইডারে গজানো আগাছায়, ডান হাত ঝুলছে নিজের বিশ্বস্ত ক্রাচের উপর। নিজের একমাত্র পা সড়ক ডিভাইডারের সরু পাকা কার্নিশে দন্ডায়মান। যান্ত্রিক শহরে দুই লেনের রাস্তায় গাড়ির হর্ণ, কোলাহল, হকারের ডাক কোন শব্দই ভাঙ্গছে না সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারারো হাশেম আলীর ঘুম। এ ঘুম চিরপ্রশান্তির, এ ঘুমের মূল্য অমূল্য। পাশের ট্রাফিক সিগনালে আটকে থাকা বিলাশ বহুল গাড়ির ভেতরে থাকা মানুষটিও হয়তো এমন ঘুম ঘুমাননি অনেক দিন!
|আরো খবর
সড়ক দুর্ঘটনায় এক পা হারিয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করা হাশেম আলী চাইলে ভিক্ষাবৃত্তি করতে পারতেন। নিজের কাটা পা দেখিয়ে হাত পাততে পারতেন অন্যের কাছে। কিন্তু তা না করে কলম বিক্রি করেন ট্রাফিক সিগনালে। 'এ্যাই কলম, এ্যাই কলম, লাগবেনি ভাই একটা কলম....' এমন ডাকে ঢাকার গুলশান-২ এর গোল চত্তরের আশে-পাশে কলম বিক্রি করেন হাশেম আলী। ক্রাচে ভর করে গাড়ির গ্লাসে ঠক ঠক আওয়াজ করেই করুণার চাহনীতে বাড়িয়ে দেন একটি কলম। কলমের মূল্য ৫টাকা হলেও হাশেম আলীর কর্ম করে খাওয়ার প্রচেষ্টা দেখে অনেকেই প্রতি কলমের জন্য ২০ থেকে ৫০ টাকাও দিয়ে থাকেন। প্রতি কলমে ১০ টাকা পেলেই হাশেম আলীর মুখে নেমে আসে রাজ্যের হাসি, পৃথিবীর সব সুখ। এমন সুখী কয়জনই বা হতে পারেন?
আজ ১ নভেম্বর গুলশান-২ ওয়েস্টইনের সামনে এভাবেই ঘুমিয়ে থাকতে দেখা যায় হাশেম আলীকে। ঘণ্টা দেড়েক ঘুমের পর আবারো ক্রাচে ভর করে পাশের ট্রাফিক সিগনালে আটকে পড়া গাড়িতে কলম বিক্রি শুরু করেন। কাছে গিয়ে কেমন আছেন জানতে চাইলেই মুখ ভর্তি হাসি দিয়ে জানালেন, ভালোই আছি। হাশেম আলীর বাড়ি বরিশাল হলেও থাকেন বনানী লেকের পাড়। তিন ছেলে মেয়ে সবাই পড়ালেখা করে। স্ক্রী কাজ করেন মানুষের বাসায় আর নিজে কলম বিক্রেতা।
দীর্ঘ সময় আলাপচারিতার পর হাশেম আলী কথার ইতি টানলেন বুক ভরা গর্ব নিয়ে। জানালেন, 'আমার পা নাই তাতে কী? কর্ম কইরা খাই। মাইনষের কাছে খালি খালি হাত পাতি না। আমার পোলা মাইয়া কইবার পারে তাগো বাপ রাস্তায় কলম বেঁচে। খয়রাত (ভিক্ষা) করলেতো মাইনষে পোলা মাইয়ারে কইতো ফইরের (ভিক্ষুকের) পুত।'