রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৫, ১৭:৪৮

রায়পুর-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক : সাত দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরে গেছে ৩ প্রাণ, আহত ২০

রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি।।
রায়পুর-লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক : সাত দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরে গেছে ৩ প্রাণ, আহত ২০

লক্ষ্মীপুর-রায়পুর-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে প্রতিদিন ঘটছে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। গত এক সপ্তাহে ৩ জন নিহত ও ২০ জন আহত হয়েছে। নিহতের তালিকায় নারী ও শিশুই বেশি। চলতি বছরের জুলাই মাসেই এই আঞ্চলিক সড়কে এসব প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটেছে।

শনিবার (২৬ জুলাই ২০২৫) দুপুরে মাদরাসা ছুটি শেষে বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে এক বান্ধবীকে নিয়ে সড়ক পার হতে গিয়ে ফাতেমা আক্তার (১৪) নামে ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী নিহত হয়। এ সময় আহত হয় একই মাদরাসার সপ্তম শ্রেণীর দুই মেধাবী শিক্ষার্থী। দুপুরে বিচারের দাবিতে নিহতের স্বজন ও সহপাঠীরা তিন ঘন্টাব্যাপী সড়ক অবরোধ করেন। নিহত ফাতেমা আক্তার দালালবাজার এলাকার ইসমাইল হোসেনের মেয়ে।। আহত হালিমা আক্তার ও সুমি আক্তার একই শ্রেণীর শিক্ষার্থী।

এ ঘটনায় রোববার (২৭ জুলাই ২০২৫) সকালে থানার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, নিহত ফাতেমার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ আড়াই লক্ষ টাকা এবং আহত মরিয়মকে চিকিৎসা খরচ বাবদ ২ লক্ষ টাকা দেয়া হবে। এই মহাসড়কের রবিদাস- মিলগেট-পুকুরপাড়- রাখালিয়া স্টেশন চারটি বিপদজনক স্থানে স্পিড ব্রেকার দেয়া হবে। আনন্দ গাড়ির সময় পরিবর্তন করতে হবে। এই সিদ্ধান্ত উভয়পক্ষ মেনে নিয়েছে।

শুক্রবার সন্ধায় একই স্থানে কভার্ড ভ্যান ও সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে হয়। এ সময় রহিমা বেগম নামের এক নারীকে উদ্ধার করে ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যান। এ সময় সিএনজি যাত্রী এক নারীসহ ৪ জন আহত হয়। গত সোমবার বাসাবাড়ি বাজার এলাকায় সিএনজি ও মালবাহী ট্রাকের সংঘর্ষে এক নারী নিহত ও ৬ জন মারাত্মক আহত হয়েছেন। এছাড়াও গত এক মাসে তিনজন নিহত সহ প্রায় ৫০ জন ব্যক্তি মারাত্মক আহত হয় বলে রায়পুর সরকারি হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়।

শনিবারে এই মর্মান্তিক ঘটনার পর সড়ক বিভাগের পর্যবেক্ষণে দুর্ঘটনা বৃদ্ধির জন্য ১০টি কারণ চিহ্নিত করা হয়। এগুলো হলো-- ১. চালকদের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব ও বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো;২. দিনভিত্তিক চুক্তিতে চালক, কন্ডাক্টর অথবা হেল্পারের কাছে গাড়ি ভাড়া দেয়া; ৩. অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক নিয়োগ; ৪. সড়কে চলাচলে পথচারীদের অসতর্কতা; ৫. বিধি লঙ্ঘন করে ওভারলোডিং ও ওভারটেকিং; ৬. দীর্ঘক্ষণ বিরামহীনভাবে গাড়ি চালানো; ৭. ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি চলাচল বন্ধে আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব; ৮.জনবহুল এলাকাসহ দূরপাল্লার সড়কে ট্রাফিক আইন যথাযথভাবে অনুসরণ না করা; ৯. সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেলসহ তিন চাকার যানবাহন চলাচল বৃদ্ধি এবং ১০. স্থানীয়ভাবে তৈরি ইঞ্জিনচালিত ক্ষুদ্রযানে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন।

পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু আইন দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যাবে না। এর বিরুদ্ধে জাগরণ সৃষ্টি করতে হবে। সড়কের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্প্রসারিত ও আধুনিকায়ন করা আবশ্যক। নাহলে নিকট ভবিষ্যতে সড়ক দুর্ঘনা আরও ভয়ংকর রূপ নেবে।

রায়পুর থানার ওসি নিজাম উদ্দিন ভুইয়া বলেন, চলতি জুলাই মাসে রায়পুর-লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কেই বেশি সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে। আমার জানা মতে, দুজন নিহত ও ৩০-৪০ জনের মত আহত হয়েছেন। শনিবারের মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীর পরিবারকে আড়াই লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমাদের সবাইকে সচেতন-সতর্ক হতে হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়