প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১৯:৩৫
ফরিদগঞ্জের সেকদি-চান্দ্রা সড়ক
নিম্নমানের ইট দিয়ে সড়কের এইচবিবি’র কাজ

দু পাশে খাল ও ঝিল। মাঝখানে সরু সড়ক, সেই সড়ক দিয়ে চলাচল করছে প্রতিদিন হাজারো মানুষ। এই সড়কটি যদি যান চলাচল উপযোগী করা যায়, তবে এই অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিসহ দূরত্ব কমবে চান্দ্রা থেকে চাঁদপুর যাওয়ার। সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে চান্দ্রাবাজার থেকে বাইপাস সড়কটি সেকদি হয়ে টুবগি পর্যন্ত নির্মাণ কাজে হাত দেয় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। এরই অংশ হিসেবে চান্দ্রাবাজার থেকে সেকদি ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮২৫ মিটার সড়ক নির্মাণ শুরু হয় বিগত সরকারের সময়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ধীর গতিতে তা দু বছরেও শেষ হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ স্থানীয় লোকজন। কিন্তু হঠাৎ করেই কাজে গতি ফিরেছে। জনগণ দ্রত সড়কের কাজ শেষ হবে এমন ধারণায় খুশি হলেও ভেতরে চলে অন্য কাহিনী । স্থানীয় লোকজনের মতে, অনেকটা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো অবস্থা। নিচে নিম্নমানের ইট বিছিয়ে দ্রুত এর উপরে কিছুটা ভালো ইট বিছিয়ে ঠিকাদারের নির্দেশে দ্রুত লয়ে কাজ করে চলেছেন শ্রমিকরা।
|আরো খবর
হঠাৎ করেই কেনো সড়কের এইচবিবি (হেরিং বোন বন্ড)-এর কাজ দ্রুত করছে? অনিয়ম ঢাকতে এমন কাজ করছে? এলাকাবাসীর এমন প্রশ্নের জবাব ও অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে সরজমিনে গিয়ে।
জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ আইআরডিপি-৩ প্রকল্পের আওতায় ফরিদগঞ্জের বালিথুবা পশ্চিম ইউনিয়নের সেকদি-চান্দ্রা সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। বিগত সরকারের সময় সড়কের ৮শ' ২৫ মিটার ৫ কোটি ৯৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মাণের কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমজেএআইজেবি। সড়ক নির্মাণের প্রথম থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ধীর গতিতে মাটির কাজ ও সড়কের দু পাশের পাইলিং কাজ করে। কিন্তু গত কিছুদিন থেকে সড়কের মূল কাজ এইচবিবি’র কাজ শুরু করে তারা। তারা এবার ধীরগতির পরিবর্তে দ্রুত গতিতে কাজ করতে থাকে। এতে সন্দেহ দানা বাঁধে স্থানীয় লোকজনের । অভিযোগ উঠে, এইচবিবি কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিচে নিম্নমানের ইট বিছিয়ে দ্রুতলয়ে ওপরের স্তরের ইটও বিছিয়ে দিচ্ছে; উপরে দিচ্ছে বালি, যাতে নিচের ইট না দেখা যায়।
স্থানীয় লোকজনের এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার (২২ অক্টোবর ২০২৫) সরজমিনে গেলে অনিয়মের চিত্র সামনে চলে আসে। দেখা যায়, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা এইচবিবির কাজ করছেন। নিচে নিম্নমানের ইট বিছানোর পর দ্রুত উপরের স্তরের ইট বসাচ্ছেন। কেউ ইট বিছাচ্ছেন, আবার কেউ ওপরে বালি ছিটিয়ে দিচ্ছেন। অনিয়মের মধ্য দিয়ে কাজ চলমান থাকলেও প্রকৌশল বিভাগের কোনো কর্মকর্তাকে সেখানে পাওয়া যায়নি। ফলে সুযোগের সদ্ব্যবহার করার চেষ্টা করে ঠিকদারি প্রতিষ্ঠান।
গণমাধ্যমকর্মীরা সেখানে উপস্থিত হলে নিম্নমানের ইটের বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন নিম্নমানের ইটের কথা স্বীকার করে শ্রমিকদের ইট উঠিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন।
বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর পক্ষে মিজানুর রহমান, আব্দুল ওয়াদুদ ও ইব্রাহীম মিয়াসহ আরো কয়েকজন বলেন, সড়ক নির্মাণ কাজও ধীরগতিতে চলছিলো। এখন আবার তারা নিম্নমানের ইট এনে কাজ করছে, এই ইট বেশি দিন টিকবে না। আগেও তারা নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করেছে।
নিম্নমানের ইট ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত করে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে কাজের তদারকির দায়িত্বে থাকা হাবিবুর রহমান ভুট্টো ও শাকিল আহমেদ বলেন, কিছু ইট নিম্নমানের চলে এসেছে। আমরা সড়ক থেকে সেগুলো উঠিয়ে নিচ্ছি। এগুলোর পরিবর্তে ভালো ইট দিয়ে কাজ চলবে। ইতঃপূর্বে কাজের ধীরগতির বিষয়ে তারা বলেন, এলজিইডি তাদের ৬ মাস কাজ করতে দেয়নি।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবরার আহাম্মদ জানান, নিম্নমানের ইট ব্যবহারের বিষয়টি জেনেছি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলেছি নিম্নমানের ইট সরিয়ে নিতে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।