প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০:১৪
তীব্র যানজটের ভোগান্তি থেকে চাঁদপুর শহরবাসীকে মুক্তি দিতে উদ্যোগ
জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত মানছে না সিএনজি অটোরিকশা ও ইজিবাইক চালকরা

চাঁদপুর শহরবাসীকে যানজটের ভোগান্তি থেকে বাঁচাতে ইজিবাইক এবং সিএনজি অটোরিকশা চলাচলের একটা নিয়ম করে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। কালার ভিত্তিক গাড়ি একদিন পর পর চলাচল করবে। তাতে শহর ভয়াবহ যানজটের কবল থেকে রক্ষা পাবে। হয়েছেও তাই। এই নিয়ম চালুর প্রথমদিনই শহরের চিত্র ভিন্ন দেখা গেছে। চাঁদপুর শহরের কোনো সড়কেই যানজট ছিলো না। কিন্তু এই স্বস্তির চিত্র বেশিক্ষণ ছিলো না। তীব্র যানজটের ভোগান্তি থেকে জনগণকে রক্ষা করতে জেলা প্রশাসনের নেয়া এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে বাধ্য হলো ইজিবাইক এবং সিএনজি অটোরিকশা চালকদের রাস্তা অবরোধের কারণে। এসব চালক তাদের ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সামগ্রিক স্বার্থকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে পুরো শহরকে অবরুদ্ধ করে ফেলে। ফলে প্রশাসন বাধ্য হয়ে তাঁদের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটে।
চাঁদপুর শহরে কয়েক হাজার ইজিবাইক এবং সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করে থাকে। যাত্রীর তুলনায় কয়েক গুণ বেশি এসব গাড়ি সারাদিন শহরজুড়ে বিচরণ করে থাকে। যাত্রী ওঠানামা, গাড়ি থামানো এবং পার্কিংয়ে মানা হয় না কোনো ধরনের আইন বা নিয়ম কানুন। ফলে পুরো শহর তীব্র যানজটে নাকাল হয়ে থাকে।
শহরবাসীকে তীব্র যানজট থেকে রক্ষা করতে ইজিবাইক এবং সিএনজি অটোরিকশা চালক-মালিক প্রতিনিধি, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি নিয়ে জেলা প্রশাসন, পুলিশ এবং পৌর প্রশাসন বসে দীর্ঘ আলোচনার পর সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে, এসব গাড়ি দু কালার তথা সবুজ ও লাল রং করা হবে। একদিন এক কালারের গাড়ি শহরে চলাচল করবে। প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একদিন সবুজ রংয়ের আরেকদিন হলুদ রঙের সিএনজি এবং একদিন লাল রংয়ের ও আরেকদিন সবুজ রংয়ের ইজিবাইক চলাচলের নিয়ম চালু হওয়ার কথা থাকলেও তা মানতে অস্বীকৃতি জানায় চালকরা। এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার দিন বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে তারা প্রতিবাদে নেমে বিক্ষোভ মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেন। ইজিবাইক এবং সিএনজি অটোরিকশা চালকরা চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ বাইপাস সড়কের (সাবেক বঙ্গবন্ধু সড়ক) পূর্ব মাথা রেলক্রসিংয়ের সেখানে সড়ক অবরোধ করে রাখে। এখানে দীর্ঘ তিন ঘণ্টার অবরোধে ওয়্যারলেস থেকে গাছতলা ব্রিজ, রেলক্রসিংয়ের মাথা থেকে মিশন রোড পর্যন্ত সড়ক বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ লাইন পড়ে যায় যানবাহনের। এর প্রভাব পুরো শহরে পড়ে। এতে চরম ভোগান্তি এবং সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ে যাত্রী সাধারণ।
বুধবার সকাল ১১টার দিকে শহরের চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ বাইপাস সড়ক (সাবেক বঙ্গবন্ধু সড়ক), চাঁদপুর-রায়পুর আঞ্চলিক মহাসড়ক, পুরাণবাজার ও ব্রীজের গোড়াসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চালকরা সড়ক অবরোধ করে রাখে এবং বিক্ষোভ করে। এতে একদিকে থমকে যায় যান চলাচল, অন্যদিকে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। আটকেপড়া বাস, ট্রাক, তেলের লরি, সিএনজি অটোরিকশা, ইজিবাইক ও বিভিন্ন প্রাইভেটকারে থাকা যাত্রীরা চরম ভোগান্তির শিকার হন। অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়িতে বসে থেকে ক্লান্ত হয়ে পায়ে হেঁটে নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা দেন।
এ সময় ঘটনাস্থলে ছুটে যান চাঁদপুর ট্রাফিক বিভাগের টিআই মাহফুজুর রহমান, চাঁদপুর সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. বাহার মিয়া এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালান। প্রায় তিন ঘণ্টা অবরোধ চলার পর দুপুর ২টার দিকে মডেল থানার ওসি ও ট্রাফিক বিভাগের টিআই চালকদেরকে আগের নিয়মে গাড়ি চলাচলের আশ্বাস দিলে তারা অবরোধ তুলে নেয় এবং যান চলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
চালকদের অভিযোগ, রং ভিত্তিক একদিন পর পর সিএনজি-ইজিবাইক চলাচল ব্যবস্থা তাদের জীবিকা ব্যাহত হবে। মাসের পনর দিন গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখলে তারা আর্থিক অনটনে পড়বে। তাদের দাবি পূর্বের নিয়মেই সকল সিএনজি অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচল করবে। চালকরা অভিযোগ করে বলেন, আমাদের গাড়ির কারণে শহরে তেমন যানজট সৃষ্টি হয় না। যানজটের মূল কারণ হচ্ছে যখন তখন শহরে বিভিন্ন ডিস্ট্রিক্টের গাড়ি, ট্রাক এবং তেলের লরি প্রবেশ করায় বেশি যানজটের সৃষ্টি হয়। তাই আমাদের দাবি, দিনের বেলা শহরে এসব ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখে আমাদেরকে পূর্বের নিয়মে গাড়ি চালাতে দিতে হবে।
এদিকে চালকদের এমন বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধে কয়েক ঘন্টার ভয়াবহ দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হলে পুরো চাঁদপুর শহর অচল হয়ে পড়ে। উল্লেখিত সড়কগুলো দিয়ে কোনো প্রকার যানবাহন ও পথচারীরা ঠিকমতো হেঁটে যাওয়ারও পরিস্থিতি ছিলো না।
প্রশাসনের দাবি, শহরে ক্রমবর্ধমান যানজট, বিশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ঝুঁকি কমাতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো। পরে দুপুরের দিকে পরিস্থিতি বেগতিক দেখে চাঁদপুর ট্রাফিক বিভাগের টিআই মাহফুজুর রহমান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে চালকদের বলেন, জেলা প্রশাসক সিদ্ধান্ত দিয়েছেন আপাতত নতুন নিয়ম বাতিল করে পূর্বের নিয়মেই সিএনজি অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচল করবে। এমন ঘোষণার পরেও বিক্ষুব্ধ চালকরা তা মানতে নারাজ। তাদের দাবি ছিলো, জেলা প্রশাসক সশরীরে হাজির হয়ে তাদেরকে নিজ মুখে এ ঘোষণা দেয়ার। পরে চাঁদপুর মডেল থানার ওসিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে বুঝিয়ে পূর্বের নিয়মে গাড়ি চলাচলের আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন এবং যান চলাচল শুরু হয়।