রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৫, ০১:২২

অচিরেই সংস্কারের আশ্বাস পানি উন্নয়ন বোর্ডের

২০ বছর ধরে অরক্ষিত ও মৃতপ্রায় রঘুনাথপুর এলবিসি ক্যানেল

২০ বছর ধরে অরক্ষিত ও মৃতপ্রায় রঘুনাথপুর এলবিসি ক্যানেল
কবির হোসেন মিজি

চাঁদপুর সদর উপজেলার রঘুনাথপুরের এলবিসি ক্যানেলটি ২০ বছরের অধিক সময় ধরে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। এটি সংস্কারের অভাবে তার সৌন্দর্য হারিয়ে আজ মৃতপ্রায়। যে পাকা ক্যানেলটি একসময় ছিলো এলাকাবাসীর প্রাণ! এই ক্যানেল দিয়েই এক সময় নদীর জোয়ার-ভাটার স্বচ্ছ পানি প্রবাহিত হতো। সেই পানি স্থানীয় কৃষকরা ব্যবহার করতেন সেচ কাজে, গোসলসহ গৃহস্থালির কাজে। আবার কেউ বসতেন মাছ ধরার জন্যে। ক্যানেলের পানি এতোটাই স্বচ্ছ ছিলো যে, পানির নিচে কোনো বস্তু পড়লে সেটিও পরিষ্কার দেখা যেতো। এই ক্যানেলের সাথে স্থানীয়দের শৈশব এবং পুরানো অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে।

দীর্ঘ ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কোনো রক্ষণাবেক্ষণ না করায় সেই ক্যানেল এখন হারিয়েছে তার সব সৌন্দর্য। ক্যানেলের সেই পুরানো দৃশ্য এখন স্থানীয়দের কাছে ফেলে আসা পুরানো স্মৃতি বা কল্পনার চোখে দেখা খাল।

স্থানীয়দের কাছে জানা যায়, গত প্রায় ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কোনো প্রকার সংস্কার না হওয়ায় ক্যানেলটি আজ শুকিয়ে গেছে। জমেছে ময়লা-আবর্জনা, কচুরিপানা, দখলের মুখেও পড়েছে কিছু অংশ। ক্যানেলের দু পাশের ইটের গাঁথুনি ভেঙ্গেচুরে পড়ে আছে। যেটি একসময় প্রবহমান একটি পানির উৎস ছিলো, এখন তা মৃতপ্রায় এক জলাশয়ে পরিণত হয়েছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ক্যানেলটির প্রতি কর্তৃপক্ষের কোনো নজর পড়েনি। ক্যানেলটি তার যৌবন হারিয়ে ফেলায় কৃষি কাজে যেমন পানি সংকট দেখা দিয়েছে, তেমনি এলাকার পরিবেশ ও নান্দনিকতাও নষ্ট হয়েছে।

স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা হাজী মো. শাহজাহান বেপারী, আব্দুল গফুর, ফরিদ বেপারী, বাচ্চু খান, মোরশেদ খানসহ অনেকে বলেন, আমরা ছোটবেলায় এই ক্যানেলেই সাঁতার শিখেছি, মাছ ধরেছি। এই ক্যানেলটির বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট পাকা ঘাটের সিঁড়ি ছিলো, সেখান দিয়ে এলাকার লোকজন গোসল করতো। অনেকেই তার পার্শ্ববর্তী ফসলি জমিতে ক্যানেলটির পানি ব্যবহার করতো। এখন শুধু তা পুরানো স্মৃতি ছাড়া আর কিছুই নয়। এতো সুন্দর একটা জলধারা শুকিয়ে গিয়ে এখন শুধুই কচুরিপানা, লতাপাতা, কাদা আর প্লাস্টিক বোতলকে বুকে ধারণ করে পড়ে আছে।

আরেকজন স্থানীয় নারী বাসিন্দা জানান, আগে এই পানি দিয়ে গোসল করতাম, এখানে বাচ্চাদের খেলতে দিতাম। এখন তা কেবল দুঃখের স্মৃতি। তবে আশার কথা হচ্ছে, এই দীর্ঘ অবহেলার অবসান ঘটাতে চলেছে কর্তৃপক্ষ। চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান,

রঘুনাথপুর এলবিসি ক্যানেলটি সংস্কারের আওতায় আনা হয়েছে। আমরা অচিরেই কাজ শুরু করবো। এতে করে আবারও পানি প্রবাহ ফিরবে, স্থানীয়রা উপকৃত হবে।

এলাকাবাসী চায়, শুধু কাগজে কলমে না থেকে দ্রুত যেন বাস্তবায়ন হয় সংস্কার প্রকল্পটি। পাশাপাশি নিয়মিত পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমে যেনো ক্যানেলটি আবার ফিরে পায় তার আগের রূপ, যৌবন, প্রাণবন্ত ও স্বচ্ছ জলের ধারা।

এই ক্যানেল কেবল একটি পানি চলাচলের পথ নয়, এটি এলাকাবাসীর স্মৃতির অংশ, কৃষি নির্ভরতার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। তাই সময় এসেছে এটিকে বাঁচিয়ে তোলার।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়