হাজীগঞ্জ বাজারের যানজট নিরসনে আর কোনো ছাড় নয়

আমরা অনেক ছাড় দিয়েছি। আমাদের ছাড় দেয়াকে ফুটপাত দখলকারীরা দুর্বলতা মনে করে। যতবার তাদেরকে সরানো হচ্ছে, ততবার তারা ফের দখলে চলে আসছে। এখন থেকে আমরা আর মানবিক হতে পারবো না। তাদেরকে (হকার) মানবিকতা দেখাতে গেলে জনদুর্ভোগ চরমে উঠে। সোমবার (১৬ জুন ২০২৫) বিকেলে হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে হাজীগঞ্জ বাজারের যানজট নিরসনে মতবিনিময় সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন এই কথা বলেন।

ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় সভায় বাজারের যানজট নিরসনে হকার উচ্ছেদে ফুটপাত দখলমুক্তকরণের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক এই কঠোর অবস্থানের কথা জানান।

তিনি কঠোরভাবে আরো বলেন, হাজীগঞ্জের দুঃখ হচ্ছে হাজীগঞ্জ বাজারের যানজট। এই যানজট শুধু হাজীগঞ্জ বাজারেই সীমাবদ্ধ নয়, চাঁদপুর-হাজীগঞ্জ-কুমিল্লা-ঢাকা-রামগঞ্জ সড়কজুড়েও প্রভাব ফেলছে। চরম এক দুর্বিষহ অবস্থা। এই যানজট নিরসনে বেশকিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা বারবার সড়ক ও ফুটপাত দখলকারীদের অনুরোধ করেছি। বিভিন্ন সময়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও অভিযান পরিচালনা করেছি। তাতে কোনো লাভ হয়নি। আপনারা (সড়ক ও ফুটপাত দখলকারী) আমাদের মূল্যায়ন করেননি। সুতরাং এবার আমরা কঠোর হবো। যারা সড়ক ও ফুটপাত দখল করে আছেন, তাদের তালিকা করা হয়েছে। সবাইকে ডেকে এনে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিবো। এই সময়ের মধ্যে সড়ক ও ফুটপাত থেকে সরে যেতে হবে। যারা সরবেন না, তাদের মালামাল, ভ্যান গাড়িসহ যা পাওয়া যাবে সবকিছু জব্দ করা হবে। কোনো কিছুই ফেরৎ দেয়া হবে না।

সভায় তিনি আরো বলেন, সড়কে যানবাহন চলবে, আর ফুটপাত দিয়ে পথচারী হাঁটবে। কিন্তু আপনারা সড়ক ও ফুটপাত দখল করে দিনের পর দিন ব্যবসা করে যাচ্ছেন। আর ভুক্তভোগী হচ্ছেন যাত্রী ও পথচারীরা। এভাবে চলতে দেয়া যায় না। আমরা অনেক ছাড় দিয়েছি। কিন্তু আপনারা ছাড়ের মূল্যায়ন করেননি। এবার কঠোর হওয়ার পালা। বিষয়টি জানানোর জন্যে আজকে (সোমবার) আপনাদের ডেকে আনা হয়েছে।

মতবিনিময় সভা ছাড়াও জেলা প্রশাসক এদিন হাজীগঞ্জের ৫নং সদর ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়নমূলক কাজের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ, ভূমি অফিস, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র পরিদর্শন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নতুন ভবন ও গ্রাম আদালত বিষয়ক প্রশিক্ষণের উদ্বোধন, দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও অসহায়-দুঃস্থ, শারীরিক প্রতিবন্ধীদের মাঝে ঢেউটিন, চেক ও হুইল চেয়ার বিতরণ করেন।

উপজেলা পরিষদ মিলনাতয়নে গ্রাম আদালত বিষয়ক প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, সরকার আপনাদের আদালতের মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা করার ক্ষমতা দিয়েছে। অথচ অনেকেই আপনারা এর যথাযথ মূল্যায়ন করছেন না। আপনারা গ্রাম আদালত পরিচালনা না করে সালিস করেন। কিন্তু সালিস আর গ্রাম আদালতের মর্যাদা ও সম্মান এক নয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইবনে আল জায়েদ হোসেনের সভাপ্রধানে দিনব্যাপী উল্লেখিত এসব কার্যক্রমে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাত জাহান, জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার নাজমুল হুদা বিজয়, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আহমেদ তানভীর হাসান, হাজীগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রাজীব শর্মা, উপজেলা প্রকৌশলী মো. আজিজুল হক, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ চৌধুরী, সমাজসেবা কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রকৌ. আশিকুর রহমান, পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, হাজীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান মাহমুদ, সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইউসুফ প্রধানীয়া সুমন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি তুহিন হায়দার, সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ কামাল হোসাইন চৌধুরীসহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তা ও প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।