স্কলার্স ফোরাম বাংলাদেশের উদ্যোগ ঢাকায় ওলামা-মাশায়েখ ও বুদ্ধিজীবী সম্মেলন

স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জাতীয় ঐক্য, ইসলাম বিরোধী নারী কমিশনের প্রস্তাব বাতিল এবং মব ভায়োলেন্স বন্ধের দাবিতে স্কলার্স ফোরাম বাংলাদেশের উদ্যোগে ওলামা-মাশায়েখ ও বুদ্ধিজীবী সম্মেলন শনিবার (১৭ মে ২০২৫) রাজধানীর তোপখানা রোডস্থ বিএমএ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।

স্কলার্স ফোরাম বাংলাদেশের নির্বাহী কমিটির সদস্য, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও তাসাউফ গবেষক ডক্টর আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ মুহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম বারীয়া দরবার শরীফের পীর সাহেব হযরত মাওলানা মুফতি সৈয়দ শামসুদ্দোহা বারী। সম্মেলনে দেশবরেণ্য পীর মাশায়েখ, ওলামায়ে কেরাম, ইসলামিক স্কলার, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, পেশাজীবী ও বুদ্ধিজীবী মহলের প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।

মুহাম্মদ শফিক আল মুজাদ্দেদী ও মাওলানা আরিফুল ইসলাম আশরাফীর সঞ্চালনায় সম্মেলনে শায়খ সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া আজহারী স্বাগত বক্তব্য এবং মুফতি মাঞ্জুর হোসাইন খন্দকার শুভেচ্ছা বক্তব্য উপস্থাপন করেন। সম্মেলনে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেসীনের সভাপতি এএমএম বাহাউদ্দীন, চট্টগ্রাম জামেয়া আহমাদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার সাবেক অধ্যক্ষ আল্লামা মুফতি সৈয়দ ওছিউর রহমান, ঢাকা আহসানিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আবু জাফর মুহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, মাওলানা আনম মাসউদ হোসাইন আল কাদেরী, মুফতি কাজী মহিউদ্দিন লতিফী, ডক্টর মুহাম্মদ এমদাদুল হক, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. কামরুল ইসলাম, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের মহাসচিব অধ্যক্ষ মাওলানা শাব্বির আহমদ মোমতাজী, গাউছিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা এজহারুল হক, চাঁদপুর জেলা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাওলানা এএইচএম আহসান উল্লাহ, মুফতি জহিরুল ইসলাম ফরিদী, মাওলানা লোকমান হোসেন, শাহ মাহমুদ সিদ্দিকী, শাহ আব্দুল করিম, মাওলানা সৈয়দ আবু বকর, অ্যাড. জাহাঙ্গীর আলম রিজভী, ড.মোর্শেদ আলম ছালেহী প্রমুখ।

আলোচকগণ বলেন, নয় মাসের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রাম, ৩০ লক্ষ বীর শহীদদের আত্মত্যাগ এবং মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখতে এবং দেশের সার্বভৌমত্ব, সীমানা, স্থাপনা, সম্পদ রক্ষায় দল-মত, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের ঐক্যবদ্ধতার বিকল্প নেই। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জাতীয় ঐক্য গঠন এখন সময়ের দাবি।

নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে আলোচকগণ বলেন, নব্বই ভাগ মুসলমানের দেশে ইসলামের বিধান কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন ও নীতিমালা অলীক কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাঁরা বলেন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন যে প্রতিবেদন দিয়েছে সেটি শুধু ইসলাম ধর্ম নয় বরং অন্য ধর্ম, দেশীয় সংস্কৃতি ও সমাজ ব্যবস্থার সাথেও সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং তাতে সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের অবারিত সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আলোচকগণ এই নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন এবং কমিশন বাতিল করে প্রাজ্ঞ আলেম, আইনজ্ঞ, শিক্ষাবিদ ও নারী প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে নতুন কমিশন গঠনের দাবি জানান।

সম্মেলনের আলোচনায় উঠে আসে সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম আলোচিত বিষয়--মব ভায়োলেন্স। বক্তাগণ বলেন, মব ভায়োলেন্স একটি গুরুতর অপরাধ। এটি মারাত্মক সামাজিক ব্যাধিতে রূপ নিচ্ছে উল্লেখ করে আলোচকগণ বলেন, এখনই দ্রুত এবং শক্ত হাতে এই উগ্রবাদী অপরাধ প্রবণতা রোধ না করা হলে তা দেশের অভ্যন্তরীণ জননিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য চরম হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এ সময় সম্প্রতি গাজীপুরের একটি মসজিদের ইমাম মাওলানা রইস উদ্দিনকে মব সৃষ্টি করে নির্যাতন, পুলিশের দায়িত্বহীনতা ও বিনা চিকিৎসায় তার মৃত্যুর প্রসঙ্গ উঠে আসে। মাওলানা রইস উদ্দিন হত্যার তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কোনো আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় আলোচকগণ উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

এছাড়া সম্মেলনে আগত পীর মাশায়েখ ও আলেম-ওলামা তাঁদের বক্তব্যে বলেন, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে পীর আউলিয়াগণের দরবারে উগ্রবাদী হামলা, মাজার ভাংচুর, লুটপাট, ওরছ শরীফ ও সুন্নিদের মাহফিল, সামা-কাওয়ালি অনুষ্ঠান বন্ধ করা, সুন্নি মসজিদগুলো থেকে ইমাম-খতিব বিতাড়ন ও দখলসহ নানা ঘটনা জাতীয় সম্প্রীতি ও শান্তির জন্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। এ সব নিন্দনীয় ঘটনা ধর্মীয় অনুভূতির পাশাপাশি সুফী সংস্কৃতি ও বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আধ্যাত্মিক পরিমণ্ডলের উপরেও আঘাত হেনেছে। এতে করে নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠনে সূফী সমাজের অন্তর্ভুক্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে।

উল্লেখ্য, এই সম্মেলনে চাঁদপুর জেলা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাওলানা এএইচএম আহসান উল্লাহর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল অংশ নেয়।