মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৫  |   ৩১ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ২০:৪২

বাকিলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে ডেলিভারীর কিছু পরে হতভাগ্য মায়ের মৃত্যু

চারটি শিশু এতিম হওয়ার দায় কার?

কামরুজ্জামান টুটুল
চারটি শিশু এতিম হওয়ার দায় কার?
হাজীগঞ্জের বাকিলা উপ-স্বাস্থ্য কমিউনিটি ক্লিনিকে ডেলিভারীর কিছু পরে মারা যাওয়া হোসনে আরার চার এতিম সন্তান। ছবি: কামরুজ্জামান টুটুল।

হাজীগঞ্জের বাকিলা মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে নরমাল ডেলিভারীর কিছু পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে হোসনে আরা (৩০) নামে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এতে এতিম হয়ে গেলো চারটি সন্তান। তারা আর কখনো মায়ের যত্ন, আদর-ভালোবাসা পাবে না। সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া পুত্র সন্তানসহ ৪টি সন্তান এতিম হওয়ার দায় কার এমন প্রশ্ন সচেতন মানুষের। এদিকে নিহতের স্বামী ও ভাইসহ পরিবারের অন্যরা দাবি করেছেন, হোসনে আরার মৃত্যুতে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা শাহনেওয়াজ বেগম দায়ী। নিহত ওই নারী হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার বলাখাল পৌর ১নং ওয়ার্ডের নোয়া রাজা বাড়ির আবুল হাসেমের স্ত্রী ও বাকিলা গ্রামের গাজী বাড়ির বর গাজীর মেয়ে। ঘটনাটি ঘটে গত শনিবার (২৬ এপ্রিল ২০২৫)। সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুটি এবং অপর তিন সন্তান বর্তমানে তাদের নানার বাড়িতে রয়েছে। নিহত হোসনে আরার স্বামী আবুল হাসেম, ভাই আব্দুর রহমান গাজী ও মা পারুল বেগম জানান, গত শনিবার সকালে হালকা প্রসব ব্যথা উঠলে স্বামীকে সাথে করে হোসনে আরা বাবার এলাকা বাকিলাতে চলে আসেন। ৩ কন্যা সন্তানের জননী হোসনে আরা এদিন সকাল ৯টার দিকে বাকিলা মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে আসেন। এখানে তাকে ডেলিভারীর স্যালাইন পুশ করে শুইয়ে রাখে পরিদর্শিকা শাহনেওয়াজ বেগম। বেলা তিনটার দিকে নরমাল ডেলিভারীর মাধ্যমে হাসপাতালেই পুত্র সন্তানের জন্ম দেন হোসনে আরা। সন্তান জন্মদানের কিছু পর হতেই হোসনে আরার রক্তক্ষরণ শুরু হয়। মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছে বুঝতে পেরে পরিদর্শিকা শাজনেওয়াজ রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে রোগীর ভাই ও স্বামীর মাধ্যমে দুই দফা ট্রাক্সিল ইনজেকশন পুশ করেন। কিন্তু তাতে কাজ না হওয়াতে শিশুটির অসুস্থতার কথা বলে বেলা সাড়ে ৫টার দিকে রোগীকে চাঁদপুরে পাঠিয়ে দেন। এ তথ্য নিহত নারীর স্বামী, ভাই ও মায়ের। তারা জানান, নবজাতকের অসুস্থের কথা বলে শাহনেওয়াজ বেগম রোগীকে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। আমরা সেখানে নিয়ে জরুরি বিভাগে ভর্তি করানোর সাথে সাথে রোগীর অবস্থা দেখে চিকিৎসক বলেন, রোগীকে তো শেষ করে এনেছেন, যেখানে প্রথম ডেলিভারী হইছে সেখানে ভুল করেছে। রোগী বাঁচাতে হলে এখনই কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। এ সময় ইমার্জেন্সি চিকিৎসক রোগীর হাতে একটি স্যালাইন পুশ করে দ্রুত কুমিল্লা রেফার দেন। কুমিল্লা নেবার পথে কালিয়াপাড়া পার হবার পরেই রোগীর শরীর নিথর হয়ে পড়ে। তারপর কুমিল্লা মেডিকেলে নিয়ে গেলে সেখানে ইসিজি করিয়ে কর্মরত চিকিৎসক হোসনে আরাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় ওই চিকিৎসক বলেন, যিনি প্রথমে ডেলিভারী করিয়েছেন তিনি ভুলটি করেছেন। পাঁচ ভাইয়ের এক বোন হোসনে আরা চাঁদপুর যাওয়া ও কুমিল্লা যাওয়ার প্রথমদিকে বারবার পানি খেতে চেয়েছেন, আর তাকে এমন পরিস্থিতিতে পানি খাওয়ানো যাবে কিনা তা জানতে শাহনেওয়াজ বেগমকে অসংখ্যবার ফোন দেবার পরেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি বলে জানান তার ভাই আব্দুর রহমান গাজী। নিহতের স্বামী আবুল হাসেম বলেন, শাহনেওয়াজ বেগম যদি একটিবার বলতো আপনার স্ত্রীর রক্ত বন্ধ হয় না তাড়াতাড়ি নিয়ে যান। তাহলে মনকে বুঝাতে পারতাম। বাকিলা থেকে যখন চাঁদপুরে নিয়ে যাই তখন হোসনে আরার রক্তে পুরো সিএনজি ভেসে গেছে। মনে হয় সিএনজিতে একটি গরু জবাই করা হয়েছে। নিহতের মা পারুল বেগম জানান, বাকিলা হাসপাতালের শাহনেওয়াজ পুরা সময় আমাদের সাথে একটুও ভালো আচরণ করেননি। তারপরেও যদি আমার মেয়েটা বেঁচে থাকতো তবুও একটা কথা ছিলো। আমি এই চারটা ছোট ছোট নাতি-নাতনিকে কী করবো? এ বিষয়ে বাকিলা মডেল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের পরিদর্শিকা শাহনেওয়াজ বেগম বলেন, আমি আমার সাধ্যমতো কাজ করেছি, কোনো ত্রুটি করিনি। আমার কোথায় কী ভুল হয়েছে সেটাই তো বুঝি না। নিহত নারীর পরিবারের অভিযোগের বিষয়গুলো অস্বীকার করেন শাহনেওয়াজ বেগম। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মফিজুর রহমান জানান, ডেলিভারী পরবর্তী রক্তক্ষরণে এমন হয়েছে বলে ঘটনাটি শাহনেওয়াজ বেগম আমাকে জানিয়েছেন। আমি আমার ডিডিকে জানিয়েছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়