প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ২০:০৬
চাঁদপুর অযাচক আশ্রমে পুণ্য মহাসমাধি দিবসের আলোচনা সভায় বক্তাগণ
চাঁদপুরবাসী সৌভাগ্যবান যে, এখানে স্বরূপানন্দের মতো বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্ব জন্মগ্রহণ করেছেন

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে ভক্ত, অনুরাগীদের ব্যাপক উপস্থিতিতে সুমহান চরিত্র গঠন আন্দোলনের স্রষ্টা, অভিক্ষা মন্ত্রের উদগাতা, স্বাবলম্বন ও ব্রহ্মচর্য্যের প্রমূর্ত বিগ্রহ পরমারাধ্য গুরুদেব অখণ্ড মণ্ডলেশ্বর শ্রীশ্রী স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেব ও তাঁর সুযোগ্যা মানসকন্যা পরম পূজনীয়া শ্রীশ্রী মা মণি সংহিতা দেবীর পুণ্য মহাসমাধি দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে চাঁদপুর অযাচক আশ্রমে।
এ উপলক্ষে রোববার (২৭ এপ্রিল ২০২৫) পরমারাধ্য স্বরূপানন্দ পরমহংসদেবের পুণ্য জন্মস্থান চাঁদপুর অযাচক আশ্রমে ভোর সাড়ে ৫টায় ঊষা কীর্তন, সকাল ৮টায় মঙ্গল শঙ্খধ্বনি, শ্রীশ্রী অখণ্ড সংহিতা পাঠ, সকাল সাড়ে ৮টায় সমবেত উপাসনা শেষে ব্রহ্মগায়ত্রী গীত, নীরব মহানাম জপযজ্ঞ, সকাল পৌনে ১১টায় অনুষ্ঠিত হয় হরি ওঁ মহানাম সংকীর্তন।
দুপুর সাড়ে ১২টায় অনুষ্ঠিত হয় শ্রীশ্রী বাবা মণি ও তাঁরই সুযোগ্যা মানস কন্যা সংহিতা দেবী স্মরণে স্মৃতিচারণ সভা। এতে মুখ্য আলোচকের বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর, বিশিষ্ট স্থপতি কানুলাল দাস।
চাঁদপুর অযাচক আশ্রম পরিচালনা পর্ষদের সহ-সভাপতি দুলাল চন্দ্র দাসের সভাপ্রধানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা চরিত্রগঠন আন্দোলন পরিষদের উপদেষ্টা রোটারিয়ান কাজী শাহাদাত, চাঁদপুর হরিবোলা সমিতির সভাপতি অজয় কুমার ভৌমিক, জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের প্রাক্তন আহ্বায়ক অধ্যক্ষ প্রফেসর রঞ্জিত কুমার বণিকসহ অন্য আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ।
সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সম্মিলিত অখণ্ড সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি তাপস কান্তি সরকার। অনুষ্ঠানে শ্রীশ্রী অখণ্ড সংহিতা পাঠ করেন চাঁদপুর অযাচক আশ্রম বোর্ড অব ট্রাস্টের সদস্য অঞ্জন কুমার দাস।
স্মৃতিচারণ সভা সঞ্চালনা করেন অযাচক আশ্রম বোর্ড অব ট্রাস্টের সদস্য প্রণব কুমার সাহা।
স্মৃতিচারণ সভায় বক্তাগণ স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেব ও তাঁরই সুযোগ্যা মানস কন্যা সংহিতা দেবীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, পৃথিবীতে যুগে যুগে অনেক সাধকের আবির্ভাব ঘটেছে সমাজ সংস্কার ও মানুষের কল্যাণ সাধনের জন্যে। এঁদের মাঝে স্বামী স্বরূপানন্দ ও সন্ন্যাসিনী সংহিতা দেবীও একজন। মহান সাধক স্বামী স্বরূপানন্দ ও মহান সন্ন্যাসিনী সংহিতা দেবী শুধু নিজেদের ধর্মের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকেন নি। এঁরা অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে সকল ধর্মের মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন। মানুষকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে প্রেরণা যুগিয়েছেন, সৎকর্মে উদ্বুদ্ধ করতে চেষ্টা করেছেন। তাঁরা কোনো জাত পাতের বিচার বিশ্লেষণ করেন নি, প্রকৃত মানুষ হওয়ার দীক্ষায় দীক্ষিত করেছেন। ভিক্ষাবৃত্তিকে ঘৃণা করেছেন। সকল ধর্মের মানুষকে আপন করে কাছে টেনেছেন। তাঁর সেই মহান নীতি-আদর্শের জন্যেই আজ অযাচক আশ্রমে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষ সকল মানুষের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন পূজামণ্ডপ থেকে শুরু করে বিভিন্ন মন্দিরে হামলার খবর শুনতে পেলেও অযাচক আশ্রমে হামলা বা ভাংচুরের মতো ঘটনা সম্পর্কে আমাদের জানা নেই। কারণ স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেব ছিলেন অসাম্প্রদায়িকতার প্রতীক। এই মহান সাধকের চিন্তা-চেতনা সমাজের সকল স্তরে, পৃথিবীর সকল প্রান্তে ছড়িয়ে দিতে হবে।
বক্তাদের মধ্যে প্রবীণ ব্যক্তিত্ব অজয় ভৌমিক বলেন, চাঁদপুরবাসী সৌভাগ্যবান যে, এখানে স্বামী স্বরূপানন্দের মতো বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্ব জন্মগ্রহণ করেছেন। বক্তাগণ স্বামী স্বরূপানন্দের পুণ্য জন্মস্থানে অবকাঠামোগত নানা উন্নয়নের জন্যে চাঁদপুর অযাচক আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ প্রয়াত কবিরাজ সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
বক্তারা বলেন, আজকে চাঁদপুর অযাচক আশ্রমে বিশ্বনন্দিত ধ্যান মন্দির নির্মাণ হচ্ছে। দেশ বিদেশের অগণিত ভক্ত অনুরাগীরা তা দর্শনে চাঁদপুর আসবেন। চাঁদপুরের খ্যাতি, পরিচিতি আরো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে। কিন্তু প্রয়াত কবিরাজ সুখরঞ্জন ব্রহ্মচারীকে ভুলে গেলে চলবে না। তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টা আর বৃহৎ কর্মপরিধি ছিলো বলেই আজ চাঁদপুর অযাচক আশ্রম এমন সুন্দরভাবে গড়ে উঠছে, আমরা এই মানুষটির প্রতিও গভীর শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তারা বিশ্বনন্দিত ধ্যান মন্দির নির্মাণে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
স্মৃতিচারণ সভা শেষে শান্তি বাচনের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সমাপ্তি ও মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানকে ঘিরে সকাল থেকেই চাঁদপুর শহরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্ত অনুরাগীগণ আশ্রম প্রাঙ্গণে সমবেত হতে থাকেন। তারা সমবেত উপাসনায় যোগ দিয়ে দেশের শান্তি ও নিজেদের কল্যাণ কামনা করেন। তাদের উপস্থিতি আর হরি ওঁ কীর্তনে মুখরিত হয়ে উঠে আশ্রমস্থল। অনুষ্ঠান শেষে নারী পুরুষ পরম শ্রদ্ধাভরে প্রসাদ গ্রহণ করেন। পুণ্য মহা সমাধি দিবস পরিণত হয় মহামিলন মেলায়।
পুণ্য মহাসমাধি দিবসের বিভিন্ন কর্মসূচিতে জেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট বিনয় ভূষণ মজুমদার, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তমাল কুমার ঘোষ, জেলা জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সভাপতি পরেশ মালাকার, চাঁদপুর রাম ঠাকুর বাড়ি দোল মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক গোপাল চন্দ্র সাহা, চাঁদপুর অযাচক আশ্রম বোর্ড অব ট্রাস্টের সাধারণ সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, চাঁদপুর অযাচক আশ্রম পরিচালনা পর্ষদের সাধারণ সম্পাদক তাপস চন্দ্র দাস, বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ ও ভক্ত অনুরাগীদের উপস্থিতি ছিল ব্যাপক।
সাফল্যজনক এই মহতী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে পুণ্যজন্মস্থান চাঁদপুর অযাচক আশ্রম, চাঁদপুর অযাচক আশ্রম বোর্ড অব ট্রাস্ট এবং বাংলাদেশ সম্মিলিত অখণ্ড সংগঠনের সেবক-সেবিকাবৃন্দ।
ক্যাপশন : চাঁদপুর অযাচক আশ্রমে অখণ্ড মণ্ডলেশ্বর স্বামী স্বরূপানন্দ পরমহংসদেব ও তাঁরই মানসকন্যা সংহিতা দেবীর পুণ্য মহাসমাধি দিবসের আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচকের বক্তব্য রাখছেন চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর কানুলাল দাস। পাশে বিশ্ব শান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনারত ভক্তবৃন্দ।