শুক্রবার, ০১ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুরে রাজনৈতিক মামলায় আসামীদের আটক অভিযান অব্যাহত। যুবলীগ, কৃষকলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৫ নেতা-কর্মী আটক
  •   ছেঁড়া তারে প্রাণ গেল যুবকের
  •   চাঁদপুরে গণঅধিকার পরিষদের ৩য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন
  •   রাজধানীতে কচুয়ার কৃতী সন্তানদের সংবর্ধনা
  •   সম্প্রীতির চমৎকার নিদর্শন আমাদের বাংলাদেশ --------------জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন

প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

একই ব্যক্তি দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক!

একই ব্যক্তি দুই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক!
মোঃ আবদুর রহমান গাজী ॥

একই ব্যক্তি দুই প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন। প্রতি মাসে দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে বেতনও নিচ্ছেন। সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে, সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে দীর্ঘ ৯ বছর দুই প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করে বেতন ভোগ করছেন। ১৭ মাস পর গতকাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললেও এমপিও পদে যোগদান না করে খন্ডকালীন পদে যোগদান করেন ও ক্লাস পরিচালনা করেন।

কীভাবে দুটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছেন? তিনি কি বৈধভাবে দুটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছেন? চাঁদপুর কণ্ঠের অনুসন্ধানী রিপোর্টে বেরিয়ে এসেছে এসব প্রশ্নের উত্তর।

মাহমুদ আলম লিটন বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে এসএসসি এবং এইচএসসি পাস করে চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকে ইংরেজি বিষয়ে অনার্স পাস করেন। তিনি বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজে খণ্ডকালীন ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন ২০১২ সালের প্রথম দিকে। বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের নন এমপিওভুক্ত বেতনের তালিকায় দেখা যায়, মাহমুদ আলম লিটন কলেজের প্রভাষক হিসেবে নিয়োজিত আছেন এবং এর জন্য প্রতি মাসে তিনি প্রতিষ্ঠান থেকে ৮ হাজার টাকা বেতন নেন। এছাড়াও গতকাল ১২ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাস রুটিনে বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে সপ্তাহে শনি থেকে বৃহস্পতিবার ৬টি ক্লাসে তার নাম রয়েছে। গতকাল রোববার সরেজমিনে বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ক্লাস রুটিন অনুযায়ী সাড়ে ১২টায় মাহমুদ আলম লিটন মানবিক বিভাগের ইংরেজি ক্লাস নিচ্ছেন। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়।

এদিকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক তালিকায় দেখা যায়, মাহমুদ আলম লিটন লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার রায়পুর কামিল মাদ্রাসার (ইআইএন-১০৭০৩০) ইংরেজি প্রভাষক হিসেবে নিয়োজিত আছেন। যেখানে তার নামীয় ইন্ডেকস নং এন-২০৯৭৩৩৭। দেখা যায়, শিক্ষক মাহমুদ আলম লিটন এমপিওভুক্ত এই প্রতিষ্ঠানে চাকরির কারণে প্রতি মাসে সরকার থেকে ২৬ হাজার ৯শ’ আশি টাকা গ্রহণ করছেন। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) ওয়েবসাইটে দেখা যায়, মাহমুদ আলম লিটন ২০১২ সালের ১ সেপ্টেম্বর এই পদে যোগদান করেন এবং একই বছরের নভেম্বরের ১ তারিখে তিনি এমপিও তালিকাভুক্ত হন।

এ বিষয়ে বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মোশারফ হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, মাহমুদ আলম লিটন এ বিদ্যালয়ের একজন খণ্ডকালীন শিক্ষক। তিনি এ প্রতিষ্ঠানে দৈনিক হাজিরা হিসেবে বেতন গ্রহণ করেন। যদি তিনি ক্লাস না করেন তাহলে তিনি বেতন পান না। তিনি আরো জানান, মাহমুদ আলম লিটন কোনো প্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক হিসেবে নিয়েজিত আছেন বলে তিনি জানেন না।

এদিকে বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের খ-কালীন শিক্ষকদের বেতনের তালিকায় দেখা যায়, করোনাকালীন ছুটির দীর্ঘ সময়েও মাহমুদ আলম লিটন প্রতিষ্ঠানে কোনো ক্লাস না করেও প্রতি মাসে ৮ হাজার টাকা করে পূবালী ব্যাংক বাবুরহাট শাখার মাধ্যমে গ্রহণ করেন।

এমপিওভুক্ত শিক্ষক নীতিমালায় দেখা যায়, এমপিওভুক্ত কোনো শিক্ষক-কর্মচারী একই সাথে একাধিক কোনো পদে চাকরিতে বা আর্থিক লাভজনক কোনো পদে নিয়োজিত থাকতে পারবেন না। এটি তদন্তে প্রমাণিত হলে সরকার তার এমপিও বাতিলসহ দায়ী ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণ করতে পারবে।

এদিকে বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জানা যায়, মাহমুদ আলম লিটনের কাছে প্রাইভেট পড়তে শিক্ষার্থীদেরকে তিনি বাধ্য করতেন। তার কাছে না পড়লে পরীক্ষার খাতায় নাম্বার কম দিতেন এবং ক্লাসে বিভিন্ন সময়ে অপমানজনক কথা বলতেন। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানায়, মাহমুদ আলম স্যারের কাছে যারা প্রাইভেট পড়তো, তাদেরকে পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন দেয়া হতো। এছাড়াও যারা খাতায় কম নাম্বার পেতো এবং ফেল করতো, তাদেরকে বাসায় নিয়ে পুনরায় খাতায় লিখিয়ে নাম্বার দেয়া হতো।

জানা যায়, মাহমুদ আলম লিটনের বাড়ি শরীয়তপুর জেলায়। শিক্ষাজীবনে বাবুরহাটস্থ বোনের বাসা থেকেই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাগ্রহণ করার ফলে এই এলাকায় তার পরিচিতি বাড়ে। ছাত্রজীবন থেকে মাহমুদ আলম লিটন টিউশনি পেশায় লিপ্ত ছিলেন। ধীরে ধীরে এ পেশাটি তার লোভে পরিণত হওয়ার ফলে তিনি এই এলাকায় কোচিং বাণিজ্য গড়ে তোলেন।

রায়পুর আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষের সাথে এ বিষয়ে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তমার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়