প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১০:০৯
ফরিদগঞ্জে চাঁদাবাজী করা সেই সাংবাদিক বাগেরহাটে আটক
২০১৯ সালে ফরিদগঞ্জ এআর পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষককে ভয়ভীতি দেখিয়ে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা নিয়ে গা ঢাকা দেয়া কথিত সেই সাংবাদিক বাগেরহাটে আটক হয়েছে। সাপ্তাহিক 'অপরাধ তথ্যচিত্র' পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক পরিচয় দিয়ে ফরিদগঞ্জে চাঁদাবাজি করে সফল হলেও শেষ রক্ষা হয়নি বাগেরহাটে।
|আরো খবর
গতকাল ৭ সেপ্টেম্বর (বুধবার) বাগেরহাটের গোটাপাড়া ইউনিয়নের বেলায়েত হোসেন দাখিল মাদ্রাসায় একই পন্থায় চাঁদাবাজী করতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়েছে মো. ফজলুল হক (৬২) ও বরাদুল ইসলাম (৪৬) নামে দুই প্রতারক।
২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে সাদা একটি প্রাইভেটকারে করে ক্যামেরা হাতে দুই ব্যক্তি প্রবেশ করেন ফরিদগঞ্জ এআর পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ে। স্কুলে গিয়েই ভিডিও করতে শুরু করেন ফটোসাংবাদিক পরিচয় দেয়া বরাদুল ইসলাম। জাতীয় সাপ্তাহিক অপরাধ তথ্যচিত্র পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক পরিচয় দেয়া মোঃ ফজলুল হক একের পর এক স্কুলের অসংগতিগুলো সামনে নিয়ে আসেন। স্কুল চলাকালীন এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কোচিং করানো হচ্ছে কেন? তাদের কাছ থেকে কোচিং ফি নেয়া হলো কেন? স্কুলের রুটিনে এসেম্বলি ক্লাসের নাম নেই কেন? এমন নানা প্রশ্নে প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিনকে জর্জরিত করেন।
কথিত সাংবাদিক মোঃ ফজলুল হক এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস রুমে গিয়ে তাদের বক্তব্য ভিডিও রেকর্ড করেন। টিচার্স রুমে প্রধান শিক্ষক ও সহকারি প্রধান শিক্ষকের উপস্থিতে প্রায় সকল শিক্ষককে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকেন। এ সময় যিনি কথা বলতেন তার দিকেই ভিডিওম্যান ভিডিও ধরে রাখতেন। তিনি প্রধান শিক্ষকসহ স্কুলের বহু শিক্ষকদের বহু গোপন তথ্য জানেন বলে দাবী করেন। মন্ত্রণালয় থেকে সব তথ্য তিনি সংগ্রহ করেছেন বলেও জানান। সাপ্তাহিক 'অপরাধ তথ্যচিত্র'তে তিনি পর্যায়ক্রমে সব প্রকাশ করবেন বলে হুশিয়ারি দেন।
পরে প্রধান শিক্ষক রফিকুল আমিন আড়ালে গিয়ে তাকে এসব প্রকাশ না করার অনুরোধ জানালে মোঃ ফজলুল হক ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেন। প্রধান শিক্ষক এত টাকা দেয়াটা ব্যয়বহুল বললে শিক্ষকদের সম্মানে ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করেন। শেষে তাকে বহু অনুরোধ করে প্রধান শিক্ষক ২৫ হাজার টাকা দিতে রাজি হন। যাওয়ার সময় তাদের গাড়ি ভাড়া ও দুপুরের খাবারের জন্য নেন আরও ৫ হাজার টাকা।
৩০ হাজার টাকা নিয়ে সাদা প্রাইভেটকারে চড়ে দ্রুত স্কুল ত্যাগ করা সেই কথিত সাংবাদিক মোঃ ফজলুল হক ও তার সহকর্মী ফটোসাংবাদিক পরিচয় দেওয়া বরাদুল ইসলাম একই কাজ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে অব্যাহত রাখেন। অতঃপর গতকাল বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকালে বাগেরহাট সদর উপজেলার মুক্ষাইট এলাকা থেকে এই দুই প্রতারকে আটক করে স্থানীয়রা। পরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করার পর খবর পেয়ে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের আটক থানায় নিয়ে আসে।
বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে. এম. আজিজুল ইসলাম বলেন, 'গোটাপাড়া ইউনিয়নের বেলায়েত হোসেন দাখিল মাদ্রাসা'র শিক্ষক শেখ আব্দুল হান্নানের কাছে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের কোচিং করানোর অভিযোগ এনে দুই প্রতারক চাঁদা দাবি করে। শিক্ষক আব্দুল হান্নান প্রতারকদের প্রতারণা বুঝতে পেরে কথিত দুই সাংবাদিককে টাকা গ্রহণ করার জন্য ৮ সেপ্টেম্বর সকালে আসতে বলেন। এর মধ্যে তিনি স্থানীয়দের জড়ো করে রাখেন। বুধবার সকালে চাঁদার টাকা নিতে আসলে স্থানীয় লোকজন আটক করে ৯৯৯ নম্বারে ফোন দেয়। এরপর ৯৯৯ থেকে বাগেরহাট সদর থানাকে জানালে পুলিশ তাদেরকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।
এ ঘটনায় মাদ্রাসা শিক্ষক শেখ আব্দুল হান্নান বাদী হয়ে চাঁদাবাজি মামলায় বাগেরহাট থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। আটককৃত প্রতারক ফজলুল হকের বাড়ি খুলনার লবণচোরা এলাকায় ও মো. বারাদুল ইসলামের বাড়ি বাগেরহাটের কচুয়ায় উপজেলার রাঢ়িপাড়া ইউনিয়নের খলিশাকালী গ্রামে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।