প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২২:১৯
চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হাজীগঞ্জে স্থাপনের দাবী জোরালো হচ্ছে
জেলার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টি ভৌগলিকভাবে জেলার মধ্যবর্তী স্থান হাজীগঞ্জে স্থাপনের জন্য দিনদিন দাবী জোরালো হয়ে উঠছে। উক্ত দাবীর পক্ষে যে সকল যুক্তি তুলে ধরা হচ্ছে, এই জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় সত্যিকার অর্থে শিক্ষার্থীদের জন্য অপরিহার্য। মেরিন একাডেমি, মেডিকেল কলেজ, নাসিং ইনিষ্টিটিউটসহ বহনামী প্রতিষ্ঠানগুলো জেলা শহর কিংবা শরতলীতে ইতিমধ্যে গড়ে উঠেছে। অন্তত চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টি হাজীগঞ্জে স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন হাজীগঞ্জের রাজনীতিবীদ, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, ছাত্র ও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ।
|আরো খবর
ভৌগলিকভাবে জেলার মধ্যবর্তী স্থান হাজীগঞ্জ। এখানে সড়কপথ, রেলপথ ও নৌপথের যোগাযোগ ও যাতায়াতের একেবারে সহজলভ্য। এমনকি কুমিল্লা, লক্ষিপুর, নোয়াখালী জেলার হাজার হাজার মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্যে হাজীগঞ্জমুখী। হাজীগঞ্জ শহর থেকে চর্তুমূখি সড়ক পথ, দুই মুখি রেলপথে দেশের যে কোনো প্রান্তে চলাচল একেবারে সহজ হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলার বাণিজ্যিক শহর হিসেবে হাজীগঞ্জ পরিচিতি লাভ করেছে। এছাড়াও হাজীগঞ্জ নদী ভাঙ্গনের কোনো সম্ভাবনা অন্তত শতাব্দীকালে ঘটনার সম্ভাবনা নেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য গত বছরের (২০২০) ৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে বিল পাস হয়। এর আগে ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১৯ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা।
এরপর চলতি বছরের ২৫ জানুয়ারী মাসে ড. মো. নাছিম আখতারকে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভাইস চ্যান্সেলর) নিয়োগ দেয় সরকার। পরবর্তী সময়ে মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে এবং দীর্ঘদিন লকডাউন থাকায় বিষয়টি নিয়ে নিশ্চুপ ছিল সবাই। বর্তমানে জনজীবন স্বাভাবিক হওয়ায় হাজীগঞ্জে 'চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়' স্থাপনের দাবীটি জোরালো হয়ে উঠেছে।
হাজীগঞ্জের স্থানীয়রা চাঁদপুর কন্ঠকে জানান, চাঁদপুর জেলার ব্যবসায়ীক প্রাণকেন্দ্র হচ্ছে হাজীগঞ্জ। শিক্ষা, ধর্ম-কর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং আধুনিকতার ছোঁয়ায় ঐতিহ্যবাহী ও সমৃদ্ধ বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে হাজীগঞ্জ বাজার। এমনকি হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের খ্যাতি দেশ বিদেশে সমানতালে রয়েছে, যার ইতিহাস সংরক্ষণ করার মতো। হাজীগঞ্জ উপজেলাটি জেলার মধ্যবর্তী স্থানে হওয়ায় এবং সড়কপথ, রেলপথ ও নৌপথ থাকায় হাজীগঞ্জের সাথে জেলার অন্য ৬টি উপজেলার মানুষ সহজেই যাতায়াত করতে পারেন। এর পাশাপাশি হাজীগঞ্জ উপজেলার মধ্য দিয়ে রামগঞ্জ-হাজীগঞ্জ-কচুয়া-সাচার-দাউদকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়ক হওয়ায় পার্শ্ববর্তী জেলার লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালী জেলার এবং কুমিল্লার গৌরিপুর ও দাউদকান্দি উপজেলার লোকজন এবং হাজীগঞ্জে অনায়াসে আসা যাওয়া করতে পারে।
এছাড়াও 'চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়' স্থাপনের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ স্থানটি চাঁদপুর জেলার লক্ষীপুর মডেল ইউনিয়নে (চর বহরিয়া)। এটি একটি নদী ভাঙ্গন প্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। তাছাড়াও এর আশেপাশে যোগাযোগ ব্যবস্থাও অপ্রতুল। এর দক্ষিণে হাইমচর উপজেলা ও পশ্চিমে মেঘনা নদী। যা ভাঙ্গণ কবলিত প্রমত্তা মেঘনা থেকে কয়েক কিলোমিটার দুরে। এমন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় এতো বড় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মেঘনার কাছাকাছি স্থাপন না করে অন্তত: চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে হাজীগঞ্জের যে কোনো স্থানে স্থাপন করলে চাঁদপুরসহ তৎসংলগ্ন জেলার শিক্ষার্থীদের আসা যাওয়া অনেক সহজ হবে।
জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ রোটা. আহসান হাবিব অরুন বলেন, হাজীগঞ্জ উপজেলাটি চাঁদপুর জেলার মধ্যবর্তী স্থানে। এ উপজেলার সাথে ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর সদর, মতলব, কচুয়া, শাহরাস্তি উপজেলাসহণআশে-পাশে কয়েকটি জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। তাছাড়া যেখানে ‘চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়’ হওয়ার কথা, আমরা শুনতেছি সেটি একটি নদী ভাঙ্গন এলাকা।
তিনি আরো বলেন, নদী ভাঙ্গন ওই স্থানে 'চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়'টি নির্মাণ হলে ১৫/২০ বছরের মধ্যেই সেটি নদীগর্ভে বিলিন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যে স্থানে 'চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়'টি হচ্ছে সেটি একটি চর এলাকা। তাই হাজীগঞ্জে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি হওয়া উচিত।
হাজীগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব সৈয়দ আহমদ খসরু বলেন, ভৌগলিক দিক থেকে হাজীগঞ্জ উপজেলা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে। এখানে 'চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়' স্থাপন হলে চাঁদপুর জেলাসহ লক্ষীপুর, নোয়াখালি ও কুমিল্লার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উপকৃত হবে। তাছাড়া চাঁদপুরের পশ্চিমাঞ্চলে পদ্মা-মেঘনা নদীর অবস্থান। সেখানে জনপথ নেই। তাই ভৌগলিক অবস্থান ও জনপথের কথা বিবেচনা করে হাজীগঞ্জে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি হওয়া উচিত বলে মনে করি।
হাজীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব আসফাকুল আলম চৌধুরী বলেন, জেলার মধ্যমণি হলো হাজীগঞ্জ উপজেলা। এটি যদি হাজীগঞ্জে হয়, তাহলে জেলার আরো ৭টি উপজেলাসহ পাশের লক্ষীপুর, নোয়াখালি ও কুমিল্লা জেলার শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উপকৃত হবে।
হাজীগঞ্জ সরকারি মডেল হাই স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ মো. আবু ছাইদ বলেন, শিক্ষার জন্য হাজীগঞ্জ একটি উর্বর এলাকা। যদি 'চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়' হাজীগঞ্জে হয়, তাহলে শিক্ষাক্ষেত্রে হাজীগঞ্জ আরো সমৃদ্ধ হবে এবং পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের লোকজন উপকৃত হবে।
হাজীগঞ্জের প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক এবং উপজেলা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুল আলম চুননু বলেন, চাঁদপুর জেলার প্রাণকেন্দ্র হাজীগঞ্জ। এখানে একটি পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হলে চাঁদপুর জেলার সকল উপজেলাসহ কুমিল্লা ও লক্ষ্মীপুর জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলার মানুষ উপকৃত হবে। এ সময় তিনি স্থান হিসেবে হাজীগঞ্জের হামিদিয়া জুট মিলস বর্তমানে (হাজীগঞ্জ জুট স্পিনিং মিলস) চিহিৃত করেন। এমনকি হাজীগঞ্জের উপর দিয়ে চলে যাওয়া চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে পর্যাপ্ত জমি রয়েছে। এ ছাড়া ধেররা মাঠ যা হাজীগঞ্জ রেলস্ট্রেশন ও চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়ক ঘিরে রেখেছে, এমন পর্যাপ্ত জমিতে এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা একেবারে সহজ।
হাজীগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. আবু তাহের বলেন, ভৌগলিক দিক থেকে জেলার মধ্যবর্তী স্থানে হাজীগঞ্জ উপজেলার অবস্থান। এখানে 'চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়'টি হলে জেলার পাশাপাশি পার্শ্ববতী জেলা ও উপজেলার মানুষ উপকৃত হবে। হাজীগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপনের জোর দাবি জানিয়ে তিনি আরো বলেন, চাঁদপুরের দক্ষিণ, পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলে তিন নদীর অবস্থান। অর্থ্যাৎ সেখানে কোনো জনপথ নেই। আর হাজীগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপন করা হলে চারদিকে যেমন জনপথ রয়েছে, তেমনি সহজ যাতায়াত ব্যবস্থাও রয়েছে।