প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৩, ২১:২২
চাঁদপুরের কচুয়ায় স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলায় স্বামীর যাবজ্জীবন কারাদন্ড
চাঁদপুর থেকে # চাঁদপুরের কচুয়ার আশ্রাফপুরে যৌতুকর দাবীতে স্ত্রী শাহনাজকে গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়াশলাই’র আগুন দিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় স্বামী মাইনুদ্দিন মহিনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ড দিয়েছে আদালত।
বুধবার (১৪ জুন) দুপুরে চাঁদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জান্নাতুল ফেরদাউস চৌধুরী এ রায় দেন। রায়ের সময় আসামি পলাতক ছিলেন ।
মাইনুদ্দিন জেলার কচুয়া উপজেলার আশ্রাফপুর ইউনিয়নের আশ্রাফপুর গ্রামের আবু জাফরের ছেলে। হত্যার শিকার শাহনাজ একই ইউনিয়নের চাঙ্গিনী গ্রামের আলী হোসেনের মেয়ে।
মামলার বিবরণ থেকে জানাগেছে, ২০০৯ সালের ৫ ডিসেম্বর মাইনুদ্দিন শাহনাজ পরিবরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক অপরণ করে তুলে নিয়ে জোর পূর্বক বিয়ে করে। যার কারণে মাইনুদ্দিন এর পরিবার তার উপর ক্ষিপ্ত হয়। এরপর মাইনুদ্দিন ও তার পরিবার শাহনাজ এর নিকট দুই লাখ টাকা যৌতুকের দাবীতে অত্যাচার করে। ঘটনা জানাজানি হলে শাহনাজকে তার মামা রহুল আমিনের পনশাহী গ্রামে নিয়ে রাখে। এরপর মাইনুদ্দিন ও তার পরিবারে লোকজন অঙ্গীকারনামা দিয়ে শাহনাজকে তাদের বাড়ীতে নিয়ে আসেন। এরপর ২০১১ সালের ৫ জানুয়ারী মাইনুদ্দিন পরিবার শাহনাজকে তার পিতার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা এনে দেয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। কিন্তু যৌতুক এনে দিতে না পারায় বাক বিতন্ডার এক পর্যায়ে ওইদিন সকাল আনুমানিক ৭টার দিকে মাইনুদ্দিন শাহনাজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিয়াশলাই দিয়ে আগুন দেয়। এতে শাহনাজের মাথা হতে পা পর্যন্ত আগুনে পুড়ে যায়। অজ্ঞাত ব্যাক্তির মাধ্যমে এই ঘটনা জানতে পেরে শাহনাজ এর পরিবার তাকে প্রথমে শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরবর্তীতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৫ দিন পর ১১ জানুয়ারী সকালে মৃত্যুবরণ করে।
এই ঘটনায় শাহনাজের চাচা মো. আকতার হোসেন বাদী হয়ে কচুয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মাইনুদ্দিন, তার পিতা আবু জাফর, মা মনোয়ারা বেগম ও ভাই শাহজাহানকে আসামী করে মামলা করেন।
ঘটনাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় কচুয়া থানার তৎকালীন উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. নুরুল ইসলামকে। তিনি তদন্ত শেষে ২০১১ সালের ১ জুন আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন।
সরকার পক্ষের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) খোরশেদ আলম শাওন জানান, মামলাটি দীর্ঘ প্রায় এক যুগেরও অধিক সময় চলামান অবস্থায় ৬ জনের স্বাক্ষ্য গ্রহণ করেন। স্বাক্ষ্য প্রমান ও মামলার নথিপত্র পর্যালোচনা শেষে বিচারক এই রায় দেন। তবে মামলার রায়ের সময় আসামী পলাতক ছিলেন। এছাড়া অপর ৩ আসামীকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
আসামী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন মো. ইলিয়াছ মানসুরী।