প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২০:৪২
ধুলোবালিতে চরম দূর্ভোগে নাকাল শিক্ষক, শিক্ষর্থী, পথচারিসহ সাধারণ মানুষ
হাইমচরে পাহাড় ট্রলী, হ্যান্ডট্রলী পিকআপের দ্রুত গতিতে সড়কগুলোতে ভুতুরে পরিবেশ সৃষ্টি
হাইমচরে পুরাতন ডিগ্রী কলেজ সংলগ্ন মেঘনার পাড় গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ইট, পাথর, বালুর ছোট বড় ব্যবসা। এখানে প্রতিনিয়ত এ বালু, পাথর ও ইট বহনকারী পাহাড় ট্রলি ও পিকআপ গুলো দ্রুত গতিতে চলাচলের ফলে ধুলোবালিতে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ওই এলাকাবাসীসহ পথচারিদের। দ্রুতগতির গাড়ির দূষিত ধোঁয়ায় পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি এবং বাতাশে উড়ছে ধুলা বালি। পথচারিসহ স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি পথ চলতে দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ পথচারিদের। যার ফলে সড়কগুলোতে ভুতুরে পরিবেশের সৃস্টি হয়েছে। এছাড়া রাস্তার পাশ্ববর্তী বসত ঘরগুলোতে বালুর আস্তর পরাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে নাকাল হয়ে পড়েছে স্থানীয় লোকজন।
|আরো খবর
সরজমিনে গিয়ে দেখাযায়, উপজেলার আলগী দূর্গাপুর দক্ষিন ইউনিয়নের নদীর পাড় সংলগ্ন ডিগ্রীকলেজ থেকে কালাচকিদার মোড় পর্যন্ত এ সড়কটির আশে পাশে ও মেঘনা নদীর পাড় অসংখ্য বালু, ইট, পাথরের মহল তৈরি হয়েছে। এ ইট, পাথর ও বালু বহনকারি ট্রাক, পিকআপ গুলো চলাচলের একমাত্র সড়ক তেলির মোড় থেকে ডিগ্রী কলেজ সড়কটি। এ সড়কটিতে একের পর এক ইট, বালু বর্তি ট্রাক পিকআপ যাতায়ত করতে দেখা যায়। গাড়ি গুলো যাওয়ার পর রাস্তাগুলোতে ধুলোবালুতে ভুতরে পরিবেশের সৃষ্টি হয়। উড়ন্ত বালু গুলো স্থীর না হতেই আরেকটি গাড়ি এসে আবারো ধুলাবালু গুলো উড়িয়ে দেয়। এ পথে যাওয়া আসা লোকজন পড়নের কাপড় দিয়ে চোঁখ মুখ ডেকেও রক্ষা পায়নি ধুলোবালু থেকে। নদীর পাড় থেকে একজন পথচারি কালাচকিদার মোড় আসার পর ঐ ব্যক্তি নিজেকেও নিজে চিনতে পারে না। তার মাথার চুলগুলোসহ পুরো শরীর বালুতে ডেকে গিয়ে সাদা হয়ে যায়। পথচারিদের অবস্থা এমন হলেও রাস্তার পাশে থাকা ঘর বাড়ি গুলোর অবস্থা আরও ভয়ানক। এ এলাকার মানুষগুলো যেন ধুলোবালুর সাথে যুদ্ধ করে কাটাচ্ছে তাদের জীবন। কার কাছে কোন দপ্তরে অভিযোগ দিলে এ সমস্যার সমাধান হবে তাও জানা নেই তাদের। তবে দিনের বেলা এ গাড়ি গুলো বন্ধ রেখে রাতে যাতায়াত করলে লোকজনের সুবিদা হতো বলে তারা জানান।
স্থানীয় পথচারি নাছির উদ্দিন বলেন, ব্যবসায়ীরা তাদের সুবিধার্থে নদীর পাড় এ ব্যবসাগুলো করে আসছে। মানুষজন নিজেদের প্রয়োজনেই ইট, বালু, পাথর ক্রয় করছে। কিন্তু তাদের সুবিধার কথা চিন্তা করলেইতো হবে না। ব্যবসায়ীর সুবিধার জন্য অন্য লোক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কিনা সেটাও দেখা দরকার। ব্যবসায়ীরা সেটা দেখছে না। তারা মাল বিক্রি করছে ক্রেতা ক্রয় করছে, ট্রাকের কর্মিরা ট্রাকে করে মাল নিয়ে দিয়ে আসছে। এখানেইতো শেষ না, এই যে মাল গুলো নেয়া আসার মাঝে পথচারি ও ঘর বাড়ির লোকজন ধুলোবালিতে কষ্ট পাচ্ছে। এ ধুলোবালি থেকে পথচারি ও এলাকাবাসীকে ব্যবসায়ীরা এবং ট্রাকের ড্রাইভার রক্ষা করতে পারে। ব্যবসায়ীরা সকলে মিলে যদি একজন লোক রেখে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পানি দিয়ে রাস্তাটি বিজিয়ে রাখে তাহলে ধুলোবালিতে লোকজনের কোন সমস্যা হতোনা। এ ছাড়া যে ট্রাকে করে বালু নেয়া হয় সেই ট্রাকে বালুর উপরে কাপড় দিয়ে ডেকে নিলে বালু গুলো উড়তো না। ধুলোবালু থাকতো না। তবে আমি মনে করি প্রতিটি ব্যবসায়ী মিলে যদি চেষ্টা করে তাহলে রাস্তায় পানি দিয়ে রাখলে এলাকাবাসী ধুলোবালি থেকে রক্ষা পেতে পারে।
স্থানীয় মুদি দোকানদার মোস্তফা গাজী বলেন, বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার প্রায় অর্ধ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী এ রাস্তায় চলাচল করে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ রাস্তায় হাঁটাচলা করেন সাধারণ মানুষও। এ রাস্তার ব্যবসায়ীরাও নানান সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন ধুলাবালির কারণে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে এবং পরিবেশ দূষণ রোধ করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
নীল কমল ওছমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকমন্ডলী জানান, বিকল্প রাস্তা না থাকায় ৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় অর্ধ সহস্রাধিক শিক্ষার্থী স্কুলে যাওয়া-আসার এ রাস্তাটিকে-ই ব্যবহার করতে হয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিশু থেকে বয়োবৃদ্ধ সাধারণ মানুষ এ রাস্তায় চলাচল করে। গাড়ী চালকরাও মাত্রাতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে আতঙ্কে থাকে শিক্ষার্থীরা। তাই এসব শিক্ষার্থীদের স্বার্থে জনবহুল এ রাস্তায় গাড়ি চলাচলের নীতিমালা বেঁধে দেওয়া এখন সময়ের দাবী।
হাইমচর কিন্ডারগার্টেন স্কুলের অভিভাবক মাহমুদুল হাসান জানান, দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে আমাদের ছেলেমেয়েরা স্কুলে যাতায়াতে অনিহা প্রকাশ করছে। তাই গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কার্যকর প্রদক্ষেপ কামনা করছি।
৩নং আলগী দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সরদার আব্দুল জলিল মাস্টার বলেন, হাইমচর ডিগ্রী কলেজ, একটি দাখিল মাদরাসা, একটি মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ প্রায় ১০ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী এ রাস্তাটি ব্যবহার করে। ইতিমধ্যে মারাত্মক এক্সিডেন্ট করে অনেকেই মৃত্যু বরণ করেছে, অনেকেরই হাতপা ভেঙেছে। তাই, উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এ ইটা বালির গাড়িগুলো রাতে চলাচলের ব্যবস্থা করার নীতিমালা প্রনয়ণ করলে, শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে বিদ্যালয়ে যেতে পারবে।