প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২২, ২১:১০
স্থায়ী সংরক্ষণ প্রকল্প অনুমোদনে ধীরগতি, আবারো ভাঙন ঝুঁকিতে চাঁদপুর শহর রক্ষাবাঁধ, পরিদর্শনে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেছেন
স্টাডি সাপেক্ষে আমরা প্রকল্পটি দাখিল করেছি, সেটি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় রয়েছে
বর্ষা এলেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নদ-নদীর পানি বেড়ে যায়। তখন খরস্রোতা নদীগুলো ভাঙতে শুরু করে। এতে প্রতি বছর বিস্তৃর্ণ এলাকাসহ নদীগর্ভে বিলীন হয় হাজার হাজার ঘরবাড়ি। একই ধরনের চিত্র দেখা যায় চাঁদপুর মেঘনা নদীর ক্ষেত্রেও। নদীটির বিভিন্ন পয়েন্টে প্রতি বছর বর্ষায় বড় ধরনের ভাঙন দেখা যায়। এবার বর্ষার শুরুতে হিংস্র হয়ে ওঠেছে মেঘনা নদী। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার দরুন নদীর উত্তাল ঢেউ এবং তিন নদীর মিলনস্থল দিয়ে আবারো ঘূর্ণিস্রোতের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে।শহরের মোলহেড ও পুরাণবাজার মোলহেড এলাকা ভয়ানক রূপে দেখা যাচ্ছে ।এতে আবারো হুমকির মুখে পড়েছে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ। এ বাঁধের ১০টি পয়েন্ট খুবই ভাংগন ঝুঁকিতে রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে: চাঁদপুর লঞ্চঘাট পশ্চিম অংশের টিলাবাড়ি, যমুনা রোড, পাইলট হাউজ, বড়স্টেশন মোলহেডের , পুরাতন লঞ্চঘাট সংলগ্ন খেয়া ও ট্রলারঘাট, পুরাণ বাজারের ব্যবসায়িক এলাকা ভূঁইয়ারঘাট, মদিনা মসজিদ ট্রলারঘাট, পশ্চিমবাজার, হরিসভার মোলহেড ও মুক্তিযোদ্ধা মরহুম নুরু বকাউল বাড়িসহ রনাগোয়াল এলাকা। এছাড়া চাঁদপুরের অন্যান্য নদী তীরবর্তী অনেক এলাকা ভাঙ্গন প্রবন রয়েছে বলে পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন। চাঁদপুর শহর সংরক্ষণ পুনর্বাসনে যে প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, সেটি অনুমোদনের ধীরগতি চলছে বলে জানা যায়। সরকারের কাছে জোরালো তদবির না থাকায় প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখছে না।
সম্প্রতি বড় স্টেশন যমুনা রোড টিলাবাড়ি এলাকায় ভাঙ্গনে বাঁধের অসংখ্য ব্লক দেবে গিয়ে বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সেই স্থানটি সংরক্ষণে পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরী ভিত্তিতে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে আপাতত ভাঙ্গন ঠেকিয়েছে।
অপরদিকে, পুরাণ বাজার দোল মন্দির প্রাঙ্গণে শহররক্ষা বাঁধের কিছু ব্লক দেবে গিয়ে সেখানে ফাটল দেখা দিয়েছে। বিষয়টি মন্দির কমিটির লোকজন এবং ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাকে জানালে জরুরী ভিত্তিতে সেখানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছেন তারা। এর আগে বড়স্টেশন মোলহেড সিসি ব্লক বহনের একটি ট্রলার মুহুর্তের মধ্যে সেখানে তলিয়ে যায়। নিমজ্জিত ট্রলারটি ওই স্থানে ব্লক ফেলার কাজে ছিল। হরিসভা রনাগোয়াল এলাকার নুরু বকাউল বাড়ির দক্ষিণ পাশে মেঘনার প্রবল ঢেউ আছড়ে পড়ে ব্লক সরে গিয়ে মাটির গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
মেঘনা নদীর গতিবিধি, পানি প্রবাহ স্রোতের তীব্রতা আবারো ভাঙন আলামত হিসেবে দেখছেন নদীর পাড়ের ব্যবসায়ী ও মানুষজন। পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া এই তিন নদীর মিলনস্থল হচ্ছে চাঁদপুর শহর। এর মধ্যে ডাকাতিয়া নদী শহরকে দুই ভাগে ভাগ করে রেখেছে। শহরের দুই অংশকে আবার মেঘনা নদী বেষ্টিত। উত্তরাংশ নতুন বাজার এবং দক্ষিণাংশ পুরান বাজার নামে পরিচিত। সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের পশ্চিম অংশে মেঘনা ও পদ্মার মিলনস্থল বড় স্টেশন ও পুরাণবাজার মোলহেড এলাকায় তীব্র স্রোতের কারণে ব্লকবাঁধ দেবে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এসব এলাকায় মাঝে মধ্যে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে।
জানা যায়, ২০১৯ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ৪৫০ কোটি টাকার একটি স্থায়ী রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্প তৈরি করে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। তবে তিন বছরেও তা নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সম্প্রতি একটি সমীক্ষা করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কারিগরি কমিটি। তারা চাঁদপুর শহর সংরক্ষণ পুনর্বাসন প্রকল্প নামে তিন হাজার কোটি টাকার স্থায়ী একটি প্রকল্প প্রস্তাব করে।
প্রকল্পটির বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম রেফাত জামিল জানান,চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধের পুরানবাজার এবং নতুন বাজার এলাকাটি সংরক্ষনে যে প্রকল্পটি রয়েছে সেটি পুর্নবাসনের জন্য ইতিমধ্যে আমরা একটি প্রকল্প দিয়েছি। সেটির স্টাডি হয়েছে। স্টাডি সাপেক্ষে আমরা প্রকল্প দাখিল করেছি, সেটি এখন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে রয়েছে।
নদীর ভাঙ্গন ও বন্যার পানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন,তিস্তা সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সিলেট অঞ্চলে বন্যা দেখা দিয়েছে। পদ্মা-মেঘনা-যমুনা সহ ওইসব নদ-নদীর পানি মেঘনা নদীর চাঁদপুর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে মেঘনার ক্যাপাসিটি অনেক বেশি হওয়ায় সাধারণত এখানে বন্যার প্রকোপ এখনো কম। ইতিমধ্যে পানি কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্যা মোকাবেলার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।
রেফাত জামিল আরো বলেন, বর্ষা এবং বন্যা কালীন সময়ে আমরা জরুরী পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য নিয়মিত সার্ভে করে দুর্বল জায়গা গুলো চিন্তা করতেছি এবং চিহ্নিত সেসব জায়গায় আমরা সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ ফেলছি। আমাদের কাছে বালুভর্তি ৩ হাজার জিও ব্যাগ মজুদ রয়েছে। এছাড়া ১০ হাজার খালি জিওব্যাগ এবং ১৩ হাজার সিসি ব্লক মজুদ রেখেছি যাতে যেকোনো দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যায়।