শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ১৯ মার্চ ২০২২, ১৯:১৬

নওগাঁও ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিদায় ও জীবনী নিয়ে আলোচনা

রেদওয়ান আহমেদ জাকির
নওগাঁও ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিদায় ও জীবনী নিয়ে আলোচনা

মতলব দক্ষিণ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন বিদ্যাপীঠ নওগাঁও রাশেদিয়া ফাযিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবু ইয়াহইয়া মোহাম্মাদ যাকারিয়া চৌধুরী ১৯ মার্চ সকালে মাদ্রাসা মাঠে বিদায় সংম্বর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিদায়ী অনুষ্ঠানে মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মোঃ শাহজালাল হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন মাদ্রাসার বিদায়ী অধ্যক্ষ আবু ইয়াহইয়া মোহাম্মাদ যাকারিয়া চৌধুরী। তিনি ১৯৯২ সালে ওই মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৯৯ সালে তিনি উক্ত মাদরাসার অধ্যক্ষ হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তিনি অত্র মাদ্রাসা হতে অবসর গ্রহণ করেন।

সুন্নিয়তের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক অধ্যক্ষ আল্লামা যাকারিয়া চৌধুরী আল মাদানী ১৯৫৮ সনের ১ মার্চ চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ থানার ঐতিহাসিক সাদরা দরবার শরীফে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা বিশ্ব মুফতী আল্লামা শাহ ইসহাক (রহ.) সাদরা দরবার শরীফের পীর এবং মাতা সারা খাতুন গৃহিনী।

পিতা বিশ্ব মুফতী আল্লামা শাহ ইসহাক রহমাতুল্লাহি আলাইহি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত “সাদরা হামিদিয়া ফাজিল মাদ্রাসায়” আল্লামা যাকারিয়া চৌধুরী আল মাদানীর একাডেমিক শিক্ষা শুরু হয়। অত্র মাদরাসা থেকে তিনি যথাক্রমে ১৯৭২ সালে দাখিল, ১৯৭৪ সালে আলিম ও ১৯৭৬ সালে কৃতিত্বের সাথে ফাদ্বিল সম্পন্ন করেন; এ ছাড়াও তিনি তাঁর পিতার নিকট হাদীস ও ফিকাহ কিতাবের দরস্ গ্রহণের পাশাপাশি বাল্যকালেই ফার্সি ও উর্দু ভাষা আয়ত্ব করেন।

১৯৭৮ সালে তিনি এশিয়া খ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামেয়া আহমাদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া থেকে কামিল হাদিস (ফার্স্ট ক্লাস) এরপর ওয়াজেদিয়া কামিল মাদরাসা চট্টগ্রাম থেকে কামিল ফিকহ (ফার্স্ট ক্লাস) ও ১৯৮০ সালে মাদরাসা-এ ঢাকা আলিয়া থেকে কামিল তাফসির (ফার্স্ট ক্লাস) এর পাশাপাশি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাফল্যের সাথে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।

১৯৮১ সালে তিনি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ও শ্রেষ্ঠতম বিশ্ববিদ্যালয় “জামিয়া ইসলামিয়া মাদিনাতুল মুনাওয়ারা” এর স্কলারশিপে দেশের সেরা ১০ জনের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে, ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৬ বছর গভীর সাধনার মাধ্যমে "কুল্লিয়াতুল লুগাতিল আরাবিয়্যা" বিভাগে অত্যন্ত সাফল্যের সাথে “লিসান্স ইন আ্যরাবিক” সম্পন্ন করেন।

তিনি বদরপুর দরবার শরীফের আ’লা হযরত পীর কেবলা ইমামে আহলে সুন্নাত, আল্লামা শাহ সাইয়্যেদ আব্দুর রব চিশতী (রহ.)-এর একমাত্র কন্যার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বৈবাহিক জীবনে তিনি ৫ পুত্র ও ২ কন্যা সন্তানের জনক হন। জৈষ্ঠ্য পুত্র ড. খাজা বাকীবিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী, দ্বিতীয় পুত্র মুফতী হাম্মাদ বোখারী বিন মাদানী, প্রথম কন্যা নাঈমা চৌধুরী (ইন্তেকাল ১৯৯৪), তৃতীয় পুত্র মাওলানা আহমাদ রেযা চৌধুরী, দ্বিতীয় কন্যা সাইমা বিনতে মাদানী (ইন্তেকাল ২০২১), চতুর্থ পুত্র ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী বিন মাদানী, পঞ্চম পুত্র ঈসা রূহুল্লাহ (ইন্তেকাল ২০০৮)।

১৯৮৭ সালে তিনি ফারাজিকান্দি আলিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষের দায়িত্বভার গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৯১ সালে তিনি স্বেচ্ছায় উক্ত মাদরাসা থেকে ইস্তফা দিয়ে চলে আসেন। পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে নওগাঁও রাশেদিয়া ফাযিল মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৯৯ সালে তিনি উক্ত মাদরাসার অধ্যক্ষ হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন এবং সেই থেকে ২০২২ সানের ২৮ ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। অধ্যক্ষ আল্লামা যাকারিয়া চৌধুরী আল মাদানী ১৯৮৭ সাল থেকে শুরু করে অদ্যাবধি বিভিন্ন মসজিদে অবৈতনিকভাবে খতিব এর দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

অধ্যক্ষ আল্লামা জাকারিয়া চৌধুরী আল মাদানী ১৯৯৫ সালে চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার নওগাঁও নামক গ্রামে “বায়তুল আমান জামে মসজিদ” নামে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৮৯ সালে বিশ্ব হানাফী ফতোয়া বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৪ সালে ইসাকিয়া হেলাল কমিটি প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৯৫ সালে আহলুস সুন্নাহ সাইমা মহিলা মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন।

তিনি মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত অবস্থায় ৬ বার, এবং ২০০৫ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৯ বার সহ মোট ১৫ বার পবিত্র হজ্ব পালন করেন। তাঁর পূর্বপুরুষগণ ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে ইয়ামেন থেকে সন্ধীপে আসেন। সেখান থেকে পরবর্তীকালে নোয়াখালীর বশিকপুরে আসেন। সেখান থেকে তাঁর প্র-পিতামহ শাহসুফি আনতে মাহমুদ (রহ:) চাঁদপুর সদরের বাখরপুরে দ্বীন প্রচারের সুবিধার্থে বসতি স্থাপন করেন। তাঁর দাদা শাহসুফি ফাজীলুদ্দীন (রহ:) হাজিগঞ্জ উপজেলার সাদরা নামক গ্রামে বসতি স্থাপন করেন এবং তাঁর পিতা বিশ্ব মুফতী আল্লামা ইসহাক (রহ:) ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন স্থানে সফর করেন ও অসংখ্য বেদ্বীনকে দ্বীনের সুশীতল ছাঁয়াতলে আচ্ছাদিত করেন। ১৯৩১ সালে দ্বীনের খেদমতে তাঁর পিতা বিশ্ব মুফতি আল্লামা ইসহাক (রহ:) “সাদরা হামিদিয়া ফাজিল মাদ্রাসা” প্রতিষ্ঠা করেন, যেখান থেকে অগণিত মুহাক্কিক আলেম বের হয়ে দ্বীন ইসলামের খিদমত করেন।

তিনি যে সকল বুযুর্গানে দ্বীন খিলাফত প্রদান করেন তাঁরা হলেন বিশ্ব মুফতী আল্লামা শাহ ইসহাক (রহ.) প্রতিষ্ঠাতা ঐতিহাসিক সাদরা দরবার শরীফ। আওলাদে রাসূল, সাইয়্যেদ আলভী আল মালেকী (রহ.) যিনি মক্কা শরীফে পবিত্র খানায়ে কাবায় দীর্ঘ ৩০ বছর হাদিস শরীফের দরস প্রদান করেছেন। এছাড়াও শাইখ হাম্মাদ (রহ.), শাইখ আহমাদ বিন আহমাদ সাঈদ আল-মুজাদ্দেদী (রহ.), মাদিনাতুল মুনাওয়ারা এবং আল্লামা শাহ্ সাইয়্যেদ আব্দুর রব চিশতী (রহ.) বদরপুর দরবার শরীফ, পটুয়াখালী।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়