শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৯:০৭

মতলবের নারায়ণপুরে স্বর্ণ ব্যবসায়ী অমর হত্যাকান্ড

অবুঝ দুই শিশু সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত স্ত্রী প্রিয়াংকা

মুহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ
অবুঝ দুই শিশু সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত স্ত্রী প্রিয়াংকা

মতলবে স্বর্ণ ব্যবসায়ী অমর ভক্ত নিহত হওয়ার পর থমকে গেছে তার পরিবারের স্বাভাবিক জীবন-যাপন। একমাত্র উপার্জনক্ষম পুত্রকে হারিয়ে নির্বাক পিতা মাতা। শোকাহত স্ত্রী, আর অপরিচিত মানুষ দেখে ভয়াতুর চোখে তাকিয়ে থাকে নিষ্পাপ অমরের আড়াই বছরের মেয়ে আর্থি রানি ভক্ত, দেড় বছরের ছেলে আর্থ ভক্ত।

অমর ভক্তের পিতা রবি ভক্ত চাঁদপুর কন্ঠকে জানান, আমার দুই ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে অমর ভক্ত তৃতীয়। আমি ও আমার স্ত্রী অমর ভক্তের সাথেই থাকতাম। বড় ছেলে জীবন ভক্ত একই বাড়িতে আলাদা থাকে। আমার ছেলে আমাদের নগদ টাকা দিয়ে যেতে পারে নি। তার অর্থ সম্পদ সব তো ব্যবসায়িক কাজেই ব্যবহৃত হতো। সাংসারিক প্রয়োজনে যখন যা দরকার হতো তা আমাদের দিত। আমার ছেলেকে খুন করার সাথে সাথে খুনিরা আমার সংসারটাকে তছনছ করে দিয়েছে। টাকা পয়সা স্বর্ণালংকার লুট করেছে। আমাদের পরিবারে এখন আমি আমার স্ত্রী আমার ছেলের বউ ও অবুঝ দুটি নাতি নাতিন। ৫ জনের সংসারের এ দায়িত্ব আমি এই বয়সে কিভাবে পালন করবো কিভাবে চলবো কিছু জানি না।

কান্নাজড়িত কন্ঠে নিহত অমর ভক্তের স্ত্রী প্রিয়াংকা ভক্ত জানান, গত চার বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়। সুখেই কাটছিল আমার সংসার। স্বামী সন্তান আর শশুর শাশুড়ীকে নিয়ে ভালো ভাবেই চলছিলাম। কিন্তু কি হতে কি হয়ে গেল। তিনি আরও বলেন, আমি আমার সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। আমি কিভাবে তাদের মানুষ করবো বুঝে উঠতে পারছি না।

নিহত অমর ভক্ত মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর বাজারে মাধবী শিল্পালয় নামে একটি জুয়েলারী প্রতিষ্ঠানের মালিক ছিলেন। তিনি এখানে সুনামের সাথে দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর যাবত ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। তার দোকানে গত দুই বছর আগে মুন্সীগঞ্জ জেলার বাসিন্দা আকাশ নামে এক কর্মচারী চাকুরী নেয়। আকাশ গত এক বছর আগে চাকুরী ছেড়ে দেয়। উক্ত আকাশের মাধ্যমেই গত এক বছর আগে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত একই জেলার বালিগাঁও এলাকার বাসিন্দা জয় বিশ্বাস ওরফে অনিক চাকুরী নেয়।

অনিক বিশ্বস্ত হওয়ার পেছনে কি কারণ আছে তা জানতে চাইলে নিহতের বাবা রবি ভক্ত চাঁদপুর কন্ঠকে জানান, অনিক যেহেতু দোকানে সব সময় থাকে তাই প্রতিদিন দোকানের সব লেনদেন সম্পর্কে সে অবগত। অপরদিকে অনিক রাতে আমার ছেলের দোকানেই ঘুমাতো। আবার রাতে টাকা পয়সা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় নিহত অমর ভক্ত অনিককে সাথে নিয়েই যেত। তার মধ্যে কোন প্রকার শঠতা আমরা লক্ষ করি নাই। তাকে আমরা আমাদের পরিবারের সদস্য হিসেবেই মনে করতাম। তাই তাকে বিশ্বাস করেই আমার ছেলে সব কাজ পরিচলনা করতো।

এদিকে অমর ভক্ত নিহত হওয়ার পর তার কাছে যারা স্বর্ণ বন্ধক রেখেছে এমন অনেক লোক নিহত অমর ভক্তের পিতা রবি ভক্তের কাছে ভীড় জমাচ্ছে। তারা তাদের বন্ধকৃত স্বর্ণ অথবা এর বিপরীতে টাকার হিসেব শেষ করতে চাচ্ছে বলে জানান পিতা রবি ভক্ত। রবি ভক্ত আরও জানান, নারায়ণপুর বাজারের অনেক ব্যবসায়ী তাদের নগদ অর্থ আমার ছেলে অমর ভক্তের নিকট জমা রাখতো। আবার তারা এগুলো সময় মতো নিয়ে যেতো। এমন অনেক ব্যবসায়ী আমার কাছে তাদের পাওনা টাকা দাবী করছে। তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমি এগুলোর কোন সদুত্তর দিতে পারছিনা। অমর ভক্তের পিতা জানান, অমর ভক্ত দোকানের সকল লেনদেন আমার জানামতে লিখিত ভাবে করতো। তবে আমি দোকানের কোন তথ্য দিয়ে মানুষের সাথে কথা বলতে পারছি না। কারণ দোকান খোলার বিষয়ে এখনো প্রশাসনের সাথে কথা বলতে পারি নাই।

দোকান খোলা ও ব্যবসা পরিচালনার বিষয়ে জানতে চাইলে নিহত অমর ভক্তের পিতা রবি ভক্ত জানান, আমি স্বর্ণের ব্যবসা বুঝি না। আবার আমার বয়সও নেই ব্যবসা পরিচলনা করার। তাছাড়া আমার বড় ছেলে স্বর্ণের ব্যবসা বুঝে না। যদি কোন বিশ্বস্ত লোক পাই তখন দোকান খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারবো।

সবশেষে নিহত অমর ভক্তের পিতা রবি ভক্ত ও পরিবারের সদস্যরা প্রশাসনের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, অমর ভক্তকে যারা নির্মম ভাবে হত্যা করেছে তাদের যেন দ্রæত দৃষ্টান্ত মূলক বিচার ও ফাঁসির কার্যকর করা হয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়