বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০

ফরিদগঞ্জে মৃৎশিল্পের কারিগররা পেশা বদলে বাধ্য হচ্ছেন
ফরিদগঞ্জ ব্যুরো ॥

স্বাস্থ্যকর আর সহজলভ্য ছিলো বলে এক সময়ে সব পরিবারেই ছিলো মাটির পাত্রের ব্যবহার। পূজার সময় প্রতিমা তৈরি এবং মাটির তৈরি হাড়ি, পাতিল বাহারি চিতই, পুলি ও ভাপা পিঠাসহ নানা জাতের পিঠার জন্যে খোলা, দধির পাতিল, টালি, ব্যাংক, বড্ডুয়া, ঘট, মুটকি, থালা, বাসনসহ বিভিন্ন মাটির সরঞ্জাম তৈরির জন্যে ফরিদগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন কুমারপাড়ায় ব্যস্ততা ছিলো দেখার মতো। কিন্তু কালের বিবর্তনে এবং অর্থ ও প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে হাজার বছরের ঐতিহ্য মৃৎশিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। কুমাররা এখন নিজেদের পারিবারিক পেশা ছেড়ে বিভিন্ন পেশায় জড়িত হচ্ছেন।

জানা গেছে, পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের পাইকপাড়া, সুবিদপুর পশ্চিম ইউনিয়নের আইটপাড়া, সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের ঘনিয়া এবং গুপ্টি পূর্ব ইউনিয়নের গুপ্টিসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বসবাস করা কুমাররা বংশপরম্পরায় মাটির বাসন, পূজা উপলক্ষে বিভিন্ন প্রতিমা তৈরি করতো। কয়েকশ’ পরিবারের সদস্যরা এসব কাজে ব্যস্ত সময় কাটাতো।

শীতে খেজুর রস সংগ্রহের জন্যে হাড়ি, বাহারি চিতই, পুলি ও ভাঁপা পিঠাসহ নানা জাতের পিঠার জন্যে খোলা, দধির পাতিল, টালি, ব্যাংক, বড্ডুয়া, ঘট, মুটকি, থালা, বাসনসহ বিভিন্ন মাটির সরঞ্জাম তৈরি করতো গ্রাম বাংলার কুমাররা। সেগুলো ভ্যান বা মাথায় করে বিক্রি করেই চলতো তাদের সংসার। খড়, কাঠি আর মাটির সাথেই তাদের জীবনপণ যুদ্ধ ছিলো। কিন্তু সময়ের প্রেক্ষাপটে হারিয়ে গেছে এসব চিত্র। এখন অর্থাভাবসহ নানা সমস্যার কারণে তারা কুমার পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় ধাবিত হচ্ছে। এর ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে হাজার বছরের ঐতিহ্য আর গ্রামবাংলার সংস্কৃতি।

সরেজমিনে আইটপাড়া ও পাইকপাড়া গ্রামে ক’জন কুমারের সাথে কথা হয়। বাবুল পাল নামে একজন কুমার ও তার স্ত্রী তাদের দুর্বিষহ জীবনের কথা বলেন। এখন আর এ পেশায় ঠিকমতো সংসার চলে না তাদের। খেয়ে না খেয়েই কাটে তাদের দিন। এ পেশা ছেড়ে ভিন্ন পেশায় যাওয়ার পুঁজি নেই বলে পেশা পরিবর্তন করতে পারছেন না তারা।

নেপাল পাল নামে একজন জানান, এক সময় মাটি পেতাম বিনামূল্যে। আর গত দু বছর আগেও তা ছিলো মাত্র চারশ’ টাকা প্রতি গাড়ি। আর এখন তা দেড় থেকে দু হাজার টাকায় কিনতে হচ্ছে। কাঁচামালগুলো পোড়াতে কাঠ আর খড়ের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। সব মিলিয়ে বাজারের সব কিছুর দাম বাড়লেও দাম বাড়েনি মাটির তৈরি সরঞ্জামের। একটি খোলা তৈরিতে প্রায় দশ টাকা খরচ হলেও বিক্রি হয় বারো টাকা।

মিঠু পাল নামে আরেকজন জানান, সরঞ্জামাদি তৈরিতে খরচের সাথে বাজারমূল্যের মিল নেই। এছাড়াও আগের মতো এখন আর মাটির পাত্রের চাহিদাও নেই। পূজার সময় প্রতিমা তৈরি করে কিছুটা অর্থ এনেও ধীরে ধীরে তার পরিমাণও হ্রাস পাচ্ছে। সকলেই আধুনিক প্রতিমা তৈরির দিকে ঝুঁকছেন। আমরা প্রশিক্ষণের অভাবে আধুনিকতার সাথে পেরে উঠছি না। এজন্যে সংসার চালাতে কষ্ট হয়।

স্বপন পাল নামে আরো একজন জানান, তার পরিবারের সবাই ছিলো কুমার পেশার সাথে, এখন আর নেই। যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে পড়াশোনা করে চাকরি আর নানা পেশায় বিচরণ তাদের। তিনি আরও জানান, সরকারি সহযোগিতা বা প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এ পেশাটি টিকে থাকতে পারবে। নতুবা কালের আবর্তনে হারিয়ে যাবে মৃৎশিল্প।

৪নং সুবিদপুর পশ্চিম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মহসিন তপাদার জানান, মাটির জিনিসের চাহিদা কমতে থাকায় মৃৎশিল্পীরা কর্মহীন হচ্ছে। তবে কিছুসংখ্যক পরিবার বংশ পরম্পরার কারণে এ শিল্প ধরে রেখেছে। এ শিল্পের জন্যে সরকারিভাবে যদি কোনো সহযোগিতা করা হয় তবে বাঙালির ঐতিহ্যময় এ শিল্প ধরে রাখতে পারবে মৃৎশিল্পীরা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়