প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০
স্থানীয় কিছু লোকজন ও অভিভাবকদের আপত্তির কারণে হাজীগঞ্জের ধড্ডা পপুলার উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। ৪ নভেম্বর শনিবার সকাল ১১টায় বিদ্যালয়ে এই নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিলো। স্থানীয়দের হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলায় বিদ্যালয়ের সভাপতিসহ নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের সর্বসম্মতিক্রমে প্রতিনিধি মোঃ সিরাজুল ইসলাম পাটওয়ারী এ নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত উপস্থিত সবাইকে জানিয়ে দেন।
তিনি বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা শুরুর আগে অ্যারেজমেন্ট প্রক্রিয়ায় সমস্যা হয়েছে। তাই আজকের (শনিবার) নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হলো এবং স্থগিত নিয়োগ পরীক্ষা পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা একেএম জাহাঙ্গীর আলম, বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হুমায়ুন কবির লিটন, সদস্য মনিরুজ্জামান পাটওয়ারী ও প্রধান শিক্ষক জ্যোৎস্না আক্তার উপস্থিত ছিলেন।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, উক্ত বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে আবেদনকৃত ১৫ জনের মধ্যে যাচাই-বাছাই শেষে যোগ্যতা না থাকায় ৩ জনের আবেদন বাতিল করা হয়। বাকি ১২ জন প্রার্থীর মধ্যে ৩জন অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষক রয়েছেন। এর মধ্যে নূরুন নাহার ও মিজানুর রহমানের পক্ষ নেন স্থানীয় ও এলাকাবাসী। শনিবার নিয়োগ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে আবেদনকৃত প্রার্থীদের বিদ্যালয়ে আসতে বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠে স্থানীয় একটি পক্ষের বিরুদ্ধে।
এছাড়া নিয়োগ পরীক্ষা চলাকালীন ম্যানেজিং কমিটির কয়েকজন সদস্য যেন উপস্থিত না হন সেজন্যে তাদেরকে বাধাগ্রস্ত করা হয় এবং নিয়োগ পরীক্ষা প্রভাবিত করতে বিদ্যালয়ে দুই পক্ষের লোকজন জড়ো হন। এ নিয়ে বিদ্যালয়ে হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে ডিজির প্রতিনিধি বিদ্যালয়ে উপস্থিত হয়ে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করেন।
স্থানীয় জসিম মুন্সী ও শাহাজান বেপারীসহ কয়েকজন ডিজির প্রতিনিধিসহ নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যালয়ে আসলে প্রধান শিক্ষক জ্যোৎস্না আক্তার তাদেরকে সন্ত্রাসী বলেন এবং নিয়োগ পরীক্ষায় প্রভাবিত করতে তিনি একজন প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেন। তাছাড়া তার সময় বিদ্যালয়ের ঐতিহ্য হারিয়েছে। তাই নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতসহ প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবি করেন অভিযোগকারীরা।
পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য মাসুদ মোল্লা নিয়োগ বোর্ডের কাছে বলেন, আজকের এই অবস্থায় পরে একটা তারিখ নির্ধারণ করে নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হোক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আবেদনকৃত দুজন শিক্ষক বলেন, সকালে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে আসলে আমাদেরকে একটি পক্ষ কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেয়। পরে পরিচালনা পর্ষদের সহযোগিতায় আমরা ৫ জন শিক্ষক কেন্দ্রে আসি।
পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সফিকুল ইসলাম ও রাশেদা বেগম জানান, বিদ্যালয়ে আসার সময় তারাও বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। এ সময় রাশেদা বেগম বলেন, আমার বাড়িতে গিয়ে কয়েকজন বলেছেন, গ-গোল হবে, তাই আমি যেন বিদ্যালয়ে না যাই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আবেদনকৃত দুই প্রার্থীর পক্ষ নিয়ে বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট দুটি গ্রুপ তৈরি হয়ে যায়। মূলত কার লোক নিয়োগ দেয়া হবে এ নিয়ে উভয় গ্রুপের মধ্যে ইগো তৈরি হয়ে চ্যালেঞ্জে চলে যায় বিষয়টি। তাই একটি পক্ষ পরীক্ষা বন্ধে মরিয়া উঠে। এই কারণেই এমনটি হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রধান শিক্ষক জ্যোৎস্না আক্তার বলেন, স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হবে। আমিও চাই একজন যোগ্য লোক এ পদে আসুক। কিন্তু এদিন সকালে বেশ কিছু লোক বিদ্যালয়ের সম্মুখে অবস্থান করে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে প্রবেশে বাধা দেন এবং তারা হট্টগোল শুরু করেন। আমি ওই শিক্ষকদের ফোন পেয়ে বিদ্যালয়ের সামনে গেলে তারা আমার সাথেও খারাপ আচরণ করেন।
এ সময় তিনি আরো বলেন, বিষয়টি আমি নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এবং বিদ্যালয়ের সভাপতিসহ সংশ্লিষ্টদের অবহিত করি। পরে সভাপতির হস্তক্ষেপে পরীক্ষায় অংশ নিতে আসা ৫জন শিক্ষক কেন্দ্রে আসেন। এর মধ্যে ডিজির প্রতিনিধি মহোদয় উপস্থিত হলে তাঁর সামনেও তারা হট্টগোল শুরু করেন। পরে পরীক্ষা নেয়ার পরিবেশ না থাকায় নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করেন তিনি।