মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২২, ০০:০০

১৩ মাসের সন্তানকে হলফনামার মাধ্যমে দত্তক দেয়ার হেতু কি?

১৩ মাসের সন্তানকে হলফনামার মাধ্যমে দত্তক দেয়ার হেতু কি?
কামরুজ্জামান টুটুল ॥

কোনো পরিবারে যখন নতুন সন্তানের আগমন ঘটে তখন ঐ দম্পতির খুশির সীমা থাকে না। ছেলে হোক কিংবা মেয়ে হোক সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে প্রতিটি বাবা-মা দুঃখ-কষ্ট ভুলে যায়, স্বামী-স্ত্রী সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে বহু ক্ষেত্রে ছাড় দেয়, সন্তানদের মানুষ করার জন্য বাবা-মা নিজেদের সুখ-সখ বিসর্জন দেয়। সন্তান বড় হলে রোজগার করে খাওয়াবে এমন চিন্তা খুব কম মা-বাবা করে সন্তানকে মানুষ করার ক্ষেত্রে।

এটা মানুষের স্বভাবজাত অভ্যাস। সৃষ্টির সেরা মানুষকে বিধাতা যখন ধরণীতে পাঠায় তখন তার রিজিক সৃষ্টিকর্তা নিজেই দিয়ে পাঠান। এ কথা পবিত্র কোরআন শরীফে স্পষ্ট করে মহান আল্লাহ বলে দিয়েছেন। যেখানে একটি মানব শিশু কমপক্ষে ১৮ মাস মায়ের বুকের দুধ পান করে বাঁচতে হয়, সেখানে মাত্র ১৩ মাসের শিশুটিকে দত্তক দেয়া হলো কেন ? টাকাই কি তাহলে সব বাবা-মা আর সন্তানের মধ্যে সম্পর্ক রূপে প্রতিষ্ঠা পেতে যাচ্ছে। বুলি না ফোটা যুবাইরা যদি বুঝতে পারতো তার সাথে তার বাবা-মা কী জঘন্য আচরণ করেছে? তাহলে হয়তো সে মনের কষ্টে বাড়ি ছাড়তো। হয়তো বড় হলে জানতেই পারবে না জীবনের তিন দিনের এই কালো অধ্যায়।

যে যুবাইরা আক্তার নামের কন্যা সন্তানটিকে আদালতের মাধ্যমে তার বাবা-মা সাভারে দত্তক দিলো, তার পেছনে উদ্দেশ্য ছিলো কি নিঃসন্তান দম্পতিকে একটি সন্তান দিয়ে সহায়তা করা, নাকি লাখ টাকার লোভে পড়েছিলেন শিশুটির গর্ভধারিণী মা’সহ বাবা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শিশুটির বাবা তার চাচার তেলের দোকানে কাজ করতেন। ভালো চলতে পারতেন। বছর তিনেক আগে বাড়ি থেকে হাজীগঞ্জ বাজারের কর্মস্থলে যাওয়ার পথে সিএনজিচালিত অটোরিকশা দুর্ঘটনা ঘটায় বাম পা রানের কাছে ভেঙ্গে যায়। চিকিৎসা চলে, কিন্তু এক সময় চাকুরি চলে যায়, সংসারে নেমে আসে অভাব আর অনটন। এরই মধ্যে মায়ের গর্ভে আসে যুবাইরা আক্তার। সময় শেষে সিজারের মাধ্যমে জন্ম নেয় যুবাইরা। দুনিয়াতে তার আসাই যেন অন্যায় হয়েছে। বাবার অভাবের সংসারে যেখানে ডাল-ভাত জোগাড় করতে কষ্ট হয়, সেখানে মায়ের জন্য আলাদা খাবার কিনা বা যুবাইরার জন্য দুধ কিনা তো রীতিমতো স্বপ্নে দেখা কোনো বস্তুর মতো।

এর মধ্যে স্থানীয়দের মাধ্যমে সাভারে বসবাসকারী সচ্ছল এক নিঃসন্তান দম্পতির সাথে যোগাযোগ হয় বশিরের। শিক্ষিত ঐ দম্পতি শিশুটিকে নিবেন তবে আদালতের মাধ্যমে। যে কথা সেই কাজ। গত সেমবার আদালতে হলফনামা করা হয়। তারপরেই শিশুটিকে নিজেদের সন্তান মনে করে মানুষ করার জন্যে চাঁদপুর ছাড়ে। হলফনামায় উল্লেখ না থাকলেও দত্তক নেয়া পরিবারটি শিশুটির বাবাকে সহায়তা হিসেবে পুরো এক লাখ টাকা নগদে পরিশোধ করে।

কিন্তু বিধিবাম। মানুষ তো এভাবে দেয়া-নেয়ার বিধান নেই। এরপরেই বিষয়টি এক কান দুই কান হয়ে সাংবাদিক পর্যন্ত গড়ায়। তাই হয়তো প্রশাসন সাভার থেকে শিশুটিকে এনে তার মায়ের কোলে তুলে দেয়। সাংবাদিকদের দেয়া তথ্যের কারণে প্রশাসন আর পুলিশের নজরে আসে শিশুটি দত্তক দেয়ার বিষয়।

প্রথম দিন তথা গত মঙ্গলবার দুপুরে প্রথম বারের মতো বিষয়টি নিয়ে খবরের সন্ধানে যখন শিশুটির বাড়িতে এ প্রতিনিধি যান, সেই সময় শিশুটির বাবা-মা’য়ের দেয়া সাক্ষাৎকারে জানা গেলো যে, মূলে শিশুটিকে দত্তক দিয়ে তার পরিবার সহায়তা হিসেবে লাখ টাকা পেয়েছে। সেই টাকা দিয়ে শিশুটির বাবার পায়ের চিকিৎসা আর দেনা পরিশোধ করা হবে। এ থেকেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে উঠে, টাকার প্রয়োজনে সন্তানকে দত্তক দিয়েছেন শিশুটির বাবা-মা।

সাক্ষাৎকার অংশে শিশুটির বাবা তার অসহায়ত্বের বিষয় তুলে ধরে বলেন, পৈত্রিক সম্পত্তি বিক্রি করতে গিয়ে ভাইদের সাথে ভাগ-বাঁটোয়ারার কাজ শেষ করতে পারেন নি, তাই কোনো উপায় না পেয়ে মেয়েকে দত্তক দেই। এসব থেকেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। শিশুটিকে মায়ের কোল থেকে নেবার মাত্র ৭২ ঘন্টার মধ্যে হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তারের সরাসরি হস্তক্ষেপে আর অফিসার ইনচার্জ জোবাইর সৈয়দের বিচক্ষণতায় সাভার থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে হাজীগঞ্জে নিয়ে আসা হয়। জেলা প্রশাসক আর পুলিশ সুপারের অনুদানের টাকা, ফুলসহ শিশুটিকে এই দুই কর্মকর্তা শিশুটির বাড়িতে গিয়ে তার মায়ের কোলে পরম যতœ পৌঁছে দেন বুধবার দুপুরে। শিশুটি পৌরসভাধীন ৩নং ওয়ার্ডের ধেররা-বিলওয়াই গ্রামের ইউনুস মজুমদার বাড়ির। বশির-আসমা দম্পতির ছোট সন্তান। এই দম্পতির ৪ বছর বয়সী আরেকটি কন্যা সন্তান রয়েছে।

এ বিষয়ে বশির বলেন, যে পরিবার আমার মেয়েকে দত্তক নিয়েছে, আর তারা আমাকে সহায়তা করে যে টাকা দিয়েছে সেই টাকা তারা এখন ফেরত চান না।

যে কোনো মানুষকে হলফনামা করে দত্তক দেয়ার বিধানের বিষয়ে জানতে চাইলে চাঁদপুর জজ কোটের অ্যাডভোকেট ইমাম হোসেন টিটু বিষয়টি পাশ কাটিয়ে বলেন, মানুষ বিক্রি হওয়া পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কোনো ব্যক্তি কাউকে দত্তক নিলে তেমন একটা কাজে আসে না। কারণ যাকে দত্তক নেয়া হবে সেই সন্তান তার পিতার নামের সামনে নিজের জন্মদাতার নাম সবসময় লিখতে হবে এবং সন্তানের প্রাপ্য সম্পত্তির হিস্যা অনুযায়ী সম্পত্তির ভাগের সমবন্টনের অংশীদার হবে। যিনি সন্তান দত্তক নিবেন তিনি যদি ইচ্ছে করেন সম্পত্তি দিতে পারবেন, নচেৎ ঐ সন্তানের কিছু করার থাকবে না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়